ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

রাজবাড়ীতে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে ছাদ বাগান

কাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২২
রাজবাড়ীতে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে ছাদ বাগান নিজের ছাদবাগানে আলিমুজ্জামান মনেক -বাংলানিউজ

রাজবাড়ী: দিনে দিনে কমছে কৃষি জমি, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাকা বাড়ি-ঘর। এ কারণে রাজবাড়ীতে ক্রমেই  জনপ্রিয় হচ্ছে ছাদবাগান (ছাদ কৃষি)।

এমনই একজন ছাদকৃষক আলিমুজ্জামান মনেক (৪৭)। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। করোনাকালীন সময়ে ইউটিউবে ছাদ কৃষি সম্পর্কে জানতে পেরে রাজবাড়ী শহরের চরলক্ষ্মীপুর গ্রামে নিজের ৫ তলা বাড়ির ২ হাজার ৮শ বর্গফুটের ছাদে ৩ বছর ধরে গড়ে তুলেছেন শখের বাগান।

তার বাগানে বর্তমানে  জয়তুন, এবোকাটা, লবঙ্গ, এলাচ, আনারস, কমলা, মালটা, সৌদি মরিয়ম খেজুর, কাজু বাদাম, আপেল, কফি, মিশরীয় ত্বীণ ফল, আঙ্গুর, সাদা জাম, আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, মিস্টি তেতুল, জাম্বুরা, মরিচ, বেগুন, টমেটো, ড্রাগণ, কাঠ গোলাপসহ ২ শতাধিক ফল, ফুল ও ঔষধি গাছ আছে। পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে এসব ফল-ফুলের চারা ও কলম অনান্যদের দিচ্ছেন আলিমুজ্জামান মনেক।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিজের ছাদবাগান অনেক সুসজ্জিত ও পরিকল্পনা করে সাজিয়েছেন তিনি। দেশ-বিদেশ থেকে সংগ্রহ করেছেন গাছের চারা। তার বাগানের বেশির ভাগ গাছে ফল ঝুলে আছে। আর ফুলগুলো সৌন্দর্য মেলে ধরেছে আকাশ পানে।

আলিমুজ্জামান মনেকের এই ছাদবাগানের সফলতার গল্প শুনে আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশিসহ অনেকেই আসেন তা দেখতে। তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ছাদে বাগান শুরু করেছেন অনেকেই।

সৌখিন এ ছাদকৃষক জানান, পরিবারে প্রতিদিন ভাতের সঙ্গে সবজি প্রয়োজন। অধিকাংশ কৃষক বাণিজ্যিকভাবে সবজি ফলিয়ে বাজারজাত করছে। তাতে অতিমাত্রায় বিষ ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। বিষমুক্ত সবজির জোগান মেটাতে ও ছাদের সৌন্দর্যবর্ধনে মূলত ছাদবাগান করেছি।

তিনি বলেন, ৩ বছর আগে আমার ছাদবাগান শুরু। নানা প্রজাতির সবজি ও ফলমূল চাষাবাদ করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বেশি থাকে। সেই সময় পুরো বাড়ি গরম হয়ে ওঠে। ফাঁকা তপ্ত ছাদকে শীতল করতে এবং পরিবেশকে সহনীয় করতেই সবুজ বাগান করা। প্রকৃতির প্রেমে শখের বসেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাগানে সময় দেই। বাড়ির ছাদে ২ হাজার ৮ শ বর্গফুটের আয়তনের মধ্যে টব এবং ড্রামে পরম যত্নে বেড়ে উঠছে আমার শখের গাছগুলো। চাকরি করার পাশাপাশি যেটুকু সময় পাই তা এ বাগানেই দেই। কোনো ধরনের রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করে জৈব সার তৈরি করে তা ব্যবহার করি।

তিনি আরও জানান, চারা সংগ্রহ করে প্লাস্টিকের ড্রাম ও টবে লাগানো হয়। এতে ভবনের কোনো ধরনের ক্ষতি হচ্ছে না। পরিবারের জন্য ভেজালমুক্ত ফল ও শাকসবজির জোগান ও চাহিদা মেটানোর পর আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও পাঠাতে পারি। আসলে গাছগুলোকে সন্তানের মতো লালন পালন করি। এতে আমার অনেক ভালো লাগে।

স্ত্রী ফারহানা হাফিজ বৃষ্টি স্থানীয় টাউন মক্তব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। তিনি জানান, অধিক জনসংখ্যার এই দেশে অপরিকল্পিতভাবে যেখানে সেখানে ভবন নির্মাণের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বাগান করার উপযুক্ত জায়গা। বাড়ির ছাদে সবুজ বাগান গড়ে তুলতে তাই আমাদের এই প্রয়াস। ছাদবাগান থেকে আমরা শাক-সবজি ও ফল সংগ্রহ করে পরিবারের সবাই মিলে খাচ্ছি। স্বামীর সঙ্গে আমি ও সন্তানরা মিলে ছাদবাগান করি।

ছাদবাগান দেখতে আসা শহিদুল ইসলাম জানান, দেশে দিনদিন ফসলি জমি কমে আসছে, কমছে সবুজ প্রকৃতি। বাড়ছে নগরায়ণ। প্রকৃতিতে উষ্ণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। যাদের ভবনের ছাদ খালি রয়েছে, তারা যেন এভাবে সবুজ বাগান গড়ে তোলেন। এতে বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবারে বিষমুক্ত সবজির জোগান দেওয়া সম্ভব হবে।

ছাদবাগান দেখতে আসা সালাম আল মাসুদ নামে আরেক জন জানান, মাঝে মধ্যে এই ছাদবাগান দেখতে আসি। এখান থেকে সবজি ও ফল বাড়ির জন্য নিয়ে যাই। এই ছাদবাগান দেখে আমি নিজে আগ্রহী হয়েছি। চারা ও কলম নিয়ে আমিও বাগান করব।

ছাদবাগান দেখতে আসা মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, নগরায়নের যুগে আমরা ভূমি হারিয়ে ফেলছি। ভূমি বলতে থাকছে আমাদের একখণ্ড ছাদ। তাই ছাদবাগান করতে কিছু খরচ হলেও শাক, ফুল, ফলের নিত্যদিনের পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটানো যায়।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. বাহাউদ্দিন শেখ জানান, গত কয়েক বছরে রাজবাড়ী জেলা সদরে ছাদবাগানের সংখ্যা বেড়েছে। কর্মজীবনের পাশাপাশি ছাদকৃষিতে ঝুঁকছেন অনেকে। পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে ফল, ফুল ও কলমের চারা বিক্রি করে আয়ও করছেন অনেকে। শুধু ব্যাক্তি উদ্যোগেই নয়, রাজবাড়ী সদরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ছাদেও গড়ে তোলা হচ্ছে ফল ও ফুলের বাগান। রাজবাড়ী জেলা সদরে ছোট বড় মিলিয়ে ছাদবাগান আছে ১৭০টি। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের সবাইকে নিয়মিত পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।