বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৩তম অর্থনীতির দেশ। এই উন্নতির মূলে শিল্পখাত।
এসব কৃষিপণ্য এখন সঠিকভাবে ঘরে তোলায় প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা। উনারা মনে করেন, কৃষিখাতকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তা না হলে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা দেখা দেওয়ার পাশপাশি দিনমজুরদের মধ্যে হাহাকার দেখা দেবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে কৃষি খাতের অবদান বেশি নয়। তবে করোনা সংকট মোকাবেলায় কৃষিখাতের অবদান বেশি। দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষিই এখন প্রধান খাত। বর্তমানে বোরো হার্ভেস্টিং ভালো করে করতে হবে। হাওরে শ্রমিকদের ভালোমতো ম্যাকানিজম করতে হবে। চালের উৎপাদন বাড়াতে হবে। শাকসবজি ফলমূলের উৎপাদন বেশি করতে হবে। সকল নজর এখন কৃষিখাতে দিতে হবে।
বর্তমানে কৃষিতে নিয়োজিত জনশক্তির সংখ্যা ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ। স্বাধীনতার পর থেকে দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। তবুও কৃষিতে শ্রম-শক্তির সংখ্যা কমেনি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ৪৬ দশমিক ৬১ শতাংশ খানা (পরিবার) কৃষি নির্ভর । এ থেকে বোঝা যায় কৃষি দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে।
প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানোব ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বর্তমানে নানা ধরণের ফসল উৎপাদিত হয়। তার মধ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রধান ছয়টি ফসল হিসাব করে। এগুলো হলো— আউশ, আমন, বোরো, আলু, গম ও পাট। এছাড়া আরও ১২০টি অপ্রধান ফসলের হিসাব করা হয়েছে। সব কিছু ছাপিয়ে চাল ও আলু উৎপাদনে বিশাল সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বর্তমানে দেশে চাল উৎপাদনের পরিমাণ ৩৬৪ লাখ মেট্রিক টন এবং একই সময়ে আলু উৎপাদন করা হয়েছে ৯৬ দশমিক ৫৫ লাখ মেট্রিক টন।
বিবিএস সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে দেশে খাদ্য ঘাটতি থাকলে বর্তমানে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ১৯৬৯-৭০ অর্থবছরে চাল উৎপাদন ছিল মাত্র ১১৮ দশমিক ১৪ লাখ মেট্রিক টন, বর্তমানে (২০১৮-১৯) বেড়ে হয়েছে ৩৬৪ লাখ মেট্রিক টন। চার বছর আগে চাল উৎপাদন হয়েছিল ৩৪৭ মেট্রিক টন। দেশে ১১ দশমিক ০৫ লাখ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৭৫ লাখ মেট্রিক টন আউশ, ১৪০ দশমিক ৫৫ লাখ মেট্রিক টন আমন এবং ১৯৫ দশমিক ৬১ লাখ মেট্রিক টন বোরো উৎপাদন করা হয়েছে। সরকারের যুগোপোযোগী পরিকল্পনা, কৃষকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং বৈজ্ঞানিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলেই কৃষিতে এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে।
বিবিএস সূত্রে আরও জানা গেছে, দিন দিন আলু উৎপাদন বাড়ছে। খাদ্য হিসেবে আলুর চাহিদা ব্যাপক। একই সঙ্গে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আলু রফতানিও হচ্ছে। অধিক জনসংখ্যার জন্য খাবারের যে চাপ তা অনেকটা মেটাচ্ছে আলু। ১৯৬৯-৭০ সালে আলু উৎপাদন ছিল ৮ দশমিক ৯১ লাখ মেট্রিক টন। যা বর্তমানে (২০১৮-১৯) বেড়ে হয়েছে ৯৬ দশমিক ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। স্বাধীনতার পরে আলু উৎপাদন ১১ গুণের বেশি উৎপাদিত হয়েছে। বর্তমানে ৪ দশমিক ৭১ লাখ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে আলু উৎপাদনের জমি কমলেও উৎপাদন বাড়ছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪ লাখ ৭১ হেক্টর জমিতে ৯২ দশমিক ৫৪ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন করা হয়েছিল।
বেড়েছে গমের উৎপাদনঃ খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে দেশে বেড়েছে গমের চাহিদা। স্বাধীনতা পূর্ব বাংলাদেশে গমের উৎপাদন আগের তুলনায় বর্তমানে বেড়েছে। ১৯৭১ সালে ৩ দশমিক ১১ লাখ হেক্টর জমিতে ১ দশমিক ১ লাখ মেট্রিক টন গম হয়েছে। বর্তমানে ৩ দশমিক ৩০ লাখ হেক্টর জমিতে গমের উৎপাদন বেড়ে ১০ দশমিক ১৭ লাখ মেট্রিক টন।
আম উৎপাদনে বিশ্বে দশমঃ বাংলাদেশ আম উৎপাদনে বিশ্বে দশম। বিশ্বে আম উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায়। বাংলাদেশে দিনদিন আমের চাষ বাড়ছে। ১৯৭১ সালে আমের উৎপাদন ছিল ৪ দশমিক ১৫ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ১৯ লাখ মেট্রিক টন।
এছাড়া বেড়েছে ভুট্টার উৎপাদন। ২০০০ সালে ভুট্টার উৎপাদন ছিল মাত্র ০ দশমিক ১ লাখ মেট্রিক টন। অথচ বর্তমানে এর উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৩৫ দশমিক ৬৯ লাখ মেট্রিক টন।
সরিষা প্রধান ভোজ্য তেল ফসল। বর্তমানে এর উৎপাদন বেড়ে ৩ দশমিক ১২ লাখ মেট্রিক টন। একইভাবে মশুরডালের উৎপাদন বেড়ে ১ দশমিক ৬১ লাখ মেট্রিক টন হয়েছে। চলতি অর্থবছরে উৎপাদন আরও বাড়বে। এসব ফসল সঠিকভাবে ঘরে উঠলেই করোনা সংকট থেকে সাময়িক মুক্তি মিলবে বলে দাবি করেছেন অর্থনীতিবিদেরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২০
এমআইএস/ইউবি