রাঙামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম জেলার নাম ‘রাঙামাটি’। আর এ জেলার অন্যতম হাট-বাজারের নাম ‘বনরূপা’।
হাটে পাহাড়ি নারীরা তাদের জুমে উৎপাদিত সবজি নিয়ে ভোর থেকে হাজির হন বনরূপায়। জুমের সবজির মধ্যে রয়েছে ‘তারা’, ঠান্ডা আলু, পাহাড়ি কচু, ক্ষিরা, জংলি আলু, তিত বেগুন, শামুক, পাহাড়ি হলুদ, আদা, মাল্টা, কাঁচা তেতুল, আমলকি। যা সমতলের কোনো বাজারে পাওয়া যায় না।
পাহাড়ি সবজি তারা :
‘তারা’ নামে পরিচিত সবজিটি পাহাড়ি জনপদের মানুষের অন্যতম প্রিয় খাবার। সবজিটি ভালো করে ধুয়ে কেটে সিদ্ধ করে শুটকি মাছ দিয়ে রান্না করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন তরকারির সঙ্গে পাঁচ মিশালি সবজি হিসেবেও রান্না করে খাওয়া হয়। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে অন্যান্য ফসলের সঙ্গে এ সবজিটিও চাষ করেন জুমিয়ারা। সবজিটি চাষ করার এক বছর পর খাওয়ার উপযোগী হয়। বনরূপা বাজারে কেজি প্রতি ৩০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।
জুমের কচু:
জুমের পাহাড়ি সবজি ভুট্টা, বেগুন, আলুর সঙ্গে কচুও চাষ করা হয়। সমতলের কচুর চেয়ে এ কচুর কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। সমতলে জমিতে কচুর চাষ করা হলেও এ অঞ্চলে পাহাড়ে কচু চাষ করা হয়। আকারে ছোট এবং কালো রঙের হয়ে থাকে পাহাড়ি কচু। এ সবজিটি পাহাড়িরা সিদ্ধ করে শুটকির সঙ্গে বা এমনিতে রান্না করে করে খেয়ে থাকেন। বাজারে এ সবজিটি বিক্রি হয় ৪০ টাকা কেজি দরে।
তিত বেগুন:
পাহাড়ে জন্মে ছোট ছোট গোল গোল এক জাতীয় ফল, যা পাহাড়িদের কাছে তিত বেগুন, গোট বেগুন বা গুটগুটি বেগুন নামেই পরিচিত। তিত বেগুন শুটকি, আলুর সঙ্গে ভর্তা করে বা আলুর সঙ্গে ভাজি করে খাওয়া যায়। মাছের সঙ্গে রান্না করেও খাওয়া হয়। এ বেগুন চাষ করতে হয় না। এমনিতেই হয়। তবে শখ করে এর চারা সংগ্রহ করে লাগানো হয়। শুষ্ক বেলেমাটিতে এর ফলন ভালো হয়। বেগুনের সাইজ মটর দানা বা এর চেয়ে সামান্য বড় হয়ে থাকে।
ঠান্ডা আলু:
পাহাড়ে ঠান্ডা আলু বেশ পরিচিতি। চাকমারা বলেন জুড়ো আলু, মারমারা বলেন রোঞেউ। ঠান্ডা আলু কাঁচা খাওয়া যায় এবং খুব সুস্বাদু। আবার পাহাড়িরা শুটকি দিয়ে রান্না করেও খান। ঠান্ডা আলুর চাষ হয় ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসে। পাহাড়িরা জুমে এ আলু চাষ করেন।
জুমে ধান চাষের পাশাপাশি ঠান্ডা আলুর বীজ বপন করা হয়। ধান উঠে গেলে আলুর গাছগুলো বাড়তে থাকে। এসময় আলুগুলো সংগ্রহ করা হয়। বনরূপা বাজারে এ আলু কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।
ধানি মরিচ:
পাহাড়ে উৎপাদিত এ মরিচে বেশ ঝাল। যা সমতলের মরিচের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন স্বাদের। মরিচটি তরকারি এবং সালাদে ব্যবহার করা হয়। পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালি সবাই এ মরিচ খান। অন্য মরিচের চেয়ে পাহাড়ি এ মরিচটির দাম দ্বিগুণ। বনরূপা বাজারে কেজি প্রতি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ধানি মরিচ।
পাহাড়ি আলু:
পাহাড়িদের কাছে আলুটি পাহাড়ি আলু বা জংলি আলু হিসেবে বেশি পরিচিতি। তবে এর প্রকৃত নাম শিমুল আলু। এ আলুটি কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া যায়। এ আলু গাছটির উপরিভাগ দেখতে অনেকটা শিমুল গাছের মতো হওয়ায় একে শিমুল আলু বলা হয়। তবে সবজিটির নিচের অংশ খাওয়া হয়। গাছটি থেকে তিন বছর ফলন পাওয়া যায়। এটি পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি খাবার। পাহাড়িরা এ আলু সিদ্ধ করে শুটকি দিয়ে রান্না করে খেয়ে থাকেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২০
এসআই