ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ফলন ভালো হলেও কম দামে হতাশ কৃষক

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১
ফলন ভালো হলেও কম দামে হতাশ কৃষক বিক্রির জন্য ট্রাকের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পাট

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচরে পাটের ফলন ভালো হলেও বর্তমানে বাজারমূল্য নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন স্থানীয় চাষিরা।  

পাটের বীজ বপন থেকে শুরু করে আঁশ ছাড়িয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা পর্যন্ত যে খরচ হয় তাতে করে বর্তমান বাজারদরে পাট বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে কৃষকদের।

এমনটাই আশঙ্কা করছেন উপজেলার সাধারণ কৃষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার পৌরসভাসহ বেশিরভাগ ইউনিয়নগুলোতেই পাটের আবাদ হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৩ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।  

উপজেলার বহেরাতলাসহ কয়েকটি এলাকায় আগাম পাটের চাষ করায় ইতোমধ্যে বিক্রি শুরু হয়েছে। অনেকের পাট বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। অনেক স্থানে পাটের আঁশ ছড়ানোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তবে এর মধ্যে হঠাৎ করেই গত দুই সপ্তাহ ধরে পাটের বাজার মূল্য কিছুটা কমে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কৃষকেরা।  

পাটের ফলন মৌসুমের শুরু থেকে বাজারে দাম ছিল মণপ্রতি তিন হাজার ৩শ থেকে ৩ হাজার ৬শ টাকা। বর্তমানে হাটে মণপ্রতি পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯শ থেকে ৩ হাজার টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে সব মিলিয়ে মণপ্রতি ৫শ টাকা কমে গেছে। বাজার অনুযায়ী পাটের দাম আরও কমে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন কৃষকেরা।

স্থানীয় কৃষক মো. আব্বাস আলী শেখ বলেন, পাট ঘরে তুলতে যে খরচ হয় তাতে করে বর্তমান দাম অনুযায়ী বিক্রি করলে খুব একটা লাভ আসে না। কষ্টটাই বৃথা যায়। বাজারে দাম কমে গেলে আমাদের মতো কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়বে। আমরা ফসল ঘরে তুলে মজুদ করতে পারি না। টাকার জন্য বিক্রি করতেই হয়।

মো. আমোদ আলী নামে অপর এক কৃষক বলেন, শুনতাছি সামনে আরো কমবে পাটের দাম। এবার ৩০/৩৫ জন পাট পেয়েছি। দাম কমতে থাকলে লোকসান গুনতে হবে।

দত্তপাড়া এলাকার মো. ফারুক বলেন, পাটের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম কমে যাওয়ায় বিক্রি করা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ দেখা দিয়েছে। মজুদ করার মতো জায়গাও নেই আমাদের।

শিবচর উপজেলার বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকদের একটা অংশ পাট বিক্রি করছেন। তারা জানিয়েছেন, টাকা খরচ করে আবাদ করেছেন। পাট বিক্রি করে প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাজ করবেন। অনেকে আবার জমি খাজনা করেও চাষবাস করেছেন। কেউ ঋণ করেছেন। এসব চাহিদা মেটানো এবং আগামী ফসলের জন্য জমি প্রস্তুত করতে পাট বিক্রি করতেই হচ্ছে তাদের। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম কম পেয়ে মজুদ করতে পাট কিনছেন বলেও জানা গেছে। দাম বাড়লে তখন বিক্রি করবেন তারা।

শিবচর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মোট ১৩ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ হাজার হেক্টরে তোষাপাট, ৪ হাজার হেক্টরে দেশি পাট এবং ৫শ হেক্টরে মেছতা পাটের চাষ করা হয়েছে। উপজেলার অনেক স্থানেই পাট তুলে জমিতে ধানের চাষ শুরু করে দিয়েছেন কৃষকেরা। উঁচু স্থানের জমির পাট কেটে জাগ দেওয়া এবং আঁশ ছাড়ানোর কাজ চলছে।

উৎরাইল হাটের ব্যবসায়ী সোহাগ হাওলাদার বলেন, গত সপ্তাহ থেকে পাটের দাম কমতে শুরু করেছে। আগে যে পাট ৩ হাজার ৪শ টাকায় বিক্রি হয়েছে এখন সেই পাট ২ হাজার ৯শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বাজারে চাহিদা অনুযায়ী মনে হচ্ছে দাম আরো কমতে পারে।

শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপম রায় জানান, এ উপজেলার আবহাওয়া পাট চাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। এ কারণে প্রতি বছরই এখানে পাটের ফলন ভালো হয়। চলতি বছরও ভালো ফলন হয়েছে। আমরা কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। বাজারে পাটের দাম ঠিক থাকলেও কৃষকদের সন্তুষ্টি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।