জানা গেছে, জেলার ৭টি উপজেলায় প্রায় ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। আর এ চাষে জেলার প্রায় ৫০ হাজার ১০০ কৃষক জড়িত রয়েছেন।
এ ব্যাপারে জেলার সদর (পিরোজপুর-১) আসনের এমপি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনকে ইতোমধ্যে কৃষকদের ধান কাটার ব্যাপারে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। এছাড়া জেলা কৃষি অফিসকে এ ব্যাপারে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে ছাত্রলীগের উদ্যোগে কোন কোন স্থানে ধান কাটা হচ্ছে।
জেলার নাজিরপুর উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের বুইচাকাঠী গ্রামের কৃষক রহমান শেখ জানান, মাঠের ধান পেকে গেলেও শ্রমিক সংকটের কারণে কাটতে পারছি না। এভাবে বেশি দিন মাঠে থাকলে ধান ঝরে যাবে।
একই সমস্যার কথা জানান, জেলার নেছারাবাদ উপজেলার ভরতকাঠী গ্রামের সিহাব খান।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার নাজিরপুরে ১৩ হাজার ৫১৫ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৪ হাজার, নেছারাবাদে ৩ হাজার ৬৫০, মঠবাড়িয়ায় ১ হাজার ৫৫০, ইন্দুরকানীতে ১০৫, ভান্ডারিয়ায় ৫০ ও কাউকালীতে ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। এসব ধানের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ও ১০ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধানের চাষ করা হয়েছে। এসব জমি থেকে চলতি মৌসুমে প্রায় ৭২ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন উচ্চ ফলনশীল ও ৭১ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন হাইব্রিড ধানের আশা করা যাচ্ছে। আর চলতি বছরের ফলন ভালো থাকায় আমাদের এ লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এসব ধান জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হবে। প্রতিবছর পিরোজপুর জেলা ধান উৎপাদন করে জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।
কৃষি অফিস জানায়, উচ্চ ফলনশীল ধানের ফলন থেকে পরের বছর চাষ করা যায় কিন্তু হাইব্রিড ধানের ফলন থেকে পরের বছর আর ধান চাষ করা সম্ভব হয় না।
জানা গেছে, জেলার সবচেয়ে বেশি বোরো ধান চাষ করা হয় নাজিরপুর উপজেলায়।
নাজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দ্বীজ বিজয় হাজরা জানান, জেলার সিংহভাগ বোরো ধান নাজিপুরে চাষ হয়। এ উপজেলায় ১৩ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে এ ধান চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৯১৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ করা হয়েছে। আর এসব জমি থেকে ৮৬ হাজার ৭৩ মেট্রিক টন উচ্চ ফলনশীল ও ৮০ হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন হাইব্রিড ধানের ফলন আশা করা হচ্ছে। আমাদের (নাজিরপুর) উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ১৫ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় কৃষকদের সব রকম সহযোগিতা করায় জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফলন হবে বলে আশা করছি।
শ্রমিক সংকট ও ধানকাটা নিয়ে জানতে চাইলে জেলা কৃষি কর্মকর্তা (উপপরিচালক) আবু হেনা মো. জাফর বলেন, প্রতিবছর পার্শ্ববর্তী বাগেরহাট জেলা থেকে ধান কাটা শ্রমিক এসে ভাগে ও টাকায় (দৈনিক মজুরির শ্রমিক) ধান কাটেন। ফলে শ্রমিক সংকট দেখা দেবে না। তবে করোনার কারণে যে সমস্যা সে ব্যাপারে শ্রমিকরা আমাদের ছাড়পত্র নিয়ে ধান কাটতে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাছাড়া জেলার ভান্ডারিয়া থেকেও প্রচুর শ্রমিক জেলার নাজিরপুর ও নেছারাবাদ গিয়ে কাজ করবেন। তাছাড়া চলতি বছরে সরকারি আর্থিক সহায়তায় জেলার নাজিরপুর, নেছারাবাদ, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া ও সদর এ ৫ উপজেলায় একটি করে মোট ৫টি কম্বাইন হারভেস্টার (ধান কাটা ও একই সঙ্গে মাড়াই করে বস্তা বন্দি করা) মেশিন দেওয়া হয়েছে। ফলে ধান কাটার তেমন কোনো সমস্যা সৃস্টি হবে না বলে আমরা আশা করছি।
জেলার নাজিরপুর উপজেলার মালিখালী ইউনিয়নের জুগিয়া গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিন জানান, ওই মেশিন (কম্বাইন হারভেস্টার ) দিয়ে ধান কাটার মতো মাঠ আমাদের এ জেলায় নাই। এ জেলার অধিকাংশ জমিতে এ সময় পানি থাকে, ফলে পানিযুক্ত জমিতে এ মেশিন দিয়ে ধান কাটা ও তা মাড়াই করতে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২০
আরএ