ঢাকা: সাপ্তাহিক ছুটির দিনে একুশে বইমেলা ঘুরে পাঠকের সন্তোষজনক উপস্থিতি চোখে পড়েছে সন্ধ্যায়। যদিও সকালের দৃশ্যের ভিন্ন রূপ মেলে বিকেল গড়াতে শুরু করলে।
মেলার প্রথম তিন দিনের তুলনায় শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) শিশু ও অপেক্ষাকৃত কম বয়সী বইপ্রেমীদের আনাগোনা ছিল বেশি।
এদিন বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, সন্ধ্যায় লোকসমাগম হয় মেলায়। নতুন বইয়ের সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করে তোলেন পাঠক। কিনে নেন পছন্দের বই। আর এভাবেই কেটে যায় বেলা।
প্রকাশকরাও বলছেন সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলে বাড়ছে পাঠকের সংখ্যা। বিকিকিনিও এ সময় একটু ভালো। এভাবে চলতে থাকলে মেলা জমতে বেশি সময় লাগবে না।
এদিকে বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: ড. আকবর আলি খান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আমিনুল ইসলাম ভুইয়া। আলোচনায় অংশ নেন ফারুক মঈনউদ্দীন, মো. মোফাকখারুল ইকবাল এবং কামরুল হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদ সাদিক।
প্রাবন্ধিক বলেন, ড. আকবর আলি খান প্রশাসনের বহু পদে সাফল্যের সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। মুজিবনগর সরকারে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছিলেন; পাকিস্তান সরকার তার বিরুদ্ধে জেলও ঘোষণা করেছিল। বহুকাল তিনি অর্থসচিব হিসেবে কাজ করেছেন, সরকারি প্রাশাসনের শীর্ষপদ-মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন, বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টাও ছিলেন। সরকারি প্রশাসনিক কর্মে এসব সাফল্য সত্ত্বেও মনে করা যায় যে, আকবর আলি খানের মূল পরিচয় তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখাজোখায় ছড়িয়ে আছে। পণ্ডিত হিসেবে তিনি অত্যন্ত উচ্চমানের সৃষ্টি রেখে গেছেন।
আলোচকরা বলেন, ড. আকবর আলি খানের কাজের পরিধি ছিল বিস্তৃত। প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে থেকেও সৎ ও নির্ভীক আকবর আলি খান কঠোর ভাষায় অন্যায়, অদক্ষতা ও দুর্নীতির সমালোচনা করেছেন। এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা ভাবতেন তিনি। সামাজিক বৈষম্য ও দারিদ্র্য দূর করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি তার মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়েছেন। অর্থনীতি ও ইতিহাস ছাড়াও নৃবিজ্ঞান ও সাহিত্য-সমালোচনা ক্ষেত্রেও তিনি তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। বহুবিচিত্র বিষয়ে তার আগ্রহ তাকে একজন বহুমাত্রিক পন্ডিতের পর্যায়ে উন্নীত করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সাদিক বলেন, অর্থনীতি, ইতিহাস নৃবিজ্ঞান ও সাহিত্য নিয়ে গভীর জ্ঞানতাত্ত্বিক আলোচনা ড. আকবর আলি খানকে যেমন অমর করেছে তেমনি বাঙালি জাতিকে করেছে ঋদ্ধ। এমন একজন বিবেকবান, স্পষ্টভাষী, সৎ ও নির্মোহ মানুষ আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য নিঃসন্দেহে অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবেন।
শনিবার লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন ফারুক হোসেন, আবদুল বাছির, ইসহাক খান এবং আফরোজা সোমা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি অসীম সাহা, অঞ্জনা সাহা এবং ফরিদ কবির। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মো. রফিকুল ইসলাম, অলোক কুমার বসু এবং মিজানুর রহমান সজল। এছাড়া ছিল গোলাম কুদ্দুছ-এর নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বহ্নিশিখা’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী দিল আফরোজ রেবা, চন্দনা মজুমদার, আব্দুল লতিফ শাহ এবং শাহ আলম দেওয়ান।
আগামীকাল ৫ই ফেব্রুয়ারি রোববার অমর একুশে বইমেলার ৫ম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৩
এইচএমএস/এসএ