নীলফামারী: দেশের উত্তরাঞ্চলে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার পাঁচ লাখ কৃষকের এখন প্রধান ফসল পেঁয়াজ, মরিচ, কুমড়া, ভুট্টা ও বোরো ধানের চাষ। চলতি মৌসুমে তিস্তার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডালিয়া শাখা।
মহামারি করোনার সংক্রমণ রোধে সারাদেশে লকডাউন ও আধা লকডাউন চলছে। এই পরিস্থিতিতে কৃষক যাতে সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেদিকে যথেষ্ট খেয়াল রাখছে পাউবো ডালিয়া শাখা। ফলে প্রধান ক্যানেলের দুই ধারে সেচ সুবিধা পেতে কৃষকদের বেগ পেতে হয়নি।
পাউবো ডালিয়া শাখা জানায়, এবার চলতি মৌসুমে সেচ সুবিধা পেতে ১২ উপজেলার সুবিধাভোগী কৃষকের মধ্যে ২৭০টি পানি ব্যবস্থাপনা দল তৈরি করা হয়েছে। তারা মূলত কৃষকের সুবিধার্থে পানি বন্টনের কাজটি করে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় পানি সমবন্টন ও সেচ দেওয়া সহজে করা যায়।
কৃষকরা বাংলানিউজকে জানান, সেচ খালের পানিতে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে তাদের মুখে হাসির ঝিলিক। এছাড়া ধানের বাম্পার ফলনের আশাও করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিবারের মতো তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ কম থাকলেও চলতি মৌসুমে পানি প্রবাহের ঘাটতি ছিল না। তাই তিস্তার পানির ওপর নির্ভরশীল উত্তরের জেলা নীলফামারী সদর, রংপুর সদর, বদরগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জ, জলঢাকা, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর, পার্বতীপুর, খানসামা ও চিরিরবন্দরসহ ১২টি উপজেলা।
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, চলতি খরিপ-১ মৌসুমে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। কিন্ত তিস্তায় পানির প্রবাহ ভালো থাকায় সেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দিতে সক্ষম হয়েছে পাউবো। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বেশি সেচ সুবিধা পাচ্ছে ওই সব এলাকার কৃষক। এবার প্রচুর পানি সরবরাহের কারণে পেঁয়াজ, মরিচ, কুমড়া, ভুট্টা ও বোরো চাষে লাভবান হচ্ছে তিস্তাবেষ্টিত চরাঞ্চলের মানুষজন।
নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের মাঝাপাড়া গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, করোনার কারণে মানুষ ঘরবন্দি থাকায় সেচের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন চিন্তা ছিল কৃষকের। কিন্ত দেখা গেছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বেশি সেচ সুবিধা পাচ্ছেন এই অঞ্চলের কৃষক। ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন অনেকেই।
একই এলাকার কৃষক হাফিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এবার ক্যানেলের পানি দিয়ে তিন বিঘা জমিতে ২৮ জাতের ধান চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ২২ থেকে ২৫ মণ ধান ফলার আশা করছি। আর কয়েক দিনের মধ্যে সব ধান ঘরে তুলতে পারবো। সেচের পানিতে ধান চাষে খরচ কম লাভ বেশি।
এ ব্যাপারে পাউবো ডালিয়া সেচ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী মোবাইলফোনে বাংলানিউজকে বলেন, মুজিববর্ষে সেচ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে না বরং দ্বিগুণ পানি সরবারহ করা হচ্ছে। কৃষিখাতে সরকার ভর্তুকিসহ সব ধরনের সুবিধা দিয়ে আসছে। তাই সরকারি ছুটিতেও সেচ কার্যক্রম চলবে।
তিনি আর বলেন, চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি থেকে চলতি রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে কৃষকের জমিতে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়। উজানে এই মৌসুমে পানি প্রবাহ ভালো থাকায় তিস্তা ব্যারাজ কমান্ড এলাকায় সম্পূরক সেচ দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে বিগত দিনের চেয়ে এবার শুস্ক মৌসুমে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে।
পাউবোর পানি পরিমাপক (গেজ পাঠক) নুরল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জানুয়ারির শুরুতেই দুই হাজার কিউসেক পানি পাওয়া গেলেও এখন সেই পানি প্রবাহ তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কিউসেক পাওয়া যাচ্ছে। ফলে পানিতে সয়লাব দিনাজপুর ক্যানেলসহ আশপাশের এলাকা। তাই চলতি মৌসুমে সেচ দেওয়া সহজ হয়েছে।
পাউবো ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দেশজুড়ে করোনার কারণে সরকারি ছুটি ও লকডাউন ঘোষণা করা হলেও আমরা কৃষকের জমিতে বোরো ধান, ভুট্টা ও মরিচ, পেঁয়াজ চাষের কথা ভেবে ও দেশে কৃষি বিপ্লব ঘটাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও মুজিববর্ষকে সফল করতে পাউবোর সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, তিস্তার পানি চুক্তির বিষয়টি দুই দেশের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত থাকায় নদীর পানি পর্যাপ্ত পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও দেশের ১২টি অঞ্চল ও তিস্তা তীরবর্তী চরাঞ্চলের পাঁচ হাজার ৪২৭টি গ্রামের মানুষের ভাগ্যের সঙ্গে জড়িত এ চুক্তি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২১
এসআরএস