ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কাঁচা মরিচের দামে কৃষকের মুখে হাসি

206 | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২০
কাঁচা মরিচের দামে কৃষকের মুখে হাসি

লালমনিরহাট: কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ায় হাসি ফুটেছে লালমনিরহাটের মরিচ চাষিদের মুখে। দুই সপ্তাহের মধ্যে দাম বেড়েছে প্রায় তিনগুন। মুনাফা বেশি পাচ্ছেন চাষিরা।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় মরিচের চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু গেল বন্যা আর ভারী বৃষ্টিতে দেশের নিম্নাঞ্চলের মরিচ ক্ষেত পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে।

ফলে বাজারে মরিচের যোগান অনেকটাই কমে এসেছে। তুলনামূলক উঁচু অঞ্চলের মরিচ ক্ষেতে এখনো মরিচ সংগ্রহ করছেন চাষিরা।

জেলার আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি, ভেলাবাড়ি ও সদর উপজেলার বড়বাড়ি, মোগলহাট ও পাটগ্রাম উপজেলায় কাঁচা মরিচের চাষাবাদ কিছুটা বেশি। তবে সব থেকে বেশি চাষাবাদ হয় বড় কমলাবাড়ি গ্রামে। এ গ্রামটির মাঠের পর মাঠ কাঁচা মরিচের ক্ষেত।

চাষিরা জানান, সারাবছর বিভিন্ন জাতের কাঁচা মরিচ চাষ করেন কৃষকরা। তবে বর্ষাকালে বাজারজাত করতে এসব অঞ্চলের চাষিরা উঁচু জমিতে চৈত্র মাসে জমি তৈরি করে মরিচের চারা রোপণ করেন। এরপর নিড়ানি, সেচ, সার দিয়ে পরিচর্যা করলে তিন মাসের মধ্যে ফল আসে। আবহাওয়া ভাল থাকলে এসব ক্ষেতের মরিচ ভাদ্র মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়।

বর্ষাকালে নিম্নাঞ্চলের মরিচ ক্ষেত বন্যায় ডুবে নষ্ট হওয়ায় এ সময় মরিচের বাজার দর বেড়ে যায়। তাই এই মরিচ চাষে বেশ মুনাফা পাচ্ছেন চাষিরা। যাদের এক সময় খাবার নিয়ে চিন্তা ছিল তারা এখন বাড়ি গাড়ির মালিক বনে গেছেন শুধুমাত্র চাষাবাদ ও সবজির ব্যবসা করে।  

এ অঞ্চলের চাষিদের কাছ থেকে ক্ষেত থেকেই মরিচ কিনে ঢাকা চট্টগ্রাম কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় পাইকারি বাজারে বিক্রি করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। দিনভর ক্ষেত থেকে মরিচ কিনে রাতে ট্রাকে পৌঁছে দেন পাইকারি বাজারে। সেখানে তা বিক্রি করে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যে পণ্যের টাকা চলে আসে। এভাবে বড় সবজির বাজার তৈরি হয়েছে লালমনিরহাটে।

কাঁচা মরিচের ক্ষেত।  ছবি: বাংলানিউজবড় কমলাবাড়ি গ্রামের মরিচ চাষি আব্দুল্লা বাংলানিউজকে জানান, এ বছর মাত্র ৬০ শতাংশ জমিতে ২৫ হাজার টাকা খরচে মরিচ চাষ করে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। প্রথম দিকে ১০ দিন পরপর ৮-৯ মণ মরিচ তুললেও এখন পাচ্ছেন ৩-৪ মণ। প্রথমে প্রতিমণ ৫-৬ শত টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমান বাজারে প্রতিমণ মরিচ সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরও এক-দেড় মাস তুলতে পারবেন। ওই জমি থেকে আরও লক্ষাধিক টাকার মরিচ বিক্রির আশা আব্দুল্লার।  

একই এলাকার পশ্চিমপাড়ার চাষি আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে পানি জমে না- এমন জমিতে মরিচের চারা রোপণ করতে হয়। এরপর সার-কীটনাশক দিয়ে পরিচর্যা করলে লাভবান হওয়া যায় মরিচে। ১০-১২ দিন পর পর জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত, এমনকি বৃষ্টি কম হলে ভাদ্র মাসেও মরিচ সংগ্রহ করা যায়। এ বছর চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রিতে ঝামেলা নেই, মুনাফাও অনেক বেশি। এমন দাম থাকলে তার এক বিঘা জমি থেকে দুই লক্ষাধিক টাকার মরিচ বিক্রির আশা করছেন আব্দুর রহিম।

স্থানীয় ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, নিম্নাঞ্চলের মরিচ ক্ষেত বন্যায় ডুবে নষ্ট হওয়ায় এই উঁচু অঞ্চলের মরিচের চাহিদা বেড়েছে। গেল ১০ দিন আগে ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা মণে মরিচ বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে মাঠেই সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায় ক্রয় করে সারা দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে পাঠানো হয়। সারাদিন ক্ষেত থেকে মরিচ কিনে রাতে ট্রাকে বড় বড় পাইকারি বাজারে যাচ্ছে। পরদিন ভোরেই টাটকা সবজি চলে যাচ্ছে শহরের খুচরা ক্রেতার হাতে।  

আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলীনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছর এ উপজেলায় ১৪২ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারদরও ভালো থাকায় বেশ মুনাফা পাচ্ছেন চাষিরা। উঁচু অঞ্চলের মরিচ ক্ষেত আরও এক মাস বা তারো অধিক সময় ফলন দিবে। সবমিলে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪১ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।