নীলফামারী: বর্তমানে কাঁচা মরিচের গায়ে আগুন লেগেছে। কিন্তু সে আগুনের ন্যুনতম আঁচ লাগেনি মনোয়ারা বেগমদের শরীরে।
সরেজমিনে গেলে এক রকম সবুজ বিপ্লব চোখে পড়ে। গ্রামটির ফুতুপাড়া, দেওয়ানী পাড়া, নতুনহাট, ব্রম্মোত্তর ঘুরে দেখা যায়- এক অভাবনীয় দৃশ্য। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সহযোগিতায় প্রতি পরিবারের দেড় শতক জমিতে গড়ে উঠেছে সবজি বাগান। বাড়ির আঙিনায় যেখানে ছিল আবর্জনার স্তূপ, শুয়ে থাকতো কুকুর বিড়াল সেই উঠান এখন সবুজ প্রকৃতি।
কৃষক ফজলুর হকের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম তাঁর উঠনের দেড় শতক জমিতে আবাদ করেছেন পেঁপে, করোলা, ঢেঁড়স, লাল শাক, পাট শাক ইত্যাদি। আর বস্তায় আবাদ করেছেন আদা।
কথা হলো মনোয়ারের (৩৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, এলাকার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিএস) মোমিনুল মোস্তফা জামানের পরামর্শে মাত্র দেড় শতক জমিতে গড়ে তুলেছি সবজি বাগান। বাগানটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’। কোদাল দিয়ে মাটি কেটে চাষ উপযোগী করেছি জমি। পরে ৫টি বেড তৈরি করেছি, প্রতিটি বেড ১ মিটার চওড়া। মাঝে ১ ফুট নালা। যাতে পানি সেচ দেওয়া হয়। গত জানুয়ারি মাসে আমরা ওই বাগানটি গড়ে তুলেছিলাম। এর মধ্যে তিন বার ফলন পেয়েছি। খুব ভাল লাগছে।
মোজাফফর হোসেনের স্ত্রী সুইটি বেগম জানান, নিজের জমিতে নিজে চাষ করে ভাল ফলাফল পেয়ে অনেক আনন্দে আছি। যে জমি পড়েছিল তা থেকে এখন অনেক ফলন পাচ্ছি। এ বাগানের সবজি নিজেরা খাচ্ছি, বিলাচ্ছি, বিক্রিও করছি। জহির উদ্দিনের স্ত্রী জোহরা বেগম জানান, তাঁর বাগানে এখন আছে ঢেঁড়স, বরবটি, করলা, ঝিঁঙ্গে, ধুন্দল ও মরিচ। সামান্য জায়গায় কত ফসল? না দেখলে বিশ্বাস হবে না। ছয় মাস ধরে আমরা কোনো সবজি কিনে খাইনি। বাগান থেকে যা পাই তা অনেক। শুধু তা নয় এক হাজার টাকার সবজিও বিক্রি করেছি আমি।
মনোয়ারা আরও বলেন, বাজারে এখন কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে আড়াইশ টাকা কেজি দরে। অথচ আমরা নিজেদের বাগানের কাঁচা মরিচ দিয়ে তরকারি খাচ্ছি। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তবে পাশের নতুন বাজারের সবজি বিক্রেতারা আমাদের ওপর ক্ষেপে গেছেন। তাঁরা বলছেন, তোমরা চাষ করছো বলে আমাদের বেচাকেনা বন্ধ হয়ে গেছে। এই বলে হেসে উঠেন তিনি।
ব্রম্মোত্তর গ্রামের পারিবারিক পুষ্টি বাগানের দেখভাল করছেন কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোমিনুল মোস্তফা জামান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চান দেশে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী থাকবে না। মুজিববর্ষে আমরা সেই নিদের্শনা মেনেছি। গ্রামবাসীকে এরকম বাগান গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করছি। গ্রামটিতে এখন এক ইঞ্চি জমিও খালি নেই। এসব বাগানে কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার হয় না। মুরগির বিষ্ঠা, বায়োগ্যাসের বর্জ্য, গৃহস্থালী আবর্জনা দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি করে জমিগুলোতে প্রয়োগ করা হচ্ছে। আর কীটনাশক হিসেবে তামাকগুড়া (গুল) ব্যবহার করা হচ্ছে। পুষ্টি বাগানের ফসল সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে জানান তিনি।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মমতা সাহার সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, কেবল ব্রম্মোত্তর নয় আমরা সৈয়দপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৬০০ পুষ্টি বাগান গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছি। সে অনুযায়ী ২৮৬টি বাগানে উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাগানগুলো পরিদর্শন করেছেন। তারা ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এসব সবজি বাগান দেখে।
সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রাবেয়া আলীম বলেন, পারিবারিক পুষ্টি বাগান একটি উদাহরণ। আমি বাগানগুলো দেখে অবিভূত হয়েছি। সারাদেশে পুষ্টি বাগান গড়ে উঠবে আশা করছি। এর মাধ্যমে দেশ পুষ্টি ও অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
আরএ