ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কৃষকের ঘরজুড়ে এখন ধানের স্তূপ

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২০
কৃষকের ঘরজুড়ে এখন ধানের স্তূপ ধানের স্তূপ, ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: কৃষকের স্বপ্নই ফসল। অনেক আশা, অনেক স্বপ্ন নিয়ে একজন কৃষক মাটিকে কৃষি উপযোগী করে তুলেন।

তারপর রোপণ করেন ধান। এখানেই শেষ নয়। রয়েছে প্রতিদিন নিয়ম-মাফিক পরিচর্যা। স্বপ্নের সেই ধানগাছগুলো পরিচর্যার স্নেহে একসময় প্রাপ্তবয়স্ক হয়। ধরতে শুরু করে সযত্নে লালিত ফল। এই ফলই হলো পরিশ্রমের ফলস। কৃষকের স্বপ্নের ফল।  

সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার গ্রামীণ জনপদে সরেজমিন গিয়ে সফল চাষিদের খুঁজে পাওয়া গেলো। দেখা গেছে কৃষকের স্বপ্নের সেই সার্থকতার সফলটিকে। স্বপ্নের সেই রোপা-আমন ধানের ব্যাপক ফলনে কৃষকদের ঘর ভরা এখন ধান আর ধান।  

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এ জেলার ৭ উপজেলায় ২০১৯ সালে উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার ৪২৮ মেট্রিক টন ধান। আর চলতি বছর উৎপাদন হতে চলেছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৯২ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ৮ হাজার ৮৬৪ মেট্রিক টন বেশি।  

কৃষি তথ্যের এই বাড়তি ধানের প্রমাণ আজ প্রান্তরজুড়ে। মাঠে মাঠে সোনালি ধান। কৃষকের বাড়ির উঠোন, কৃষকের বসত-ভিটার কোণে কোণে ছড়ানো রয়েছে সেই বাড়তি ধান। কৃষকের প্রতি ঘরজুড়ে এখন ধানের স্তূপ। ধানের অপূর্ব মৃদু গন্ধ সৌরভ ছড়িয়ে রয়েছে কৃষকের আঙ্গিনায়।  

দীর্ঘদিন ধরে অন্যের জমিতে বর্গাচাষ করে যাচ্ছেন উপজেলার ইছবপুর গ্রামের কৃষক শাহজাহান মিয়া। অন্যের ১০ কিয়ার (বিঘা) জমি লিজ নিয়েছেন। শর্ত মোতাবেক এই জমিতে উৎপন্ন করা ফসলের ৫০ শতাংশ পাবেন জমির মালিক। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ পাবেন শাহজাহান।  

ওই বর্গাচাষি বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর ১০ কিয়ার জমিতে ব্রি-২৩ এবং গুটিস্বর্ণা ধানচাষ করে ১০০ মণ ধান পেয়েছি। আমার টিকেছে ৫০ মণ। এবার পেয়েছি ১৬০ মণ ধান। এবার সারের দাম অন্যবারের তুলনায় অনেক কম ছিল। সাধ্যের মধ্যে থাকায় কৃষকরা প্রয়োজনীয় সার কিনতে পেরেছে।  

গত বছর এক বস্তা টিএসপি সার কিনেছিলাম সাড়ে ১২শ/১৩শ টাকা দিয়ে। এবার সেই একই সার কিনলাম ৮শ টাকা দিয়ে বলেও জানান শাহজাহান।

এই গ্রামের সফল কৃষক জুবায়ের মিয়া। তার নিজের রয়েছে ৩৫ কেয়ার (বিঘা) জমি। সব জমি তিনি নিজেই চাষাবাদ করেন। বর্গাচাষিদের মতো কষ্টভরা জীবন নয় তার। কারণ তিনি নিজেই পুরো জমির মালিক।  

বর্তমান সময়ের রোপা-আমন ধান সম্পর্কে জুবায়ের বলেন, এবার কৃষকের দিন ফিরেছে। আগে ধান ৫০০-৬০০ টাকা মণ ছিল। এখন সরকার নির্ধারিত দাম প্রায় হাজার টাকা হওয়াতে আমাদের মতো কৃষকরা কৃষিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। গতবারের চেয়ে মণ প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি হওয়ায় কৃষকদের গড় উৎপাদন অনেক বেড়েছে।  

তিনি আরো বলেন, আমার পুরো জমিতে আমি ব্রি-২৩, ব্রি-১১, চিনিগুড়া, বিরুন (বিন্নি), গুটিস্বর্ণা, চিকনস্বর্ণা, রঞ্জিত এই ধানগুলো চাষ করেছি। গুটিস্বর্ণা, চিকনস্বর্ণা এবং রঞ্জিত হলো ভারতীয় জাতের ভ্যারাইটি। তবে ব্রি-১১ ধান অপেক্ষাকৃত উচ্চ ফলনশীল হওয়াতে খুবই ভালো ফসল হয়েছে। আবার পৌষ মাসে বোরো ধান লাগাবো।  

গত বছর রোপা-আমন মৌসুমে পুরো জমিতে আমি পেয়েছিলাম প্রায় ৩৪০ মণ ধান। আর এবার পেয়েছি সাড়ে ৪০০ মণ ধান বলে জানান কৃষক জুবায়ের মিয়া।   

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২০
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।