ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

দাম নেই, তরমুজ নিয়ে বিপদে চাষিরা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৬ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২২
দাম নেই, তরমুজ নিয়ে বিপদে চাষিরা

খুলনা: হতাশাগ্রস্ত মলিন মুখে বসে আছেন তরমুজ চাষী প্রদ্যুত রায়। ট্রাক ভরে তরমুজ নিয়ে এসে বিক্রি করতে না পেরে অলস সময় পার করছেন খুলনার কদমতলা পাইকারি আড়তে।

তরমুজের ভয়াবহ দরপতনে তার মতো পাইকগাছার সৈয়দখালী গ্রামের হালিমও তরমুজ নিয়ে এসে বিক্রি করতে পারেননি।

প্রদ্যুত রায় শনিবার (১৪ মে) বাংলানিউজকে জানান, দাকোপের ঝিলডাঙ্গা থেকে তরমুজ নিয়ে এসেছেন। সারাদিন বসে থেকেও বিক্রি করতে পারছেন না। কেউ দামও বলতে চাচ্ছেন না। অথচ অনেক স্বপ্ন নিয়ে ধার করে ট্রাক ভাড়া করে তরমুজ নিয়ে এসেছেন আড়তে।

কৃষক হালিম বলেন, তরমুজের দাম নেই। যে পরিমাণ খরচ করেছি তা উঠছে না। ধারদেনা, সমিতি, ঋণ, বিভিন্ন ভাবে টাকা জোগাড় করে তরমুজ চাষ করেছিলাম। খুলনার সবচেয়ে বড় আড়তে এনেও তরমুজের দাম পাচ্ছি না। ৭-৮ কেজি ওজনের একটি তরমুজ ২৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। যার কেজি পড়ে ৩টাকা।

তিনি জানান, শুক্রবার (১৩ মে) তরমুজ নিয়ে এসে শনিবার অনেকটা পানির দরে বিক্রি করতে পেরেছেন।

দাকোপ উপজেলার বানিশান্তার তরমুজ চাষী রিপন রায় বলেন, ১০ দিন আগে ২ বিঘা জমির তরমুজ বিক্রি করেছি ৯৬ হাজার টাকায়। এখন ২ বিঘা জমির তরমুজের দাম বলছে ২০ হাজার টাকা। অথচ ১ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করতে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা।

সরেমজিনে খুলনার কদমতলা পাইকারী আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, তরমুজের কোনো কদর নেই। কৃষকরা তরমুজ এনে বিক্রি করতে না পেরে অনেকে রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখছেন। সেখানে পঁচে যাচ্ছে তরমুজ। প্রচুর তরমুজ থাকলেও ক্রেতার অভাবে একেবারেই দাম নেই। পচনশীল হওয়ায় পানির দামেই পাইকারদের কাছে অনেকে ছেড়ে দিচ্ছেন তরমুজ।

কৃষকরা জানান, তরমুজের এখন যা পাইকারি দাম তাতে উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা, পরিবহন খরচই উঠছে না। তরমুজ বিক্রি করে গাড়ি ভাড়ার খরচ দিয়ে পকেট শূন্য।

সিলেট থেকে কদমতলায় তরমুজ নিতে আসা সালেক আহমেদ বলেন, সিলেটে আগে তরমুজের কদর ছিল। কিন্তু এখন সেই কদর নেই।

শনিবার (১৪ মে) সকালে কদমতলা আড়তের ভাই ভাই বাণিজ্য ভাণ্ডারের আড়তদার মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের  আগেও তরমুজের অনেক চাহিদা ছিল। চাহিদা বেশি ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় তখন দামও ছিল বেশি। বর্তমানে বাজারে তরমুজের সরবরাহ বেশি। সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কমে গেছে।

তিনি জানান, সবচেয়ে ভালো মানের ৮-১২ কেজি ওজনের ১০০ পিস তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার টাকায়। ৪-৫ কেজি ওজনের ১০০ পিস বিক্রি হচ্ছে ২৫শ টাকা। ৩ কেজি ওজনের ১০০ পিস ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কদমতলায় ৭০টি তরমুজের পাইকারি দোকান রয়েছে। যা খুলনার মধ্যে সবচেয়ে বড়।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য মতে, এবছর জেলায় ১৩ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দাকোপে ৭ হাজার ৬২৫ হেক্টরে। এছাড়া বটিয়াঘাটায় ৩৬০০ হেক্টরে, পাইকগাছায় ১৫১০ হেক্টরে, কয়রায় ৮৯৫ হেক্টরে, ডুমুরিয়ায় ৩৫০ হেক্টরে, রূপসায় পাঁচ হেক্টরে, তেরখাদায় তিন ও ফুলতলা উপজেলায় এক ও মেট্রো থানায় আরও এক হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে।

জানা গেছে, খুলনায় এবার তরমুজের বাম্পার ফলন হলেও শেষ মুহূর্তে দাম নিয়ে চরম হতাশ চাষীরা। নিদারুণ কষ্ট- রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে এবং নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে উৎপাদিত এ ফসলের মূল্য নিয়ে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। তরমুজ চাষ করে লোকসানের মুখে খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটাসহ ৫ উপজেলার হাজার হাজার কৃষক।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২২
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।