বগুড়া: বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী মহাস্থান হাটের বড় একটি অংশ এখন দখল করে রয়েছে কাঁচা-পাকা মিষ্টি কুমড়া।
শনিবার (০৬ মার্চ) সকালে জেলার বৃহৎ মহাস্থান সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক সংলগ্ন এ হাটে জমজমাট কুমড়ার বিকিকিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুমড়া ক্ষেত থেকে তুলে সরাসরি বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে এসেছে কৃষক। ভোর থেকে তাদের এই বিক্রির আয়োজন চলে। ক্ষেত থেকে কুমড়া তোলার পর ভটভটি, ভ্যান, রিকশাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সকাল ৭টার মধ্যেই কৃষকরা এই বাজারে হাজির হয়। বাজারে পা রাখা মাত্র স্থানীয়সহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা পাইকাররা ঘিরে ধরে কৃষকদের। যে যার মতো তাদের উৎপাদিত সবজি নিয়ে বাজারের নির্ধারিত স্থানে গিয়ে অবস্থান নেন। পরে পাইকাররা দরদাম করে কুমড়া কিনতে শুরু করেন। এভাবেই দিনব্যাপী চলে কেনা-বেচা। বিকেল হতেই দূর-দূরান্তের পাইকারদের কেনা কুমড়া পন্যবাহীতে নিয়ে ছুটে চলেন নিজ এলাকার বাজারগুলোতে।
এ অঞ্চলের কৃষকরা একই জমিতে অন্য ফসলের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে এসব কুমড়া চাষ করেন। আবার অনেক কৃষক এগুলো এককভাবে চাষ করেন। এক্ষেত্রে অবশ্য ফলনও বেশি পাওয়া যায়। বগুড়ায় দিন দিন কুমড়ার চাষ বাড়ছে। এক্ষেত্রে চাষিরা বর্তমানে বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের কুমড়া চাষকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কেননা এসব জাতের গাছ থেকে ফলন বেশি পাওয়া যায়। কুমড়ার আকারও অনেক বড় হয়। আর বাজারে বড় আকারের কুমড়ার দামও বেশি পাওয়া যায়।
জব্বার হোসেন, লিয়াকত আলী, এজাজুল হকসহ একাধিক চাষি বাংলানিউজকে জানান, মিষ্টি কুমড়া চাষ অনেক লাভজনক। অল্প ব্যয়ে ফলন বেশি পাওয়া যায়। সে অনুযায়ী লাভও ভালো হয়। এই ফসল চাষের সুবিধাজনক দিক হলো এটি সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। এতে অন্য ফসলও হয়। আবার বাড়তি হিসেবে কুমড়াও হয়।
তারা বলেন, এ অঞ্চলের কৃষক আলুর জমিতে সাথী ফসল হিসেবে কুমড়া লাগিয়ে থাকেন। আলু বিক্রি এখন প্রায় শেষ। এসময় জমিতে কুমড়া রয়েছে। সেই কুমড়া বাজারে বিক্রি করছেন। তাদের মতো অনেক কৃষকই এ হাটে কুমড়া বিক্রি করতে আসেন। কারণ এ হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড় ও মাঝারি মানের ব্যাপারী আসেন। চাহিদা অনুযায়ী তারা বিপুল সংখ্যক কুমড়া কিনে থাকেন। এতে দামও তুলনামূলক ভালো পাওয়া যায়। এছাড়া ব্যাপারীর অভাবে ক্ষেতের ফসল নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় না বলেও মন্তব্য করেন তারা।
বর্তমানে পাইকারি দর হিসেবে মহাস্থান হাটে প্রতি পিস ৫-৭ কেজি ওজনের একেকটি মিষ্টি কুমড়া ৬০-৬৫ টাকা হিসেবে বিক্রি হয়। আবার মাঝারি আকারের কুমড়ার দাম একটু কম। পাইকারি হিসেবে ২-৪ কেজি ওজনের একেকটি মিষ্টি কুমড়া ১০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।
ব্যাপারী সুজন হালদার, মেজবাউল বাংলানিউজকে জানান, বছরের এ সময়টায় সপ্তাহের শনিবার ও বুধবার হাট ছাড়াও প্রতিদিন সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলাসহ আশেপাশের এলাকার কৃষকরা এ বাজারে তাদের জমির উৎপাদিত সবজি বিক্রি করতে আসেন। হাট থেকে বর্তমানে প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ১৫-২০ ট্রাকের মতো মিষ্টি কুমড়া ব্যাপারিরা কিনে নিয়ে যান। এছাড়া বগুড়াসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরেও এ হাটে এসে ব্যাপারীরা মিষ্টি কুমড়া কিনে থাকেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য এখানকার মাটি ও আবহাওয়া অত্যন্ত উপযোগী। এছাড়া স্বল্প খরচে চাষিরা সাথী ফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়া চাষ করতে পারেন। মিষ্টি কুমড়ার ফলনও বেশি হয়। অনেক চাষিই আবার এককভাবে এই ফসল চাষ করে থাকেন।
এ জেলায় সময়ের ব্যবধানে ও প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখে চাষিরা মিষ্টি কুমড়ার চাষ দিনদিন বাড়াচ্ছেন। এক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৯ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২১
কেএআর