জয়পুরহাট: শীত যত বাড়ছে, খেজুরের গুড়ের চাহিদাও বাড়ছে। তাই জয়পুরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় খেজুর রস সংগ্রহ ও রস থেকে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।
আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য শীত মৌসুমে গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে খেজুর রস ও গুড় দিয়ে তৈরি হয় নানান রকমের বাহারি পিঠাপুলি ও পায়েস। তাই বানিজ্যিক ভাবেও খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।
গাছিরা জানায়, প্রতিদিন বিকেলে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে ছোট-বড় মাটির হাড়ি বেঁধে রাখা হয়। পরদিন ভোরে এ সব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে টিনের বড় পাত্রে জ্বাল দিয়ে পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করা হয়।
জানা গেছে, ভারত সীমান্তবর্তী জয়পুরহাট জেলার সদর, পাঁচবিবি ও আক্কেলপুর উপজেলায় খেজুর গাছের সংখ্য বেশি। রাজশাহীর বাঘা উপজেলা থেকে আসা গাছিরা মৌসুমের শুরুতেই মালিকদের কাছ থেকে খেজুর গাছ চুক্তিতে নিয়ে নেয়। এসব খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ ও গুড় তৈরি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার খঞ্জনপুর এলাকায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলা থেকে আসা খেজুর রস সংগ্রহকারী আনসার, দুলাল ও হেলাল জানায়, প্রতি বছরের মতো এবারো জয়পুরহাট, পাঁচবিবি ও আক্কেলপুর উপজেলার বিভন্ন এলাকায় তারা খেজুর গাছ লিজ নিয়েছেন।
তারা বলেন, শীতের পুরো ৪ মাস এসব খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় উৎপাদন করবেন। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে এভাবেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের মাধ্যমে চুলার আঁচে পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে থাকেন।
তারা আরও বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর চিনির বাজার চড়া হওয়ায় গুড়ের বাজারেও কিছুটা চাপ পড়েছে। তাই এ বছর কিছুটা বেশী লাভের আশা করছি আমরা।
খঞ্জনপুরে খেজুর গুড় তৈরী দেখতে আসা নূর-ই আলম বলেন, শীতকাল মানেই মা, দাদী কিংবা নানীর হাতে তৈরি পিঠা খাওয়ার ধুম। আর শীতকাল মানেই মিষ্টি রোদে বসে খেজুর রসের সাথে মুড়ি ভিজিয়ে খাওয়ার আনন্দই আলাদা।
গুড় বিক্রেতা রাব্বু মিয়া জানায়, শীত মৌসুমের শুরু থেকেই খেজুর রস থেকে তৈরি পাটালি গুড় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং লালি গুড় ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে। বাজারে খেজুর গুড়ের চাহিদা বেশি।
এ ব্যাপারে জয়পুরহাটের বাজার বিপনী কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন জানান, শীত মৌসুমে নির্ভেজাল গুড় উৎপাদ ও বিক্রিতে গাছি ও ব্যবসায়িরা কোন ভাবেই যেন কেমিক্যাল মিশ্রণ করতে না পারে, সে জন্য আমরা বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করেছি।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, খেজুর গাছ পরিবেশ বান্ধব ও স্থান সাশ্রয়ী একটি বৃক্ষ প্রজাতি। এ প্রজাতি দুর্যোগ প্রতিরোধী বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে। খেজুর রস ও গুড় বিক্রি করে খামারিরা আর্থিক লাভবান ও স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টান্ত বেশ সুপ্রাচীন। গ্রামীণ অর্থনীতি এবং মৌসুমি কর্মসংস্থানে খেজুর গাছের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে।
বিশেষ করে শীতকালে বাংলাদেশের সর্বত্রই খেজুর রস, খেজুর গুড় বাঙালি সংস্কৃতিতে রসঘন আমেজ লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশের মাটি ও কোমল প্রকৃতি হওয়ায় খেজুর গাছ বেড়ে ওঠার জন্য বেশ উপযোগী। রাস্তা, বাঁধ, পুকুর পাড় এমনকি খেতের আইল এবং আবাদি জমিতে এ বৃক্ষ বেশ ভালো জন্মে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২২
এসএম