রাঙামাটি: পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে এবার তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কাপ্তাই হ্রদের পানি যথা সময়ে শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা জলেভাসা জমিতে তরমুজের চাষ করতে পেরেছেন।
এদিকে তরমুজের বাম্পার ফলন হলেও দাম বেশ চড়া হওয়ায় বছরের মৌসুমী ফলটি কিনতে মধ্যবিত্তদের কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে দাম বাড়তি থাকলেও মৌসুমী ফল তাই নিজেদের সাধ্যর মধ্যে থেকেই আকার বুঝে প্রিয় ফলটি কিনে বাড়িতে নিচ্ছেন ক্রেতারা।
সরেজমিনে হাটবাজারগুলো ঘুরে দেখো গেছে, শহরের বনরূপা, কলেজগেট, রিজার্ভবাজার, তবলছড়ি বাজারগুলোতে ব্যবসায়ীরা তরমুজের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। বাজারজুড়ে শুধুই তরমুজে। হাঁক-ডাক দিয়ে ক্রেতাদের কাছে বিকিকিনি করছেন ব্যবসায়ীরা। মৌসুমী এ ফলটি কেজিতে নয়, বিক্রি করা হয় পিস হিসেবে। তাই তরমুজের আকার অনুযায়ী একেক তরমুজের একেক দাম।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বড় আকারের তরমুজগুলো তিনশো টাকা থেকে, সাড়ে তিনশো, মাঝারি আকারের আড়াইশো টাকা থেকে শুরু করে দুইশো আশি টাকা এবং ছোট আকারের তরমুজগুলো দুইশো টাকায় থেকে শুরু করে দুইশো ত্রিশ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
বনরূপা হাটবাজারের তরমুজ বিক্রেতা সাধন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমি তরমুজ ব্যবসায় এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। কৃষকদের অগ্রিম টাকা দিয়ে সদরের বালুখালী ইউনিয়ন থেকে তরমুজগুলো সংগ্রহ করেছি। লাভের পরিমাণ বেশ ভালো বলে যোগ করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে দামও বেশ। তাই কৃষক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।
কলেজগেট হাটবাজারে ব্যবসায়ী নুরু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমি একজন মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী। একেক মৌসুমে একেক ফল বিক্রি করি। এই মৌসুমে তরমুজের ব্যবসায় নেমেছি। দাম ভালো থাকায় আমরা ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখছি। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকার মতো তরমুজ বিক্রি করছি।
বনরূপা হাটবাজারে তরমুজ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরীজীবী মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, দামটা একটু বেশি। কিন্তু বছরের ফল তো তাই কিনতে হবে ছেলে-মেয়ের জন্য।
একই বাজারের ক্রেতা শিক্ষিকা শতরূপা চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, পরিবারের জন্য তরমুজ কিনতে এসেছি। দামটা একটু বেশি, তবু যেহেতু বছরের ফল তাই কিনে নিয়েই বাড়ি যাবো।
লংগদু উপজেলার তরমুজ চাষি সোনা মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, জলেভাসা দুই একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছি। ফলন ভালো হওয়ায় এরই মধ্যে লাখ টাকা ঘরে তুলেছি।
বাঘাইছড়ি উপজেলার চাষি সজিব চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমি গত বছর তরমুজ চাষ করে বেশি লাভ করতে পারিনি। এ বছর আবারো ঝুঁকি নিয়ে প্রায় তিন একর জমিতে তরমুজের চাষ করেছি। ফলন ভালো পেয়েছি, লাভও বেশ ভালো হয়েছে।
এদিকে রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে পুরো জেলায় ২৪০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ করা হয়েছে। হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে প্রায় চল্লিশ টন। পুরো হেক্টরে প্রায় নয় হাজার ছয়শ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, জেলার মধ্যে কাপ্তাই হ্রদবর্তী উপজেলা বরকল, লংগদু, নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, বিলাইছড়িতে তরমুজের আবাদ ভালো হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি অঞ্চলের উপ-পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তরমুজের উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে কৃষকদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন। তারা সারাক্ষণ কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ এবং সার দিয়ে সহায়তা করেছেন। পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে ছিলো বলে তরমুজের আবাদ ভালো হয়েছে। আর তাই কৃষক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা ভালো দামে বিক্রি করতে পেরে মহাখুশি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২১
আরএ