ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

একজন প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার

তমাল রায় | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২৩
একজন প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার মলয় রায়চৌধুরী

মলয়-বাসুদেব-ফাল্গুনী-শৈলেশ্বর-সুবো-সুবিমল-দেবী-অবনী-প্রদীপ কিছু পর অরুণেশরাও। শুরুটা মূলত তার হাত ধরেই।

হ্যাঁ মলয়ের হাত ধরেই শুরু হাংরি আন্দোলনের। চশারের ইন দ সয়ার হাংরি টাইম থেকে হাংরি নামটি নেওয়া। ১৯৬৩-তে প্রকাশ পেল তাঁর প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার। অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার হন মলয়। তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন আন্দোলনের সাথী শৈলেশ্বর, সুভাষ প্রমুখরা। আবার পক্ষে সাক্ষ্য দেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সন্দীপন, জ্যোতির্ময় দত্তরা। মলয় উচ্চ আদালত থেকে ছাড়া পান। ততদিনে মলয় বাংলা ভাষায় উত্তরাধুনিক সাহিত্যচিন্তা ও হাংরি আন্দোলনের জন্য বিশ্ববন্দিত এবং নিন্দিতও একই সাথে। কারণ সুনীল তার এক চিঠিতে জানিয়েছিলেন, কৃত্তিবাসীরা মলয়দের উত্থানে ভীত-সন্ত্রস্ত। তিনি একই সাথে অভিযোগও জানান, মলয় হাংরি আন্দোলনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন সুনীলের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিতির সময়টাই।

মলয় রায়চৌধুরীরা শুরু থেকেই বাংলা ভাষার উত্তর রবীন্দ্রনাথ ঘরানায় পুষ্ট সাহিত্যচর্চাকে ধাক্কা দিতেই চেয়েছিলেন। চিন্তা-চেতনা, প্রচলিত ছন্দ ও শব্দের অচলায়তন ভেঙে নতুনের সন্ধানে ব্যাপৃত ছিলেন।  

মলয় প্রায় ২০০-এর বেশি বই লিখেছেন। কবিতার পাশাপাশি উপন্যাস ও অনুবাদ সাহিত্যেও তিনি সমান পারদর্শী। বন্ধু গিনেসবার্গ ও ওরোলভস্কিদের সাহচর্যে মলয় পরিচিত হন বিট সাহিত্য আন্দোলনের কবিদের সাথে। তাদের অধিকাংশের বইয়েরই অনুবাদক মলয়।

মলয়ের সাহিত্যের কেন্দ্রে ছিল প্রান্তজন। বাংলা সাহিত্যের লুতুপুতু মধ্যবিত্ত জীবনচর্চার বিরুদ্ধে মলয়ের গদ্যও সুবিশাল থাপ্পড়। ভাষা ও প্রতিষ্ঠানকে আজীবন আক্রমণকারী মলয়ের চর্মরোগ ও ছোটলোকের ছেলেবেলা পড়লে বোঝা যায় তিনি কিভাবে বাংলা সাহিত্যের কলকাতা কেন্দ্রিকতাকে ভেঙে নিজেই এক প্রতিষ্ঠান ভাঙার প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছিলেন।  

প্রতিষ্ঠানের দেওয়া পুরস্কারও অনায়াস প্রত্যাখ্যান করেছেন মলয়। সেটা সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার হলেও তা গ্রহণ করেননি। মলয়ের ভক্ত সংখ্যা সুবিশাল, তার অনুসরণকারী বাংলা সাহিত্যের গতানুগতিকতার বাইরে পথ হাঁটা মেধাবী তরুণরা।

বলতে দ্বিধা নেই রবীন্দ্র-পরবর্তীকালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের যে মুষ্টিমেয় কবি লেখক সমগ্র বিশ্বসাহিত্যে স্বীকৃতি পেয়েছেন মলয় তাদের একজন। আত্মপ্রচারক, স্বধর্ম-মেধা-সাহিত্য-চর্চায় সোচ্চার, ন্যারেটিভ ভেঙে নতুন ন্যারেটিভের জন্মদাতা মলয় সম্ভবত কলকাতার পত্তনকারী সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের উত্তর পুরুষ। স্বাভাবিকভাবেই মলয় নেতা এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী একজন সাম্রাজ্য পতনকারীও। তাই তাকে নিয়ে আমৃত্যু বিতর্ক চলতেই থেকেছে। যেমন তিনিই সেই মানুষ যিনি আমৃত্যু ফর বাই অ্যান্ড অব দ্য লিটল ম্যাগাজিন। আজ সকালে সেই সমস্ত বিতর্কের ঊর্ধ্বে তিনি চলে গেলেন। রেখে গেলেন এক সুবিশাল বিতর্কিত উত্তরাধিকার।

লেখক
কলকাতার ঐহিক সাহিত্যগোষ্ঠীর কর্ণধার ও গদ্যকার

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২৩
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।