ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

আপেল কুলে স্বপ্ন বুনছেন বিনয় চাকমা (ভিডিও)

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২০
আপেল কুলে স্বপ্ন বুনছেন বিনয় চাকমা (ভিডিও) গাছজুড়ে কুল। ছবি: বাংলানিউজ

রাঙামাটি: লেখাপড়ায় মন বসে না। তাই স্নাতক পরীক্ষাও দেওয়া হয়নি তার।

বাবা-মায়ের বকাবকি। চাকরি করো, পরিবারের আয়ের চাকা ঘোরাও। কিন্তু চাকরি তার ভাল লাগে না। উদাস মনে সারাদিন ভাবেন, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। এজন্য হতে হবে উদ্যোক্তা। কিন্তু কিভাবে? এ নিয়ে ভেবেই পার করেন সারাদিন।  

একদিন হাতে থাকা শখের অ্যান্ড্রয়েড ফোনটি নাড়াচাড়া করতে করতে ইউটিউব চ্যানেলে উদ্যোক্তা হওয়ার কোনো উপায় পাওয়া যায় কিনা তা খুঁজতে থাকেন।

একপর্যায়ে ইউটিউবের সাহায্যে উদ্যোক্তা হওয়ার কাঙ্ক্ষিত পথ খুঁজে পান তিনি। তার স্বপ্ন পূরণের নাম-কাশ্মিরী নূরানী আপেল কুল। অল্প সময়ের মধ্যে এ ফলের চাষ করে অনেক চাষি স্বাবলম্বী হয়েছেন। এই ধরণের ভিডিও দেখে সিদ্ধান্ত নিলেন- তিনিও কাশ্মিরী নূরানী আপেল কুল চাষ করবেন এবং নিজের উদ্যোক্ত হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করবেন।

তাই তো বাবার পরিত্যক্ত ৪০ শতক জায়গায় কাশ্মিরী নূরানী আপেল কুল এবং সঙ্গে বল সুন্দরী কুলের চাষাবাদ শুরু করেন। এজন্য তিনি স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার সাহায্য নিয়েছেন।

এতক্ষণ যার কথা বলা হচ্ছিল তার নাম বিনয় চাকমা ওরফে ধর্ম চাকমা (৩৩)। বসবাস করেন রাঙামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের সাপছড়ি গ্রামে। বাবা আনন্দ কুমার চাকমা। পেশায় সরকারি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। বাবা-মা-ভাই-বোন মিলে চারজনের সংসার। তিনি বাড়ির বড় ছেলে। বোন স্কুলে পড়ে।

বিনয় চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমার লেখাপড়া করতে ভাল লাগতো না। তাই ডিগ্রি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। বাবার শত বকুনি স্বত্তেও চাকরি করতে মন চাইতো না। নিজে কিছু একটা করবো এমন ভাবনা থেকে। তিনি বলেন, আমাদের পরিত্যক্ত ৪০ শতক জায়গায় উন্নত জাতের ১৫০টি আপেল কুলের চারা রোপণ করি। এর মধ্যে- কাশ্মিরী নূরানী আপেল কুল এবং  বল সুন্দরী কুল (অস্ট্রেলিয়ান জাত) রয়েছে।

চলতি বছরের মে মাসে আপেল কুল রোপণ করা হয়েছে। নভেম্বর মাসের শেষ দিকে প্রতিটি গাছে ফলন চলে এসেছে। আসছে জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে গাছ থেকে ফলন তোলা হবে এবং বাজারে বিক্রি করা হবে।

তিনি আরও জানান, ৪০ শতক জায়গায় আপেল কুলের চাষ করতে আমার দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। জমিতে সাথী ফসল হিসেবে রেডলেডি জাতের ৫৫টি পেঁপে গাছ লাগানো হয়েছে। পেঁপে গাছগুলোতেও ফলন এসে গেছে।

বিনয় চাকমা বলেন, জমিতে আমি জৈব সার, কেঁচো সার, টিএসপি এবং এমোপি (লাল সার) ব্যবহার করেছি। এত অল্প সময়ের মধ্যে গাছে ফল আসবে চিন্তা করতে পারিনি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গাছ থেকে ফল বিক্রি করে প্রায় তিন লাখ টাকা আয় করতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, বাবা এখন আর বকাবকি করে না। বাবা নিজেও সময় করে আমার স্বপ্নের বাগানে ঘুরতে যান, পরামর্শ দেন এবং আমাকে সহযোগিতা করেন। বিনয় বলেন, যে মানুষটির কাছে আমি কৃতজ্ঞ, যিনি প্রতিটি সময় পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছেন তিনি হলেন, রাঙামাটি সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া।

রাঙামাটি সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, বিনয় ওরফে ধর্ম চাকমা তার আগ্রহের কথা আমাকে জানালে আমি তাকে সহযোগিতার জন্য আশ্বস্ত করি। এরপর থেকে তিনি বাগানে কুলের আবাদ করে যাচ্ছেন।  

তিনি আরও বলেন, কাশ্মিরী নূরানী আপেল কুল এবং  বল সুন্দরী কুল (অস্ট্রেলিয়ান জাত) এই দু’টি জাত আমি তাকে নাটোর থেকে সংগ্রহ করে দিয়েছি। এ জাতে ফলন আসতে এক বছর সময় লাগে। কিন্তু এত দ্রুত ফলন চলে আসবে তা কল্পনাও করতে পারিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।