বগুড়া: বগুড়াকে উত্তরাঞ্চলের শস্য ভাণ্ডার খ্যাত জেলা বলা হয়। রকমারি ফসল ফলানোর দিকে সারাদেশে এ জেলার কৃষকদের একটা আলাদা পরিচিতও রয়েছে।
এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকরা অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলো। রোপা-আমন ও রোপা-আউশ মৌসুমের ধানক্ষেতে প্রথম দফা বন্যা হয় জুন মাসে। সেই ক্ষেত শুকাতে না শুকাতেই দ্বিতীয় বারের মতো আবারও ফুসে উঠে যমুনা ও বাঙ্গালী নদী। তলিয়ে যায় বিঘাকে বিঘা ধানি জমি। তবু প্রকৃতির কাছে হার মেনে নেয়নি এ জেলার কৃষকরা। কয়েক দফা বাড়ার পর বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরোদমে জমিতে নেমে পড়েন তারা। জমিতে নতুন করে ফসল ফলান।
কঠোর পরিশ্রম আর পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে যান কৃষকরা। চোখের সামনেই তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে জমির ধান। এখন সোনারঙা সেই ধান ঘরে তোলার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তারা। সবমিলে যেন বাঁধার পাহাড় ডিঙিয়ে ধানেই কৃষকের চোখে-মুখে ফুটে উঠছে হাসি।
শনিবার (১৪ নভেম্বর) বগুড়া জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা ঘুরে কৃষক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে এমন তথ্য ওঠে আসে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কেবলই সোনারঙা ধানের সমারোহ দৃশ্যমান। ধান গাছের ডগায় থোকায় থোকায় পুষ্ট ধান ঝুলছে। ধানের শীষে সোনারঙা ধারণ করেছে। অনেক ধান পুষ্ট হলেও এখনো কাঁচা রয়েছে। আর যেসব ক্ষেতের ধানের শীষ আসা শুরু হয়েছে তা পরিচর্যায় কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ আবার ক্ষেতে পোকামাড় দমনে কীটনাশক স্প্রে করছেন। ধান নিয়ে গ্রামীণ জনপদগুলোয় কৃষকদের এক ধরনের কর্মযজ্ঞতা চলছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলার মিন্টু শেখ, মিজানুর রহমান, সামছাদ আলীসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় তাদের ওপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে। এরপর দমে যাননি তারা। হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি। বন্যার পানি নেমে যাওয়া মাত্র যা ছিল তাই নিয়ে জমিতে নেমেছেন। সে অনুযায়ী ফল পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
তারা জানান, ইতোমধ্যেই বাজারে রোপা-আমনে মৌসুমের ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। এসব কাঁচা ধানই বাজারে প্রতিমণ ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ধানের এমন দাম তাদের মতো কৃষকদের ব্যাপক আশাবাদী করে তুলেছে বলে মন্তব্য এসব কৃষকদের।
নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে জানান, এবার বোরো মৌসুমে তিনি প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। দু’দিন আগে থেকে ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেন তিনি। তার মোট আবাদের ৫ বিঘা জমির ধান কাটা মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি জানান, গাইবান্ধা জেলার একদল শ্রমিক প্রতিবছর তার জমির ফসল কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করে থাকেন। তাদের ১০ সদস্যের দলটি ইতোমধ্য কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পুরো জমির ধান কাটা সম্পন্ন করে এ এলাকার অন্যদের জমির কাজে হাত দেবেন তারা। প্রতি বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াইয়ে খরচ হচ্ছে ২২শ থেকে ২৫শ টাকা পর্যন্ত। ফসলি মাঠের দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে চুক্তি হয়ে থাকে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, চলতি রোপা-আমন মৌসুমে ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছিলো। কয়েক দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২শ ৮৮ হেক্টর জমির ধান। ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা জমিতে চাষ করা ধানের মধ্যে রয়েছে ব্রি ধান-১১, ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধান-৪৯, ব্রি ধান-৫৮, ব্রি ধান-৭১, ব্রি ধান-৭৫, ব্রি ধান-৮৭, মিনিকেট, স্বর্ণা কাটারিভোগ, রঞ্জিত, বিনা-৭ জাতের ধান অন্যতম।
তিনি জানান, চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬১ হাজার ৪৬০ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। জেলায় এই পর্যন্ত মোট চাষাবাদের ১৫ শকতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। ফলন হয়েছে ১৭-১৮ মণ হারে।
এ জেলায় কৃষকের কষ্টার্জিত ফসল সময়ের ব্যবধানে তরতর করে বেড়ে উঠেছে। যত্ন ও পরিচর্যায় কোনো খামতি রাখেননি কৃষকরা। রোগ বালাইয়ের আক্রমণ অনেক কম ছিলো। এখন ব্যাপক হারে ধানকাটা-মাড়াইয়ের কাজ চলছে। ক্ষতি কাটিয়ে উঠে সবমিলে চলতি মৌসুমে ধানে বাম্পার ফলন হওয়ায় খুশি কৃষক। কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাবে বলে আশা করছেন কৃষি এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২০
এএটি