নীলফামারী: বোরো ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসেলের ক্ষেতে উড়ানো হয়েছে ঝাণ্ডা। দেখে অবাক হলেও সত্যিটা হলো ক্ষেতের ইঁদুর তাড়াতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন নীলফামারীর কৃষকরা।
নীলফামারীর সর্বত্র বেড়ে উঠছে বোরো ক্ষেত। কোথাও ধানের গাছে থোড় এসেছে, কোথাও শীষ বের হচ্ছে। ফলে কৃষি বিভাগ এবারে বাম্পার ফলনের আশা করছে। তবে বোরো ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দেওয়ায় কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সদর ও সৈয়দপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই ইঁদুর বোরোর গাছ কেটে সাবাড় করছে। ফলে কৃষকেরা এর উপদ্রব থেকে ফসলের ক্ষেত বাঁচাতে পলিথিনের ঝাণ্ডা উড়িয়েছেন।
সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের কৃষক আমিনুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, পলিথিনের এসব ঝাণ্ডার পতপত শব্দে ইঁদুর পালিয়ে যায়।
কৃষি বিভাগ জানায়, ইঁদুর আকারে ছোট হলেও বছরে প্রায় ১০-১২ টন সব ধরনের খাদ্যশষ্য নষ্ট করে। যার বাজার মূল্য ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। গম শতকরা ৪ থেকে ১২ ভাগ, ধান শতকরা ৫-৭ ভাগ, গোল আলু ৫-৭ ভাগ নষ্ট করে। এরা বছরে শুধুমাত্র ধান ও গমের প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন পর্যন্ত ক্ষতি করে থাকে। এরা যে শুধু ফসলের ক্ষতি করে তা কিন্ত নয়। বই-খাতা, কাপড়, আসবাবপত্র, বিছানাপত্র ইত্যাদি কেটে ফেলে। ইঁদুর প্রায় ৩০ ধরনের রোগ ছড়ায়।
তথ্য মতে, ইঁদুরের বংশ বৃদ্ধির হার অত্যন্ত বেশি। সুষ্ঠু পরিবেশে একজোড়া ইঁদুর থেকে বছরে প্রায় তিন হাজার ইঁদুর জন্মলাভ করতে পারে। জন্মদানের দুইদিনের মধ্যেই এরা পুনরায় গর্ভধারণে সক্ষম হয়। জন্মদানের তিন মাসের মধ্যে বাচ্চা দিতে সক্ষম হয়। ইঁদুরের জীবনকাল ২-৩ বছর। ইঁদুর ধান, গম, ভুট্টা, বাদাম, ফলমূল বিশেষ করে শাকসবজি, নারিকেল, পেয়ারা, সফেদা, লিচু, আম, লাউ, মিষ্টি আলু ইত্যাদি কৃষিজ ফসল খেয়ে ক্ষতি করে। ধান ও গমের শীষ আসার সময় ৪৫ ডিগ্রি কোণ করে কেটে গর্তের ভেতর নিয়ে বাসা তৈরি করে এবং খায়। ইঁদুর যতটা না খায় তার চেয়ে ৪-৫ গুণ বেশি নষ্ট করে।
নীলফামারী কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহসিন রেজা রূপম বাংলানিউজকে জানান, জেলার কিছু কিছু এলাকায় ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে বোরো ক্ষেতে। কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহারের পাশাপাশি পলিথিন ঝাণ্ডা উড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। এই ঝাণ্ডা উড়ানোর ফলে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২১
এনটি