ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

সিলেটে হাওরে যেন বৈশাখী উৎসব!

 নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২১
সিলেটে হাওরে যেন বৈশাখী উৎসব! কৃষকের মুখে হাসি। ছবি: মাহমুদ হোসেন

সিলেট: করোনার ভয়াবহতায় বৈশাখী উৎসব হয়নি নগর-শহরে। বিবর্ণ ছিল বাংলা নববর্ষ বরণ।

তবে, উৎসবের ছোঁয়া লেগেছে এবার হাওর বাওরে। বোরোর বাম্পার ফলনে কৃষাণ-কৃষাণীর পরিবারে চলছে বৈশাখী উৎসব।
 
গ্রীষ্মের আকাশ সেজেছে নীল রঙে। বাতাসে ভেসে বেড়ানো মেঘমালা নানা আকৃতি ধারণ করে সূর্যকে আড়ালের চেষ্টা! প্রকৃতির এসব খেলা যেন কৃষককে রক্ষায়! তবে,
তা দেখার ফুসরত নেই কৃষকদের। সোনার ফসল গোলায় ভরতে যত ব্যস্ততা কৃষক পরিবারের। তাই ছেলে-বুড়ো, নারী-শিশু, সবার সময় কাটছে ধানী জমিতে।
প্রতিবার রবি মৌসুমে বন্যা, ঝড়, শিলাবৃষ্টিতে ম্লান হয় কৃষকের স্বপ্ন। প্রকৃতি এবার যেন দুই হাত ভরে দিয়েছে প্রান্তিক জনপদের মানুষকে। ঘরে ওঠবে গোলাভরা ধান। পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বচ্ছন্দে কাটবেন দিন। এই মৌসুমে এমন স্বপ্ন এবার দেখতে পারেন কৃষাণ পরিবার। ফলে গোলাভরা ধানের স্বপ্নে এবার বৈশাখী উৎসবে মেতেছেন সিলেটের কৃষকরা। কিছুদিন পর সম্পূর্ণরূপে ধান ওঠবে কৃষকের গোলায়।  
 
কৃষকরা জানিয়েছেন, এবার বন্যার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ক্ষীণ। ভয় কেবল ঝড়-তুফান ও শিলাবৃষ্টিতে। অবশ্য উপরওয়ালা সহায় থাকায় আবহাওয়া এবার অনুকূলে। যে কারণে হাওর বাওরের ধান স্বাচ্ছন্দে তোলা যাচ্ছে। সিলেট সদরের সোনাতলা এলাকার কৃষক আব্দুল গণি বাংলানিউজকে বলেন, এবার ফলন ভালো হয়েছে। বন্যার আশঙ্কা না থাকলেও কেবল শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা থেকেই যায়। কেননা, জমিতে পাকা ধান। অবশ্য আরো সপ্তাহদিন আবহাওয়া এভাবে অনুকূলে থাকলে ধান কেটে মাড়াই দিয়ে শুকিয়ে গোলায় তোলা যাবে।
 
একই মন্তব্য করে সিলেট সদরের নলকট গ্রামের আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, এবার শ্রমিক সংকটও নেই। করোনার কারণে লোকজন শহরমুখী হতে না পেরে ধান কেটে আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। জনপ্রতি রোজ ৫শ টাকা কামাই করতে পারছেন। এ বছর প্রায় দুই একর জমিতে ব্রি-২৮ ধান রোপণ করে ভালো ফলন পেয়েছেন তিনি। পার্শ্ববর্তী বাইশটিলা এলাকার শহিদ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৯ সালে ২০ কেদার (৬০০ শতক) বর্গা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। সব পানিতে তলিয়েছিলো। সে বছর ঋণ করে ধান ক্ষেত করে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এই শঙ্কা থেকে পরের বছর (২০২০ সালে) কম সংখ্যক জমিতে বোরো ধান ক্ষেত করে ধানও পেয়েছি। এবার সেই আশায় ১২ কেদার জমি বর্গা নিয়ে ধান ব্রি-২৮ ও ২৯ ধান লাগাই। ফলনও ভালো হয়েছে। তাই সাতজন শ্রমিক লাগিয়ে ধান কাটতেছি।  সরেজমিন দেখা গেছে, সিলেট সদর উপজেলার বিভিন্ন সোনাতলা, নলকট, কান্দিরগাঁও, লামাকাজীসহ বিভিন্ন হাওরে পাকা ধানে ঠাসা জমি। কৃষকরা ধান কাটা ও মাড়াই দেওয়ায় ব্যস্ত। সঙ্গে কৃষাণীরা মাড়াইয়ের পর বাতাসে ধান ঝেড়ে বস্তাভর্তি করে বাড়িতে নেওয়ার উপযোগী করছেন। এরপর হাতা গাড়ি, কেউবা পাওয়ার টিলারে ধানবোঝাই করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। কৃষাণী ও শিশু কিশোররাও ধান তুলতে সাহায্য করছেন।  
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি ১৮১ দশমিক ১৫ বর্গকিলোমিটারের হাকালুকি হাওরে ২০ হাজার ৪০০ হেক্টরে ২৪০টি ছোট-বড় বিল রয়েছে। বর্ষায় সাগরসম হাকালুকি শীত মৌসুমে চারণ ভূমিতে পরিণত হয়। বিলগুলোর পাড়ে এবং সমতল জমিগুলোতে রবি শস্যের এবারো ব্যাপক ফলন হয়েছে জানা স্থানীয় কৃষকরা। একইভাবে সিলেট জেলার ছোট-বড় হাওর ছাড়াও নিম্নাঞ্চল এলাকায় বোরো ধানের ব্যাপক ফলন হয়েছে। আর মৎস্য সম্পদের আধার সুনামগঞ্জ ধানের ফলনেও বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে। স্থানীয়দের মতে, সুনামগঞ্জের উৎপাদিত ধানে সারা দেশের ৩ মাসের খাদ্যের যোগান হয়। হাওর-বাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জের শনিরহাওর, টাঙ্গুয়ার হাওর, কচড়ার হাওরসহ বিভিন্ন হাওরে দুই লাখের অধিক হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে।
 
বিগত বছরগুলোতে কৃষকরা রবি শস্যের ফলনে বন্যায় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গত বছর এবং এ বছর স্বাচ্ছন্দে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।   

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক দিলীপ কুমার অধিকারী বলেন, এবার বন্যায় বোরোর ক্ষতির আশঙ্কা নেই। কেবল শিলাবৃষ্টি না হলেই হয়। আরো কিছুদিন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ধান সম্পূর্ণরূপে কেটে ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২১
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।