মৌলভীবাজার: ‘নদীমাতৃক দেশ’ কথাটির সঙ্গে ‘কৃষিপ্রধান বাংলাদেশ’ এ শব্দটির তাৎপর্য সামঞ্জস্যপূর্ণ। খাদ্যশস্য উৎপাদনের সীমাহীন গুরুত্ব ও ব্যাপকতার চিন্তা করেই এই বিভাগের যথার্য নামকরণ হয়েছে কৃষির সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
তবে গভীর উদ্বেগের কথা হচ্ছে, কৃষি জমি আর বাড়ছে না। বরং অবশিষ্ট কৃষি জমিটুকুতেও ভাগ বসাচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা, আবাসন। ফলে হুমকির মুখে কৃষক আর কৃষিজমি। কৃষকরা জমিতে অধিক ধানের প্রয়োজনীয়তাকে বার বার বেছে নিচ্ছেন।
ফলে হারিয়ে যাচ্ছে ‘বিন্নি ধান’সহ বাংলার ঐতিহ্যবাহী ধানগুলো। বিন্নি ধান বা বিরুইন ধান সেসব ধানেরই অন্যতম একটি ধান যেখানে আমাদের পূর্বপুরুষের গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের স্মৃতি বিজড়িত।
সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা গেলো শ্রীমঙ্গল উপজেলার ইছবপুর গ্রামের কৃষক জোবায়ের নিজের জমিতে বিন্নি ধান কাটতে ব্যস্ত।
ওই চাষি বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছর আমি মাত্র ১৫ শতাংশ জায়গায় নিজে খাওয়ার জন্য বিন্নি ধান চাষ করেছি। প্রায় ৫ মণ ধান হয়েছে। এই ধানটি খেতে আঁঠালো এবং খুবই সুস্বাদু। বাজারে নতুন এই বিন্নি ধানের চাল কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।
এই চালের রান্নাপদ্ধতি সম্পর্কে জোবায়ের বলেন, দুই রকম পদ্ধতি এই ধান রান্না করা যায়। একটি পদ্ধতি হলো যেভাবে আমরা ভাত রান্না করি সেরকম। আর অন্য পদ্ধতি হলো-গরম তাপে সেদ্ধ করা অর্থাৎ এটি করতে হলে চুলায় একটি পানিপূর্ণ হাঁড়ি বসাতে হবে। তার ওপর ভালোমানের একটি সুতি কাপড়ের আবরণ দিয়ে দিতে হবে। তারপর নিচে অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত হাঁড়িতে সেই চাল দিয়ে ২৫/৩০ মিনিট রাখলেই গরম তাপে সেদ্ধা হবে। এই পদ্ধতির বিন্নি চালের ভাত দারুণ সুস্বাদু হয়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি এ ধান সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, বিরুইন বা বিন্নি ধানের সঙ্গে আমাদের স্মৃতিময় শৈশব জড়িত। এগুলো বাংলার ঐতিহ্যপূর্ণ ধানগুলোর একটি। যা বাংলার লোকশিল্প ও সংস্কৃতিকে বারবার মনে করিয়ে দেয়। আর এই শ্রদ্ধাটুকুকে ঘিরেই অনেক কৃষক নিজ উদ্যোগে এই ধানের চাষাবাদকে ধরে রেখেছেন। তাই এই ধান বিলুপ্ত হওয়ার বা হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। অন্য ধানের সঙ্গে সংগ্রাম করেও টিকে থাকবে বিন্নি ধান।
তথ্য-পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে এই কর্মকর্তা বলেন, বিন্নি ধান আমনের একটি ভ্যারাইটি। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ১৫ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা আমন ধান চাষ করেছেন। এর মাঝে মাত্র ২৫ হেক্টর জমিতে বিন্নি ধান চাষ করা হয়ে থাকে। আমানের অন্য জাতের ধান কিয়ার (বিঘা) প্রতি যেখানে ১৭ বা ১৮ মণ হয় যেখানে বিন্নি ধান মাত্র ৮ বা ১০ মণ হয়ে থাকে।
তাই বর্গাচাষিসহ (যারা অন্যদের জমিতে চুক্তিভিক্তিক চাষাবাদ করেন) ব্যাপক সংখ্যক চাষিরা এই ধান চাষাবাদে নিরুৎসাহী হয়ে থাকেন। তবে অনেক চাষি এখনো ঐতিহ্য আর সুস্বাদু চাষের কথা চিন্তা করে এটিকে এখনো ধরে রেখেছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এ ধানের ভ্যারাইটি সম্পর্কে নিলুফার বলেন, ৭/৮ রকমের বিন্নি ধান রয়েছে। এগুলো হলো হালকা আঠালো, অতিরিক্ত আঠালো, সুগন্ধিযুক্ত, ওপরের হালকা লাল রঙসহ প্রভৃতি ভ্যারাইটির বিন্নি ধান। আমাদের ময়মনসিংহের শেরপুরে পুরা বিন্নি নামে এক প্রকারের বিন্নি ধান পাওয়া যেতো।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২০
বিবিবি/এএটি