ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

বছর শেষে বিজয়ের হাসি কৃষকের মুখে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
বছর শেষে বিজয়ের হাসি কৃষকের মুখে সোনালি ধান (ফাইল ছবি)

বগুড়া: গেলো বছর কৃষকের জন্য অনুকূলে ছিলো না। পর পর তিন দফা বন্যায় কৃষিক্ষেত্র ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক কৃষকই কাঁচা ধানের গোড়ায় কাস্তে চালাতে বাধ্য হন। প্রথম দফার বন্যার পানি কমার পরপরই কৃষক কোমর বেঁধে মাঠে নামেন। আশায় বুক বেঁধে জমিতে চারা রোপণ করেন তারা। কিন্তু এক মাসের মাথায় আবারও ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। সঙ্গে যুক্ত হয় বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধি।

প্রথম দফার বন্যায় যমুনার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তীরবর্তী পূর্বাংশের জমির ফসল তলিয়ে যায়। বাঙালি নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় যমুনার পশ্চিমের প্রায় ৯টি উপজেলার কমবেশি ফসলি জমি তলিয়ে যায়।

পরের দফায় ক্ষতির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। তৃতীয় দফায় শেষ আঘাত হানে টানা বর্ষণ। এসব কারণে কৃষিতে ২০১৭ সালে ধানের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।

তবে উৎপাদিত ধানের দাম ভালো পেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও শেষেমেষ বিজয়ের হাসি ধরা দেয় কৃষকের চোখেমুখে। জাতভেদে প্রতি মণ ধান ৯শ’ টাকা থেকে ১১শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সবমিলে চাষীদের জন্য ২০১৭ সাল ছিলো হাসি-কান্নার বছর।

বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গেলো জুন-জুলাইয়ে আঘাত হানে প্রথম দফা বন্যা। সেই রেশ কেটে উঠতে না উঠতেই আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বন্যা আঘাত হানে দু’দফা। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে যমুনার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় যমুনা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বন্যায়িন্ত্রণ বাঁধে ফাটলের কারণে পানি যমুনার পূর্বপ্রান্ত থেকে পশ্চিম প্রান্তে চুয়াতে থাকে।

সোনালি ধান (ফাইল ছবি)পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে বাঙালি নদীর পানি। সেপ্টেম্বরে টানা বর্ষণ ‍শুরু হয়। এতে জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে যমুনা বেষ্টিত সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলা হয়ে পানি হু হু করে অন্য ৯টি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে ঢুকতে থাকে। নতুন করে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে কয়েক হাজার হেক্টর জমির উঠতি ফসল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় রোপা-আউশ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২১ হাজার ৬শ’ হেক্টর। জুন-জুলাইয়ের বন্যায় ১ হাজার ৫শ’ ৮০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৪ কোটি ৫৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ওই বন্যা চার উপজেলায় আঘাত হানে। পরে বন্যার পানি নেমে গেলে কৃষক নতুন করে জমিতে চারা রোপণ করেন। এতে সব মিলিয়ে রোপা-আউশের অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ২২ হাজার ৭৫ হেক্টর।

এদিকে রোপা-আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭শ’ ২০ হেক্টর। আগস্ট-জুলাইয়ের তিন দফা বন্যা ও পরে টানা বর্ষণে ৪০ হাজার ৮৪ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যায়। এতে প্রায় ৪৯২ কোটি ৩৭ লাখ ৬০ হাজার ৯শ’ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষক প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে নতুন করে রোপা-আমনের চারা রোপণ করেন। প্রায় ৩০ হাজার কৃষককে এক বিঘা জমির বিপরীতে সার ও বীজ কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হয়। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমে আসে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মাত্র ১৩ হাজার ৬শ’ ৪০ হেক্টর জমিতে আবাদ কম হয় বলে তিনি দাবি করেন।

কৃষক শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করে গেলো মৌসুমগুলোতে ধান চাষ করতে হয়েছে। তবে বন্যা ও টানা বর্ষণে ফসলের ক্ষতি হলেও ভালো দাম পাওয়ায় সেটা আর মনে নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
এমবিএইচ/আরআর
 
 
 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।