ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

করোনাকালেও ১৪ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪০ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২০
করোনাকালেও ১৪ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থোকা ধরা রসালো লিচু। ছবি: বাংলানিউজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: বাগানে বাগানে সারিবদ্ধ লিচু গাছ। প্রতিটি গাছে ঝুলে আছে থোকা থোকা বিভিন্ন জাতের রসালো লিচু। লিচুর ভারে গাছের ঢালগুলো মাটিতে নুয়ে পড়েছে। প্রতিটি থোকাতেই ১০/ ১২টি করে লিচু ধরেছে। গাছগুলোতে চোখ পড়লে নজর কাড়বে যেকোনো মানুষের। 

এ মনোরম দৃশ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা আখাউড়া, কসবা, ও বিজয়নগরে।

এরই মধ্যে রসালো এই ফল কিনতে বাগানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় জমছে।

চলমান করোনা সংকটে ব্যাপক আকারে না হলেও সীমিতভাবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা এই লিচু ক্রয় করতে আসছেন। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে বাগান মালিকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে।

সরেজমিনে বাগানগুলো ঘুরে দেখা যায়, চলতি মৌসুমে পাটনায়, বম্বে, চায়না থ্রি এবং দেশীয় জাতের লিচু আবাদ করা হয়েছে। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি হওয়ায় লিচুগুলো রসালো তো বটেই সুমিষ্ট ও মাংসল হয়েছে। পরিপক্ব লিচুগুলো বাগান থেকে পাড়তে ব্যস্ত সময় পার করছেন লিচু চাষিরা। প্রতিটি গাছ থেকে দুই/তিন জন করে লিচু পাড়ছেন।

অন্যদিকে মাটিতে আরেকদল সারিবদ্ধভাবে বসে লিচু বাছাই করে ১০০টির থোকা বানাচ্ছেন। জাত ভেদে ১শ লিচু বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। ক্রেতারাও দরদাম করে লিচু কিনে তা বিভিন্ন পরিবহনে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।

লিচুর বাগান।  ছবি: বাংলানিউজকৃষিবিভাগ জানিয়েছে, জেলায় ২০০১ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ শুরু হয়। তারপর থেকে বছর বছর বাড়ছে আবাদের পরিমাণ। এবার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। ছোট বড় মিলিয়ে বাগান রয়েছে ৪২০টির মত। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হলো ১৩৬৮ মেট্রিকটন।  

কথা হয় বাগান মালিক ইকবাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি সাতকানি জায়গাজুড়ে লিচু বাগান করেছি। প্রায় ৮০টির উপরে লিচুগাছ রয়েছে। কৃষিবিভাগের পরামর্শ নিয়ে ২০০৫ সালে আমার জায়গায় লিচু গাছ রোপণ করেছি। তিন/চার বছরের মধ্যে ফলন ধরা শুরু হয়েছে। এ বছর লিচু ধরা থেকে শুরু করে পাকা পর্যন্ত আমার এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে আর লিচু বিক্রি করতে পেরেছি চার লাখ টাকার।

বাগান মালিক আশিক মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ফলন আসার পর থেকে প্রতিটি গাছে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। ফল ধরার সময় বিভিন্ন পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন ওষুধ গাছে ব্যবহার করি। এ বছর আমার ৪৫টি গাছে ষাট হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। ফলন ভাল হওয়াতে বিক্রি মাত্র শুরু হয়েছে। পাইকাররা আগে থেকেই গাছ চুক্তি লিচু কিনে ফেলে। পরে দূর-দূরান্ত থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা লিচু তাদের কাছ থেকে দরদাম করে কিনে নেয়।  

ব্যবসায়ী হামদু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমি ১০ বছর ধরে লিচুর ব্যবসা করে আসছি। এ বছর বাগানের মালিক থেকে সাত লাখ টাকার লিচু আগাম কিনেছি। প্রতিবছর ব্যবসা ভাল হলেও এ বছর চলমান করোনোর কারণে কতোটা সুবিধা করতে পারবো জানিনা। অন্যান্য জেলা থেকে পাইকাররা তেমন আসছেন না। তবে যেহেতু সরকার লকডাউন উঠিয়ে দিয়েছে। সামনে আরো কয়েকটা দিন পাওয়া যাবে। সেজন্য ভাল দামই পাব বলে আশা করছি।

লিচুর পরিচর্যা করছেন চাষি।  ছবি: বাংলানিউজব্যবসায়ী জিয়াউল হক বাংলানিউজকে বলেন, গাছে ফলন আসার সময়ই লিচুর বাগান কিনে ফেলেছি। লোকবল দিয়ে নিয়মিত দেখভাল করে আসছি। করোনার জন্য আমাদের এবার হিমশিম খেতে হচ্ছে। যদি আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই সরকার যাতে আমাদের ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে।  

জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল হক মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, করোনার মধ্যেও নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি। ফল ধরার সময় গাছে যাতে পোকামাকড় আক্রমণ না করতে পারে সময়ে সময়ে আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত বাগানগুলো পরিদর্শন করেছেন এবং চাষিদের পরামর্শ দিয়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন ভাল হয়েছে। জেলায় এ বছর প্রায় ১৪ কোটির টাকার মত লিচু বিক্রি হবে। চাষিরাও ভাল দাম পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।