এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন বহুকাঙ্ক্ষিত একটি লাতিন আমেরিকান নাম। তিনি পেরুর বিশ্ববিখ্যাত ঔপন্যাসিক মারিও ভার্গাস য়োসা।
মারিও ১৯৫৫ সালে বিয়ে করেন তার চেয়ে ১৩ বছরের বড় চাচি জুলিয়া উরকিদিকে। গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভের আগেই তিনি একটি স্থানীয় পত্রিকায় কাজ করা মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৯ সালে চলে আসেন ফ্রান্সে। সেখানেই ভাষাশিক্ষক ও বার্তাসংস্থা এএফপির হয়ে সাংবাদিকতার কাজ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি পুনরায় বিয়ে করেন পাত্রিসিয়াকে।
সাহিত্যাঙ্গনে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৫৭ সালে ছোটগল্পের বই The Leaders প্রকাশের মধ্য দিয়ে। তবে মারিও বোদ্ধা মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তার প্রথম উপন্যাস The Time of the Hero উপন্যাসটির মাধ্যমে। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। উপন্যাসটি লেখেন তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে ‘লিমা মিলিটারি স্কুলে’ তার ক্যাডেট জীবন নিয়ে। এরপর তিনি একে একে লেখেন বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও নাটক।
১৯৬৫ সালে প্রকাশিত The Green House উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৬৭ সালে লাভ করেন ‘রমুলো গাইয়েগোস’ আন্তর্জাতিক পুরস্কার। লাতিন আমেরিকার এ পুরস্কারটি মূলত উপন্যাসের ওপরই দেওয়া হয়। The Green House উপন্যাসটিকে লাতিন আমেরিকার অন্যতম সেরা উপন্যাস হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। এছাড়া তিনি লাভ করেছেন স্প্যানিশ ভাষার সবচেয়ে সম্মানিত সেরভান্তেস পুরস্কার।
মারিও কলাম্বিয়ান নোবেলজয়ী কথাসহিত্যিক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের বন্ধু। ১৯৭১ সালে তিনি মার্কেসের ছোটগল্প নিয়ে থিসিস লিখে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এ থিসিস লেখার পরই মূলত মার্কেসের সাথে বন্ধুত্ব হয়।
১৯৯০ সালে মারিও পেরুর প্রেসিডেন্ট পদেও নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু পরাজিত হন আলবের্তো ফুজিমারের একনায়কত্বের কাছে। এর বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম চলে ২০০০ সাল পর্যন্ত। ১৯৯৩ সালে তিনি গ্রহণ করেন স্পেনের নাগরিকত্ব। যদিও এই নাগরিকত্ব গ্রহণকে অনেক পেরুবাসী বিতর্কিত বিষয় হিসেবেই মনে করেন। মারিও একসময় ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রের অনুসারী। পরে কাস্ত্রোর মতাদর্শ ত্যাগ করেন। রাজনীতিসচেতন লেখক মারিও ভার্গাস য়োসাকে সমগ্র লাতিন আমেরিকার একজন গুরুত্বপূর্ণ কথাসাহিত্যিক হিসেবে দেখা হয়।
এর আগে বেশ কবারই য়োসার নাম নোবেলের শীর্ষ তালিকায় ছিল। তার উল্লেখযোগ্য অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে The city and the dogs, The Feast of the Goat, The Bad Girl, Conversation in the Cathedral , The Way to Paradise প্রভৃতি।
১৯৮২ সালের পর মারিও ভার্গাসই প্রথম লাতিন আমেরিকান নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিক। নোবেল কমিটির ভাষ্য অনুযায়ী, মারিও ভার্গাসের দীর্ঘদিনের লেখায় যেভাবে ক্ষমতাকাঠামোর চেহারার পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে ব্যক্তির প্রতিরোধের চিত্র, বিদ্রোহ ও শেষ পর্যন্ত পরাজয়ের মর্মভেদী বিষয়গুলি উঠে এসেছে, তা পাঠকের অনুভূতিকে স্পর্শ করে। ভার্গাসেরই লেখার এ গুণই তাকে মূলত এবারের সাহিত্যে নোবেল পেতে সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২০১৫, অক্টোবর ০৭, ২০১০