একাধারে নাট্যকার, কবি, চিত্রনাট্য রচয়িতা, অভিনেতা ও নির্দেশক হ্যারল্ড পিন্টার। ১৯৩০ সালের ১০ অক্টোবর পূর্ব লন্ডনের হ্যাকনিতে ইহুদি পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
মূলত নাট্যজন পিন্টারের নাটকে বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে অস্তিত্ববাদী সমস্যাক্রান্ত মানুষের বিভিন্ন দিকের গভীর উন্মোচন রয়েছে। আমরা যদি এলিয়টের ‘পোয়েটিক থিয়েটার’র বিষয়-আশয় বিবেচনা করি তবে দেখতে পাব পিন্টারের নাটক প্রকৃতপক্ষে ‘পোয়েটিক থিয়েটার। ’
দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে ইউরোপজুড়ে অ্যাবসার্ড নাটকের উৎপত্তি ও বিকাশ। ইউজিন আয়েনেস্কো, স্যামুয়েল বেকেট, জ্যাঁ জেনে, অ্যাডওয়ার্ড অ্যালবি সেই ধারার পুরোধা পুরুষ। পিন্টারও ওই ধারার অনুবর্তী এবং সফল নাট্যপুরুষ। অ্যাবসার্ডধর্মিতা তাঁর নাটকে রয়েছে এবং স্যামুয়েল বেকেট পিন্টারের প্রিয় নাট্যকার। তবু পিন্টারের নাটকগুলো পুরোপুরি অ্যাবসার্ড না হয়ে ভিন্ন এক মাত্রাগত সমৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা সম্পূর্ণই তাঁর নিজস্ব। সে আঙ্গিককে পিন্টারীয় স্টাইল বলা যেতে পারে। পিন্টারের স্বাতন্ত্র্য তাঁর রাজনৈতিক বিবেচনা এবং সচেতনতাপ্রসূত। সেখানেও আপাত-স্থবির দৃশ্যগুলোতে কোনো টানটান উত্তেজনার বিষয় প্রায়শ উপস্থিত না থাকলেও শ্রেণীগত বৈষম্য এবং প্রচ্ছন্ন, কখনো কখনো প্রকাশ্য বিদ্রোহ দুর্লভ নয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পিন্টারকে নাটকে সচেতন রাজনৈতিক ভাষ্যকার বললেও বেশি বলা হয় না বলেই বিবেচনা করি। নাট্যশিল্পী পিন্টার এসব বিষয় কবিতাতেও এড়িয়ে যায়নি। ফলে তাঁর কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিবাদ। স্যাটায়ারের পাশাপাশি একই শব্দের বহুমাত্রিক ব্যবহার তাঁর কবিতায় ভিন্নভাবে ধরা দিয়েছে।
পিন্টার শুধু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধীই নন, যে কোনো ধরনের আগ্রাসনবিরোধী শিল্পী। তাঁর এই বিরোধী মনোভাব প্রবলভাবে প্রকাশ পায় কবিতায়। বোধ করি কবিতাকেই পিন্টার তাঁর প্রতিবাদের প্রধান শিল্পিত উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সাম্রাজ্যবাদ ও আগ্রাসনবিরোধী এত কবিতা আর কোনো শিল্পীর নামের পাশে দেখা যায়নি। হ্যারল্ড পিন্টারকে সবচে বেশি আপন মনে হয়, যখন বিদেশ-ভূগোল নয়, আমাদের সীমানাতেই বোমা হামলা হয়, যখন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বৈধ হয়ে যায়, দমন-পীড়ন যখন নৈমিত্তিকতায় রূপান্তরিত, যখন আমাদের কবিরা আর প্রতিবাদী কবিতা লেখার আগ্রহ বোধ করেন না, যদিওবা কেউ লেখেন তবে তাকে স্লোগানসর্বস্ব অপ্রচল আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দেওয়ার প্রবণতা স্পষ্ট, অবশ্য নেপথ্যে পিঠ বাঁচানো কিংবা কোথাও তেড়েফুঁড়ে একটু জায়গা করে নেওয়াই মূল ল্য, ঠিক তখনই পিন্টার হয়ে ওঠেন পাশের মানুষটি। তাঁর কবিতায় দ্রোহ, উপমা, চিত্রকল্প এবং স্যাটায়ার এক অভিন্ন রেখায় এসে মিলিত হয়েছে। পিন্টারের কবিতায় দৃশ্যধর্মিতা বিশেষভাবে লণীয়। নাট্যকার হওয়ার কারণেই হয়তো বা কবিতাতেও সেই ছাপ এড়ায়নি।
এই বিরলপ্রজ শিল্পী বিশ্বসাহিত্যে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৫ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ভোগার পর ২০০৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর তিনি দেহান্তরিত হন। ১০ অক্টোবর এই মহান শিল্পী ও মানুষটির ৮০তম জন্মদিন। তাঁর প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা আর অনিঃশেষ ভালোবাসা। জন্মদিনে তার বিপুল সৃষ্টিসম্ভার থেকে চারটি কবিতা ও একটি নাটিকা পাঠকদের জন্য নিবেদন করা হলো।
হ্যারল্ড পিন্টারের ৪টি কবিতা
সমাবেশ
মৃত্যুরাতের শেষ মুহূর্তে।
মৃতদের দীর্ঘ মিছিল অগ্রসরমান
নতুন মৃত্যু
মিলিত হওয়ার জন্যে তাদের দিকেই যাচ্ছে
তাদের মৃদু হৃদস্পন্দন
যেন মৃত্যুকেই আলিঙ্গন করবে
আর মৃতদের দীর্ঘ অগ্রসরমান মিছিল
তাদের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে
তারা কাঁদে, তারা পরস্পকে ভালোবাসে
যেন তারা মিলিত হয়েছে
প্রথম এবং শেষবারের মতো
গণতন্ত্র
পালাবার পথ নেই।
তাদের দীর্ঘ উত্থিত শিশ্ন দৃশ্যমান।
তারা সবার সম্ভ্রম কেড়ে নেবে।
তুমি তোমার পিছনটাকে সামলে রাখো।
বিশেষ সম্পর্ক
(উৎসর্গ : যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য)
বোমা পড়ছে
পা উড়ছে
মাথা পড়ছে খসে
গোলা ছুটছে
চলা বন্ধ
অন্ধ আলোতে ভেসে
মাথা পড়ছে
পা উড়ছে
কামনা মিটবে কিসে
মৃতেরা সব নোংরা বর্জ্য, মৃতেরা সব ধুলো
সব আলো তো অস্ত গেল
অন্ধকারই ভালো।
মানবেরা আসে মানবেরা যায়, মানবের প্রগতি
যুদ্ধে জাগা শিশ্নের পরে জানায় প্রণতি।
ক্যানসার কোষেরা
‘ক্যানসার কোষেরা, মৃত্যুর ব্যাকরণ ভুলে যায় যারা’
(নার্স, রয়েল মার্শডেন হাসপাতাল)
মৃত্যুর ব্যাকরণ ভুলে গেছে তারা
আর বেড়ে যাচ্ছে তাদের খুনে আচরণ।
আমি লড়ে যাই আমার টিউমারের সঙ্গে
দ্বিগুণ মৃত্যুর আকাক্সা পুষে।
আমার দেখা প্রয়োজন টিউমারটি মৃত
একটি টিউমার মৃত্যুর ব্যাকরণ যে ভুলে গেছে
আর আমাকেই মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছে।
অথচ আমি মৃত্যুর অমোঘ ব্যাকরণ মনে করে যাই
যদিও আমার সমস্ত প্রত্যদর্শীরা মৃত।
আজো আমি স্মরণ করি তারা কী বলেছিল
টিউমার বিষয়ে, যেন তারা অন্ধ, যেন তারা বধির
তাদের মূল্য তারা বুঝে পেয়েছিল এ অসুখ জন্মাবার আগেই
যা টিউমারটিকে নামিয়েছে এই অসুখের খেলায়।
এই কালো কোষগুলো শুকিয়ে যেতে যেতে মরে যাবে
অথবা গাইবে বিজয়ের গান তাদের পেয়ে যাওয়া পথে।
দিনরাত তারা খেটে যায়, আর তাই বেড়ে বেড়ে যায়
তোমরা তা জানো না কখনো, তারা বলে না কখনো।
নাটক
অ্যাপ্লিকেন্ট
কোনও এক অফিসের একটি ক। ল্যাম্ব নামের একজন পরিপাটি পোশাক পরিহিত তরুণ কিছুটা নার্ভাস ভঙ্গিতে একা বসে অপো করছেন। এমন সময় পাশের দরজা খুলে মিস পিফেস প্রবেশ করবেন। বোঝা যাচ্ছে নিজের কাজে তিনি যথেষ্ট দ।
পিফেস : সুপ্রভাত।
ল্যাম্ব : সুপ্রভাত, মিস।
পিফেস : আপনি মি. ল্যাম্ব?
ল্যাম্ব : জি।
পিফেস : [কিছু কাগজপত্র দেখতে দেখতে] হ্যাঁ, আপনি এই শূন্যপদে আবেদন করেছেন, তাই না?
ল্যাম্ব : আপনি ঠিকই ধরেছেন।
পিফেস : আপনি একজন পদার্থবিদ?
ল্যাম্ব : ঠিক তাই। আমি সারাজীবন তাই নিয়ে আছি।
পিফেস : [সিরিয়াস ভঙ্গিতে] ভালো। আমাদের কিছু নিয়ম-কানুন আছে। তবে তার আগে আমরা প্রার্থীর যোগ্যতা সম্পর্কে একটু নিশ্চিত হতে চাই। একটি ছোট্ট পরীা। মানে প্রার্থীর মানসিক সামর্থ্য সম্পর্কে বোঝা প্রয়োজন। আপনার কোনো আপত্তি নেই তো?
ল্যাম্ব : খুবই ভালো প্রস্তাব। আমি তৈরি।
পিফেস : সত্যিই চমৎকার!
[মিস পিফেস ড্রয়ার থেকে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে ল্যাম্বের কাছে যাবেন। ল্যাম্বকে বসার জন্য একটি চেয়ার এগিয়ে দেবেন। ]
পিফেস : প্লিজ, বসুন। [ল্যাম্ব বসবে] আমি কী আপনার হাতের তালুতে এটি স্থাপন করতে পারি?
ল্যাম্ব : [কিঞ্চিৎ হেসে] কী এগুলো?
পিফেস : ইলেকট্রোডস।
ল্যাম্ব : ওহ, নিশ্চয়ই। মজার ছোট্ট জিনিস।
[পিফেস ইলেকট্রোডসগুলো ল্যাম্বের হাতের তালুতে স্থাপন করবেন]
পিফেস : এখন এই এয়ারফোনটি পরতে হবে।
[ল্যাম্বের মাথার সঙ্গে এয়ারফোনের ফ্রেমটি বসিয়ে দেয়া হলো]
ল্যাম্ব : আমি খুব ইন্টারেস্ট ফিল করছি।
পিফেস : আমি এখন প্লাগ ইন করছি।
[পিফেস দেয়ালের নির্দিষ্ট জায়গায় প্লাগ ইন করে]
ল্যাম্ব : [এই মুহূর্তে কিছুটা নার্ভাস হয়ে] প্লাগ ইন করছেন? অবশ্যই। হ্যাঁ হ্যাঁ করুন। করেছেন?
[মিস পিফেস একটি উঁচু টুলে বসে ল্যাম্বকে দেখতে থাকেন]
এটা আমার উপযুক্ততা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সা..হা..য্য করবে, তাই না?
পিফেস : প্রশ্নাতীতভাবে। এখন বিশ্রাম। এখন আরাম। কোনোকিছু নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।
ল্যাম্ব : না।
পিফেস : আরাম। পরিপূর্ণ বিশ্রাম। বি..শ্রা..ম। সম্পূর্ণ বিশ্রাম?
ল্যাম্বের মাথাটা একটু ঝুঁকে পড়বে। মিস পিফেস তার টুলের পাশে থাকা একটি বোতামে চাপ দেবেন। সঙ্গে সঙ্গে একটি তীব্র চিনচিনে আওয়াজ শোনা যাবে। ল্যাম্ব নড়েচড়ে বসবে। তার অস্বস্তি বোঝা যাবে। তার হাত এয়ারফোন চেপে ধরবে। চেয়ারে বসা অবস্থাতেই তার মাথা ঘুরতে থাকবে। চেয়ারও স্থানচ্যুত হবে। সে ধীরে ধীরে ঝুঁকে চেয়ারের নিচে চলে যাবে। মিস পিফেস নির্বিকারভাবে সবকিছু দেখতে থাকবে। অবশেষে আওয়াজ থেমে যাবে। ল্যাম্ব ধীরে ধীরে চেয়ারের নিচ থেকে বেরিয়ে আসবে, বসবে, উঠে দাঁড়াবে কিছুণ দাঁড়িয়ে ধপ করে চেয়ারে বসে শরীর সম্পূর্ণ ছেড়ে দেবে।
পিফেস : আপনি কি নিজেকে একজন অস্থির মানুষ মনে করেন?
ল্যাম্ব : না, অবশ্যই না। অবশ্যই আমি...
পিফেস : আপনি নিজেকে বিষণ্ণ প্রকৃতির মনে করেন কি?
ল্যাম্ব : বিষণ্ণ? না, আমি কখনোই নিজেকে বিষণ্ণ কিংবা দুঃখভারাক্রান্ত মনে করি না। ঠিক আছে, কখনো কখনো কিছুটা দুঃখবোধ তো হয়ই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমি...
পিফেস : নিজেকে কি কখনো অবসাদগ্রস্ত মনে হয় না? এই যেমন, কোনোকিছুতে উৎসাহ পাচ্ছেন না...
ল্যাম্ব : আমি ওই অবস্থাকে ঠিক অবসাদগ্রস্ত অথবা উদ্যমহীনতা বলতে চাই না। বিষয়টি হচ্ছে...
পিফেস : কোনও এক সকালে ঘুম থেকে জেগে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায় না? সবকিছু অর্থহীন মনে হয় না?
ল্যাম্ব : মন খারাপ? অর্থহীনতা? আসলে আপনি যদি জানতে চান বিষয়টি কখনো কখনো ঘটে কী না তবে তার উত্তর রয়েছে...
পিফেস : নারীর কোনো আচরণে কখনো কি বিব্রত হয়েছেন?
ল্যাম্ব : নারীর আচরণে?
পিফেস : পুরুষের?
ল্যাম্ব : পুরুষ? ঠিক আছে। নারীসম্পর্কিত প্রশ্নটির উত্তর দিতে চাচ্ছি।
পিফেস : আপনি কি কখনো বিব্রত বোধ করেছেন?
ল্যাম্ব : বিব্রত?
পিফেস : নারীর আচরণে।
ল্যাম্ব : নারী?
পিফেস : পুরুষ।
ল্যাম্ব : ওহ, জাস্ট অ্যা মিনিট, আ...শুনুন, আপনি কী আলাদা আলাদা উত্তর চাচ্ছেন, নাকি একসঙ্গেই দুটোর উত্তর দেব?
পিফেস : সারা দিনের কাজ শেষে আপনি কি কান্ত বোধ করেন? কিংবা উদ্বিগ্ন, দুঃখিত, ক্রোধান্বিত হন? ব্যর্থতা গ্রাস করে? ুব্ধ হন? হতাশ হয়ে পড়েন? কোনোকিছুতে মনোযোগ দিতে পারেন না? ঘুম আসে না? খেতে অনীহা জাগে? বসে থাকতেও ইচ্ছে করে না? একজায়গায় দাঁড়াতেও ভালো লাগে না? কামবোধ জাগে? আলস্য ভর করে? উত্তেজিত হন? কামবাসনা মেটাতে ইচ্ছে করে? প্রবল বাসনা জাগে? শক্তি ভর করে? ভীত হয়ে পড়েন? রু হয়ে যান? প্রবল বাসনার অবদমন ঘটে?
খানিক বিরতি
ল্যাম্ব : [চিন্তা করে] প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া বেশ জটিল, সত্যি বলতে...
পিফেস : আপনি কি সবসময় তাল মিলিয়ে চলতে পারেন?
ল্যাম্ব : সত্যিই চমৎকার একটি বিষয় আপনি ধরতে পেরেছেন-
পিফেস : আপনি কি একজিমায় ভুগছেন কিংবা উদ্যমহীনতায়, অথবা লোম ঝরে যাচ্ছে?
ল্যাম্ব : আ...
পিফেস : আপনি কি এখনো কুমারী নারীর মতোই আছেন?
ল্যাম্ব : মাফ করবেন।
পিফেস : আমি জানতে চাইছি নারীর সংসর্গে গেছেন কি না?
ল্যাম্ব : ওহ, প্রশ্নটা সত্যিই ভীষণ বিব্রতকর। আর তা যদি হয় একজন নারীর সামনে-
পিফেস : তার মানে আপনি এখনো কোনো নারীর সঙ্গে মিলিত হননি?
ল্যাম্ব : হ্যাঁ, সত্যিই তাই। আর এ বিষয়টি নিয়ে আমি কোনো লুকোছাপা করতে চাই না।
পিফেস : আপনি কি সবসময় এ রকম নারীবিবর্জিত থাকবেন?
ল্যাম্ব : হ্যাঁ হ্যাঁ, সবসময়। সবসময়ের জন্যই।
পিফেস : এটা কি আপনার প্রতিজ্ঞা?
ল্যাম্ব : হ্যাঁ, ঠিক তাই।
পিফেস : আপনি কি নারীদের ভয় পান?
পিফেস তার টুলের অন্যপাশে থাকা আর একটি বোতামে চাপ দেবে। মঞ্চ লাল আলোয় ভরে যাবে। পিফেসের প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে সেই আলো জ্বলবে-নিভবে।
পিফেস : [উঠে দাঁড়িয়ে] তাদের পোশাক? জুতো? তাদের কণ্ঠস্বর? হাসি? তাদের দৃষ্টি? তাদের হাঁটা? বসবার ভঙ্গি? তাদের কটা? কথা বলবার ভঙ্গি? মুখ? তাদের হাত? পায়ের পাতা? নিরাভরণ পা? ঊরু? হাঁটু? তাদের চোখ? তাদের [ড্রামের শব্দ]। তাদের [ড্রামের শব্দ]। তাদের [প্রচণ্ড জোরে করতালের শব্দ]। তাদের [শিঙ্গার শব্দ]। তাদের [উদারার একঘেয়ে সুর]।
ল্যাম্ব : [উচ্চকণ্ঠে] এটা নির্ভর করছে, আপনি কি বোঝাতে চাইছেন তার ওপর-
বাতি এখনো জ্বলছে-নিভছে। পিফেস অন্য বোতামে চাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও তীব্র চিনচিনে আওয়াজ শোনা যায়। ল্যাম্ব নড়েচড়ে বসে। তার অস্বস্তি বোঝা যাচ্ছে। তার হাত এয়ারফোন চেপে ধরে। চেয়ারে বসা অবস্থাতেই তার মাথা ঘুরতে থাকবে। চেয়ারও স্থানচ্যুত হবে। সে ধীরে ধীরে ঝুঁকে চেয়ারের নিচে চলে যাবে। ল্যাম্ব ধীরে ধীরে চেয়ারের নিচ থেকে বেরিয়ে আসবে, উঠে দাঁড়াবে। কিছুণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সে মেঝেতে গড়িয়ে পড়বে।
নীরবতা
ল্যাম্ব ঊর্ধ্বমুখ পড়ে আছে মেঝেতে। মিস পিফেস ল্যাম্বের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে কাছে যান। তারপর ঝুঁকে দেখেন।
পিফেস : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মি. ল্যাম্ব। আমরা আপনাকে পরে জানবো।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৬৫০, অক্টোবর ১০, ২০১০