রাঙামাটি: রূপ বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত শহর হিসেবে পরিচিতি পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির। এখানে তুলনামূলক বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় দেশের জাতীয় ফল কাঁঠালের উৎপাদন ভালো হয়েছে এবার।
তবে করোনার কারণে গত বছরের মতো এবারও উৎপাদিত কাঁঠালের ন্যায্য মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। উৎপাদন এবং পরিবহন খরচ তুলতে তাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে।
কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের কলাবাগান এলাকার চাষি জসিম উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, আমার ২০টি কাঁঠাল গাছ আছে। ফলন বেশ ভালো হয়েছে।
প্রতিটি গাছে ৭০-৮০টি করে কাঁঠাল ধরেছে। তবে গত বছরও গাছে ভালো ফলন এসেছে, এবারও ভালো হয়েছে; সেই তুলনায় ন্যায্য মূল্য পাইনি। গাছে ফল পচে যাওয়ার আগে নামে মাত্র দামে বিক্রি করে দিয়েছি।
এদিকে রাঙামাটি শহরের হাটবাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বড় আকারের কাঁঠাল প্রতিটি ৩০০-২৮০ টাকা, মাঝারি আকারের ২৫০-২০০ টাকার মধ্যে এবং ছোট আকারের কাঁঠাল ১৮০-১০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
জেলা শহরের কলেজগেট হাটবাজারের মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী মো. রোকন বাংলানিউজকে জানান, হাটে কাঁঠালের সরবরাহ বেশি। আমি নিজেও অনেক টাকার কাঁঠাল কিনেছি। সেই তুলনায় বিক্রি নেই। একদিকে ‘লকডাউন’ অন্যদিকে করোনা।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে কোনো রকমে বেঁচে আছি। জেলার বাইরে বিক্রি করতে না পারলে লাভের মুখ দেখি না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি অঞ্চল থেকে জানানো হয়, এ বছর কাঁঠালের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। অর্জিত আবাদ হয়েছে ৩৩৭৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে ২৬ মেট্রিকটন উৎপাদনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি অঞ্চলের উপ-পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, পাহাড়ের মাটি ফল চাষের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় দিন দিন বিভিন্ন জাতের ফলের আবাদ বাড়ছে। পাহাড়ি কৃষকরা এক সময় জুম চাষ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। জুম চাষ ছাড়া তারা কিছুই বুঝতে চাইতেন না। যুগের বিবর্তনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় গত এক দশক ধরে জুমের বিকল্প বিভিন্ন লাভজনক ফলের চাষ করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক জানান, অন্যান্যবারের তুলনায় গত দু’বছর ধরে রাঙামাটিতে কাঁঠালের ফলন ভালো হচ্ছে। দেশে করোনা না থাকলে কৃষক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সবাই ভালো লাভবান হতে পারতেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে উর্বর মাটি ও আবহাওয়া অনুকূল থাকায় নানান ধরনের ফলের আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উৎপাদিত এসব ফলের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এবং যথাযথ সংরক্ষণে হিমাগার না থাকায় প্রতি বছর ব্যবসায়ীদের কয়েক লাখ টাকার ফল পচে যায়। তাই দেশের বৃহত্তর জেলা রাঙামাটিতে একটি হিমাগার আবশ্যক বলে মনে করেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০২১
এসআই