ঢাকা: কবিতা, কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ-গবেষণা ও শিশু-কিশোর সাহিত্যের জন্য চার তরুণ লেখকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০২২’। জ্যেষ্ঠ শিল্পী ও গুণীজনদের হাত থেকে পুরস্কার নিয়ে সাহিত্য সাধনায় নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন লেখকরা।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চার তরুণকে পুরস্কৃত করা হয়।
২০২২ সালের ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার' অর্জন পেয়েছেন– ‘সন্দেহ হবে না কেন’ কাব্যগ্রন্থের জন্য কবির কল্লোল, ‘দূর পৃথিবীর গন্ধে’ বইয়ের জন্য কথাসাহিত্যে মাসউদ আহমাদ, ‘কৈবর্ত জাতিবর্ণের ইতিহাস’ গ্রন্থের জন্য প্রবন্ধ-গবেষণায় নিবেদিতা রায় এবং শিশু-কিশোর সাহিত্যে ‘কং পাহাড়ে শয়তান’ গ্রন্থের জন্য মাহফুজ রহমান।
বিচারকদের সিদ্ধান্ত অনুসারে এবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা ও সাহিত্য বিভাগে মানসম্পন্ন গ্রন্থ জমা না পড়ায় এ বছর চারটি বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে দেওয়া হয় দুই লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ।
ধানমিন্ড ২৭-এর বেঙ্গল শিল্পালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘কালি ও কলম’ এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী হাশেম খান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কালি ও কলমের প্রকাশক ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের এবং আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ এ সারওয়ার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক, কালি ও কলমের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য লুভা নাহিদ চৌধুরী।
এবারের পুরস্কারের বিচারকমণ্ডলী ছিলেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, আবুল মোমেন ও খালেদ হোসাইন। বিচারকদের ভেতর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি পুরস্কার পাওয়া লেখকদের নাম ঘোষণা করেন এবং সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন।
ইমদাদুল হক মিলন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমি এর সঙ্গে যুক্ত। গত দুই বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য বিভাগে পুরস্কার দেওয়া যায়নি। এ শাখায় অত্যন্ত দুর্বল বই জমা পড়ে। আমাদের জন্য খুব বেদনার জায়গা এটি।
প্রধান অতিথি শিল্পী হাশেম খান বলেন, কালি ও কলমের শুরুটাই ছিল অত্যন্ত দীপ্তিময়। আমি শুরু থেকেই এ পত্রিকার পাঠক ও গ্রাহক। প্রথম সংখ্যা থেকেই পত্রিকাটি চমকে দিয়েছিল। পাঠের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে চিনতে পারে। দেশ ও মানুষকে চিনতে পারে। এই জন্য আমাদের পাঠ ও পাঠ-উপাদান দরকার।
আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ এ সারওয়ার বলেন, আমার একটা বিশ্বাস দৃঢ় হয়েছে, পৃথিবীতে মানবকল্যাণের জন্য যত চিন্তা রয়েছে এর প্রতিটারই একটা সমাপ্তি আছে। মানুষের শৈল্পিক, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক অবমুক্তি ঘটলে এ সমাজের ইতিবাচক বিবর্তন ঘটতে পারে। আমরা যারা অর্থনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত তারা এই ক্ষেত্রে সৃজনশীল-মননশীল কাজে সাহস শক্তি যুগিয়ে যেতে পারি।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ‘কালি ও কলম’-এর প্রকাশক এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। সবশেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ‘কালি ও কলম’-এর সম্পাদক সুব্রত বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানটির দ্বিতীয় পর্বে মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ অনুসরণে শুভাশিস সিনহার নাট্যরূপ ও নির্দেশনায় ‘কহে বীরাঙ্গনা’ নাটকটি মঞ্চায়িত করা হয়।
সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘কালি ও কলম’ বাংলাদেশের নবীন কবি ও লেখকদের সাহিত্যের সৃজনধারায় গতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যে ২০০৮ সাল থেকে ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’ দিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত ৫৪ জন কবি ও লেখক এ পুরস্কার অর্জন করেছেন। চলতি বছর পুরস্কারের আর্থিক সম্মাননা ১ লাখ টাকা ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে এ বছর থেকেই সেটি দুই লাখ টাকা করে ঘোষণা দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৩
এইচএমএস/এমজেএফ