ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

মাল্টা চাষে বেকারত্ব জয় শরীফের

মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২০
মাল্টা চাষে বেকারত্ব জয় শরীফের মাল্টা গাছ। ছবি: বাংলানিউজ

গাইবান্ধা: দুই যুগেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে গ্রাজুয়েশন করেছেন শরীফুজ্জামান শরীফ। বয়স পেরিয়ে গেলেও তার জীবনে মেলেনি কাঙ্ক্ষিত সোনার হরিণ একটি সরকারি চাকরি।

 

বেকারত্ব ঘোচাতে নানা পদক্ষেপ নিলেও আসেনি সফলতা। অবশেষে মাল্টা চাষে বেকারত্বকে জয় করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে পেয়েছেন সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ও সাহস। তার সাফল্য দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন মাল্টা চাষে।  

শরীফুজ্জামান শরীফের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌর এলাকার সুইগ্রামে। সেখানে এক একর জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন মাল্টা বাগান।

সম্প্রতি শরীফের মাল্টা বাগান ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি গাছে পাতার ফাঁকে-ফাঁকে ঝুলছে নজরকাড়া রসালো মাল্টা। প্রতিদিন দূরের ও কাছের অনেকে আসেন শরীফের মাল্টা বাগানে। এদের মধ্যে কেউ দর্শনার্থী, কেউ মাল্টা ব্যবসায়ী আবার কেউ মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে আসেন পরামর্শ নিতে।  

কথা হয় ওই গ্রামের স্কুল শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের ছেলে শরীফুজ্জামান শরীফের সঙ্গে।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাড়ির পাশে মাল্টা চাষের জন্যে উপযোগী উঁচু এক একর জমিতে বারী-জাতের ২৫০টি মাল্টার চারা রোপণ করি তিন বছর আগে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে ও সঠিক পরিচর্যায় স্বল্প সময়ের ব্যবধানে গাছ বড় হয়ে মাল্টা ধরতে শুরু করে। সবুজ রঙের এ মাল্টা তুলনামূলক অন্য জাতের মাল্টার চেয়ে রসালো ও স্বাদে বেশ মিষ্টি। ফলে বাজারে এ মাল্টার চাহিদাও বেশি।

পলাশবাড়ীতে বাণিজ্যিকভাবে বড় পরিসরে আমিই প্রথম মাল্টা চাষ শুরু করি। পর্যাপ্ত ফলন ও আশানুরূপ বাজার দর পাওয়ায় একদিকে যেমন বেকারত্ব থেকে মুক্তি মিলেছে অন্যদিকে সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। পাশাপাশি আরো এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মাল্টা চাষের পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছি।  

তার এ সফলতা দেখে এলাকার অনেক যুবক মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

মাল্টার ফলনের বিষয়ে তিনি বলেন, চারা রোপণের পর ফলনের দিক থেকে এটা আমার দ্বিতীয় বছর। এ বছর প্রতিটি গাছে ১৫ থেকে ২০ কেজি মাল্টা ফলেছে। সে হিসেবে এ বছর প্রায় ১শ মণ মাল্টা পেয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী পরের বছর দ্বিগুণ মাল্টা ফলবে বলে জানান তিনি।

এলাকায় মাল্টার চাহিদা সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথম দিকে মাল্টা বিক্রিতে কিছুটা হতাশা থাকলেও বর্তমানে এর চাহিদা দ্বিগুণ। গাইবান্ধা জেলাসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলো থেকে প্রতিদিন মাল্টা পাইকারিভাবে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ফল ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বাগান দেখতে আসা উৎসুক মানুষও নিয়মিত মাল্টা কিনছেন। তারা দোকানের বদলে বাগান-গাছ থেকে মাল্টা পেয়ে বেশি খুশি।

মাল্টা বাজারজাতকরণের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রতি বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মাল্টা আহরণ ও বাজারজাত করা যায়। এ মৌসুমে পাইকারি প্রতিমণ মাল্টা ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে দেড়শ টাকায়।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে সফল এ উদ্যোক্তা বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. রশিদুল ইসলামের প্রতি।  

তিনি বলেন, শুরু থেকে মাল্টা গাছের পরিচর্যাসহ রোগ প্রতিরোধে নানা পরামর্শের পাশাপাশি ড. রশিদুল ইসলাম টিমসহ সরেজমিন বাগান পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া ফোন করে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন।

কথা হয় মাল্টা বাগান ঘুরতে আসা, উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের সরবঙ্গ ভাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ শরিফুল ইসলাম সবুজের সঙ্গে।  

তিনি বলেন, বন্ধু স্থানীয় বড় শিমুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোখলেছার রহমান মিলন ও মেয়েদের নিয়ে মাল্টা বাগান দেখতে এসেছি। শিশুরা বাগান দেখে ও গাছ থেকে মাল্টা কিনে খেতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। এছাড়া শিশুদের নিয়ে মাল্টা বাগান ঘুরে-ছবি তুলে সময়টা আমাদেরও বেশ কাটছে।

পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, মাল্টা চারা রোপণের এক বছর পর থেকেই ফল পাওয়া শুরু হয়। এই এলাকার মাটি ও আবহাওয়া মাল্টা চাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। শুরু থেকেই মাল্টা চাষি শরীফকে পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে পলাশবাড়ী কৃষিবিভাগ। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে উপজেলায় আরো অনেকে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ শুরু করেছেন। তাদেরও প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।