ঢাকা: সর্বশেষ ২০১৯ সালে ‘কালো জলের কাব্য’ মঞ্চে এনেছিল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ সময়।
রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রাঙ্গদা’ অবলম্বনে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের নতুন এ নাটক ‘অন্তরে বাহিরে চিত্রাঙ্গদা’। দলের ৪৭তম প্রযোজনা। এটির পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় সারা যাকের। শুক্রবার (৯ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর নাটক সরণির মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হলো। আর শনিবার (১০ জুন) সন্ধ্যায় একই মঞ্চে নাটকটির দ্বিতীয় মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হবে।
চিত্রাঙ্গদার গল্পটা অনেকেরই জানা। রাজার পুত্র হওয়ার কথা। কিন্তু কন্যা হলো। কন্যা হলেও পুত্রের মতো করেই মানুষ হলেন চিত্রাঙ্গদা। এক সময় শিকারে গিয়ে ‘স্বপ্নের নায়ক’ অর্জুনের সঙ্গে দেখা। কিন্তু ছেলের মতো মানুষ হওয়া চিত্রাঙ্গদাকে দেখে ছেলেই ভাবলেন অর্জুন এবং স্বাভাবিকভাবেই আকৃষ্ট হলেন না। এরপরই চিত্রাঙ্গদার মধ্যে একটা নারীসত্তা জেগে ওঠে।
আগেও নানা সময়ে ঢাকার মঞ্চে নৃত্যনাট্য কিংবা কাব্যনাট্য হিসেবে মঞ্চায়িত হয়েছে ‘চিত্রাঙ্গদা’। তারপরও ‘অন্তরে বাহিরে চিত্রাঙ্গদা’র কারিগরি মঞ্চায়ন নিয়ে দর্শকরা বলেছেন, সেট, সংলাপ, আলো, কোরিওগ্রাফি, পোশাক মিলিয়ে ঢাকার দর্শকদের জন্য এটি নতুন এক অভিজ্ঞতা।
নাটক মঞ্চায়ন শেষে নাগরিকের জ্যেষ্ঠ সদস্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর বলেন, নিজের দ্বৈত সত্তার সব দ্বন্দ্ব ও দ্বিধাকে জয় করে অর্জুনকে পাওয়ার অনন্য প্রণয় কথা ‘চিত্রাঙ্গদা’। রবীন্দ্রনাথের কাব্যনাট্য ও নৃত্যনাট্যের রসায়নে সেই আখ্যানেরই এক নবরূপায়ণ সবার সামনে তুলে ধরা হয়েছে সারা যাকেরের ‘অন্তরে বাহিরে চিত্রাঙ্গদা’ নাটকে।
২০১৮ সালে ‘দ্য ওপেন কাপল’ নাটকের পর নতুন নাটক নির্দেশনা দিলেন সারা যাকের। তিনি বলেন, ‘দলপ্রধান আলী যাকেরের চিরপ্রস্থানের পর আমরা দীর্ঘ স্থবিরতায় ভুগছিলাম। ২০২৩ সালের শুরুতে ‘আলী যাকের নতুনের উৎসব’ আয়োজন করলেও নাগরিকের কোনো নাটক সেখানে মঞ্চস্থ করতে পারিনি। সে উৎসবের পর ‘চিত্রাঙ্গদা’ নিয়ে ভাবনা শুরু। সেই জায়গা থেকে তাকে ভীষণ মিস করেছি। আর খুব কম সময়ের মধ্যেই মহড়া শুরু করি আমরা। শুধু আমাদের দলই নয়, বরং নৃত্যকলা ও সংগীতভুবনের অনেকেই এ নাটকের সঙ্গে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত হয়েছেন
নাটকের মঞ্চায়নে দেখা যায়, প্রযোজনাটিতে কাব্য অংশ যেমন প্রাধান্য পেয়েছে, একইভাবে প্রাধান্য পেয়েছে গানও। নির্দেশক সারা যাকেরের ভাষায়, নৃত্যনাট্যের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ কাব্যনাট্যের মাধ্যমেও চিত্রাঙ্গদা নতুন রূপে নির্মাণ করেছেন। কিন্তু কাব্যনাট্যে তিনি চিত্রাঙ্গদার দ্বন্দ্ব ও চরিত্রের নির্মাণ এবং অর্জুনের আবির্ভাব যেভাবে বর্ণনা করেছেন, নৃত্যনাট্যে তা অনুপস্থিত। খুব স্বাভাবিকভাবেই সংগীত ও বিভিন্ন মুদ্রার মাধ্যমে আঙ্গিক প্রকাশটাই নৃত্যনাট্যে প্রাধান্য পেয়ে থাকে। চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু ‘চিত্রাঙ্গদা’ কাব্যনাট্যে সংলাপের কথামালায় চিত্রাঙ্গদা ও অর্জুন চরিত্র দুটোকে বহুমাত্রিকতায় বিশ্লেষণ করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। চরিত্র দুটির ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব, আবেগ-অনুভূতি, প্রেম-ভালোবাসা, মিলন, মান-অভিমান, সম্পর্কের দূরত্ব ও শুভ পরিণয় কাব্যিক ভাষায় মেলে ধরেছেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু শব্দ ও সংলাপ শুনতে হয়তো অপরিচিত বা কঠিন মনে হবে। কিন্তু তার সঙ্গে যখনই অভিনয়, সংগীত ও নৃত্যের নান্দনিক সম্মিলন ঘটে, তখন তা হৃদয়গ্রাহী ও বোধগম্য হয়ে উঠবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
সত্যিই তাই। নাটকে চিত্রাঙ্গদা রূপে র্যাচেল প্রিয়াঙ্কা প্যারিস ও ফারজানা মুক্তো এবং অর্জুন চরিত্রে মাহফুজ রিজভী তাদের অভিনয়ের মধ্য দিয়েও সেটিই দেখিয়ে দিয়েছেন। তাইতো নাটক শেষে প্রশান্তির ঢেকুর তুলেছে দর্শকও। এ বিষয়ে সোহানুজ্জামান নামে এক দর্শক বলেন, ঢাকা শহরে নাটক প্রচুর হয়। কিন্তু ভালো নাটকের বড্ড অভাব। সেই অভাবের জন্য মাঝে মধ্যে নিজের কাছেই ক্ষোভ জন্মে। আর প্রশান্তির বৃষ্টি হয়ে সেসব ক্ষোভ নিভিয়ে দেয় এমন সৃষ্টিশীল প্রযোজনাগুলো।
এ নাটকের চিত্রাঙ্গাদা চরিত্রের গানগুলো গেয়েছেন ফারহিন খান জয়িতা এবং অর্জুন চরিত্রের গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন রোকন ইমন। নাটকটিতে মদন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবু নাসের ইউসুফ। তার গানগুলো গেয়েছেন সন্দীপন দাশ। এছাড়া নাটকে আরও আছেন জোবায়দুর রহমান, ওয়াহিদুজ্জামান মিথুন, আনিসুর রহমান, লাবনী বন্যা, ঐশ্বরিয়া মিত্র প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৯ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৩
এইচএমএস/আরবি