ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ধারাবাহিক উপন্যাস

মানুষখেকোর দ্বীপ | পর্ব-১০

আলম শাইন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৪
মানুষখেকোর দ্বীপ | পর্ব-১০

উদয় ঘোষালের হুঁশ ফিরে আসতেই দুই হাঁটুর মাঝখান থেকে মাথাটা টেনে তুলল। অনেকক্ষণ মাথা নিচু করে হাঁটু চাপা দিয়ে রেখেছিল সে।

হত্যাকাণ্ডের নির্মমতায় শঙ্কিত হয়ে তখন মাথা লুকিয়ে রেখেছিল, যেন পরবর্তী বীভৎসতা চোখে দেখতে না হয়। চৈতন্য ফিরে আসতেই থরথর করে কাঁপতে লাগল উদয়। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারলে কিছু একটা উপায় খুঁজে বের করতে পারবে। তাই যতটা সম্ভব নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে উদয়। এদিকে ছোট্ট খোঁয়াড়টাতে বসে থাকতে থাকতে উদয় হাঁসফাঁস করতে লাগল। তার ওপর খোঁয়াড়টা একেবারেই নিচু, দাঁড়ালে মাথা ঠেকে যায় ছাউনির সঙ্গে। যন্ত্রণাদায়ক এই খোঁয়াড় থেকে পালিয়ে যাওয়ারও উপায় নেই। আশপাশেই রয়েছে নরখাদকদের আনাগোনা। তার মানে আমৃত্যু এখানেই বন্দি থাকতে হবে। দ্বীপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আনাগোনা থাকলে মুক্তির সম্ভাবনা ছিল; এখন তা নেই। অলৌকিক কিছু ঘটলেই তবে যদি মুক্তি মিলে, না হলে কুড়ি ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে নরখাদকদের পেটে চলে যেতে হব। এমতাবস্থায় কী করণীয় আছে, তা মাথায় ঢুকছে না উদয় ঘোষালের। মাথাটা শুধু চক্কর মারছে। মনে হচ্ছে মাথাটা হেলে পড়ে যাবে; ধরে রাখতে পারছে না আর। শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। সেই ব্যবস্থাও নেই খোঁয়াড়ে। মেঝেতে কাঁকর আর প্রবালের টুকরো বিছানো। বালি বিছানো থাকলে শুয়ে পড়ত উদয়। এখন মেঝেতে শোয়ার চেষ্টা করলে শরীর কেটে ফালা ফালা হয়ে যাবে। অনেকটা ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ প্রবাদের মতো। তাই চুপচাপ বসে রইল উদয়। এক ফাঁকে শুধু মাথা তুলে দেখল খোঁয়াড় কতটা শক্তপোক্ত। খোঁয়াড়ের দরজা বাইরে থেকে বেঁধে দিলে বেড়া সরিয়ে পালিয়ে যেতে পারবে কি না সেটাও পর্যবেক্ষণ করছে সে।

উদয় চিন্তিত। এরই মধ্যে সে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সংকেত পাচ্ছে বারবার। কী করবে এমতাবস্থায় সেটাও বুঝতে পারছে না। খোঁয়াড়ের ভেতরে কিছু একটা করে ফেললে বেঁচে থাকা অবধি দুর্গন্ধময় বিশ্রী পরিবেশে মধ্যে থাকতে হবে। বিষয়টা চিন্তা করে বাইরের পরিস্থিতি দেখার চেষ্টায় পাতার ছাউনির ফাঁকে চোখ রাখল উদয়। বাইরের দিকে দৃষ্টি যেতেই হতবাক হয়ে গেল সে। আশপাশে কেউ নেই। এমনকি খোঁয়াড়ের দরজার সামনেও কেউ নেই। শুধু দরজাটা মোটাসোটা একখণ্ড লতা দিয়ে বেঁধে রাখা আছে। ভেতর থেকে লতা ধরে টানাটানি করলে বাঁধটা খুলে যাবে। এমন অরক্ষিত খোঁয়াড় দেখে উদয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল, হাসি পেল জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণেও। বুঝতে পারছে না কেমন ধরনের বন্দিখানায় আছে সে। নরখাদকেরা কী এতই বোকাসোকা যে, ওকে খোঁয়াড়ে একাকী ফেলে রেখে চলে যাবে। এটা আবার কোন ধরনের ফাঁদ বুঝতে পারছে না উদয়। ভয় পাচ্ছে সে, খোঁয়াড়ের ভেতর থেকে মাথা বের করলেই যদি কেউ তীর ছুড়ে গেঁথে ফেলে, তাহলে তো কুড়ি ঘণ্টার আগেই সব শেষ হয়ে যাবে। বোনাস সময়টাও ভোগ করতে পারবে না। উদয়ের বিশ্বাস নরখাদকেরা দূরে কোথাও লুকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে দূর থেকে ওরা উদয়ের গতিবিধি লক্ষ্য করছে। যদিও বিষয়টা নিশ্চিত নয় সে। তাই সবকিছু ঠাণ্ডা মাথায় মোকাবিলা করার পরিকল্পনা করছে।

উদয় ঘোষাল খোঁয়াড়ের ফাঁকফোকর দিয়ে বার কয়েক বাইরে তাকাল। কাউকে দেখেনি সে। তার মানে পালিয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে। যেভাবে হোক পালিয়ে যেতেই হবে। কিন্তু পালিয়ে যাবেই বা কোথায়। দ্বীপের চারপাশ সমুদ্র বেষ্টিত, মধ্যখানে পাহাড় আর বন-জঙ্গল। কতদূরই বা পালিয়ে যেতে পারবে। সাত-পাঁচ ভাবতেই মাথাটা এলোমেলো হয়ে এলো উদয়ের। ভাবছে যত বাধা বিপত্তিই হোক তাকে পালাতেই হবে। এদিকের জঙ্গল তত ঘন নয়, একদৌড়ে জঙ্গলে প্রবেশ করতে পারলেই পালিয়ে থাকতে পারবে। খোঁয়াড়ে বন্দি থাকলে মৃত্যু অনিবার্য, তারচেয়ে পালানোই ভালো। ধরা পড়লেও মরতে হবে, খোঁয়াড়ে থাকলেও পরিণতি একই। সুতরাং ঝুঁকি নিতেই হবে তাকে। ভাগ্যে যা আছে, তাই-ই ঘটবে।

ইতোমধ্যে বিকেল হয়ে আসছে। রাত পর্যন্ত খোঁয়াড়ে অপেক্ষা করবে কি না সেটা নিয়েই চিন্তিত উদয়। রাতে পালালে বিপদ আরও বেড়ে যেতে পারে, কারণ রাতের জঙ্গল বিভীষিকাময়। খোঁয়াড় থেকে পালানোর সঙ্গে সঙ্গে হিংস্র জন্তুরা খুবলে খুবলে খাবে। বনে যে কি ধরনের হিংস্র জীবজন্তুর বিচরণ রয়েছে তা অবশ্য ওর জানা নেই। তবে অনুমান করছে, বনে ভয়ংকর প্রাণীর বিচরণ রয়েছে। আর এই বনটা দেখতেও অন্যসব বনের মতো নয়; অনেকটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন। চোখের দেখায়ও কেমন জানি ভংয়কর লাগছে। উঁচু উঁচু গাছ-গাছালি আর ঘন জঙ্গলের বিস্তৃতির কারণে বনটাকে আরও রহস্যময় করে তুলছে। কাজেই রাতে পালানোর চিন্তাভাবনা বাদ, যা করার বিকেলের মধ্যেই করতে হবে। রাতের আঁধার ঘনিয়ে এলে বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না।

অযথা সময় নষ্ট না করে উদয় ঘোষাল কয়েকটা বাঁশের খুঁটি উপড়ে ফেলল। বেড়ার মতো বানানো বাঁশের খুঁটিগুলো এতটাই নড়বড়ে যা দেখে দ্বিতীয়বারের মতো হতবাক হলো উদয়। এটা কীভাবে বন্দিশালা হতে পারে, সেটা ওর মাথায়ই ঢুকছে না। তবে বুঝতে পেরেছে ওরা স্থূল বুদ্ধির মানুষ। বুদ্ধিশুদ্ধি তেমন একটা নেই। বুদ্ধি থাকলে অন্তত নরমাংস খাওয়ার লোভ করত না, অথবা শিকার একাকী ফেলে রেখে যেত না।

একটা বাঁশের খুঁটি হাতে নিলো উদয়। খুঁটিটাই এখন একমাত্র হাতিয়ার। তীর না ছুড়লে দু-চারটাকে পিটিয়ে জখম করা কোনো ব্যাপারই না। বাঁশের খুঁটি দিয়ে আগেও সে মারপিট করেছে। কয়েক বছর আগের ঘটনা; তখন নিজের জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনায় থাকত উদয় ঘোষাল। খুব ডানপিটে ছিল। কথায় কথায় মারামারি হানাহানি এসব করেই গ্রামবাসীকে আতঙ্কে রাখত। সুযোগ পেলে গ্রামের বাইরেও মারামারি করে বেড়াত। একবার পাশের গ্রামের অভয় দেবকে লাঠিপেটা করে হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে দিয়েছিল। অভয় দেবের অপরাধ তেমন গুরুতর নয়। ও উদয়ের গ্রামের একটা মেয়েকে উক্ত্যক্ত করেছিল। এই সামান্য অপরাধেই অভয় দেবকে কড়া শাস্তি দিয়েছিল উদয় ঘোষাল।

অভয় দেব বয়সে ওর সিনিয়র ছিল, কমসে কম ৪-৫ বছরের বড়। উদয়ের বয়স তখন কুড়ি পেরিয়েছে সবে। কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। আর অভয় দেব শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে রাজনীতির সঙ্গে গাঁট বেঁধেছে। ফলে কিছু পাওয়ার-টাওয়ারও আছে অভয় দেবের। কাজেই মার খেয়ে হজম করার মতো ছেলে নয় সে। প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছিল অভয় দেব। তাছাড়া বিষয়টা ওর প্রেস্টিজ ইস্যুতে দাঁড়িয়েছিল। প্রতিশোধ না নিলে এলাকায় মান থাকবে না। তাই এলাকার কয়েকটা গুন্ডা-মাস্তানের সঙ্গে চুক্তি করল উদয়কে ঠেঙ্গাতে। গোপন মাধ্যমে সেকথা জানতেও পেরেছিল উদয়। খবরটা শোনার পর আর ঘরে থাকার সাহস হয়নি ওর। কারণ যে মাস্তানদের অভয় দেব ভাড়া করেছে, ওদের পেছনের রেকর্ড ভয়াবহ। খুন-খারাবির সঙ্গেও জড়িত ওরা। ওদের হাতে ধরা পড়লে মেরে ফেলাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। উদয় ঘোষাল একে ওকে ধরেও ব্যাপারটার সমঝোতা করতে পারেনি। ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে লাগল। অবস্থা বেগতিক দেখে উদয়ের বাবা ছেলেকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেন ওর মামার কাছে। মামা ওকে একটা কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বাউণ্ডুলে স্বভাবের কারণে আর পড়ালেখায় মনোযোগী হতে পারেনি। পরে লেখাপড়া শিকেয় তুলে গানের দিকে ঝুঁকে পড়ল উদয় ঘোষাল। ওর গানের গলাও মোটামুটি ভালো। অল্প সময়ের মধ্যে আশেপাশে নামডাকও ছড়িয়ে পড়ল। ধীরে ধীরে বাড়ল পরিচিতিও। মস্ত বড় শিল্পী না হলেও কলকাতার তরুণ-তরুণীরা ওর স্টেজশোতে ভিড় জমাতে লাগল। তাতে অডিও ব্যবসায়ীদেরও নজর কাড়ল।

এদিকে অভয় দেবও রাজনীতিতে ভালো করতে পারেনি। গ্রাম ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছে কলকাতায়। শহরে এসে একটা ফাস্ট ফুডের দোকান দিয়েছিল। কিন্তু বেচারি ফাস্ট ফুডের ব্যবসায়ও সফল হতে পারেনি। পরিশেষে ঝুঁকলো অডিও ব্যবসার দিকে। গানের এলবাম বানিয়ে বাজারে ছাড়তে লাগল। এই ব্যবসাটা তাকে মানিয়েছেও। দুই পয়সা কামাইও করতে পারছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, সেসময় গানের এলবামের রমরমা ব্যবসা ছিল। বাণিজ্যিকভাবে সফল হতেই এবার সিঙ্গারদের পেছন পেছন ছুটোছুটি করতে লাগল অভয় দেব। বিশেষ করে উঠতি সিঙ্গারদের খুঁজে বের করছে সে। ওই সময় কেউ একজন জানিয়েছিল, উদয় ঘোষালের জনপ্রিয়তার কথা। তাই ব্যবসায়িক স্বার্থে অভয় দেব একদিন উদয় ঘোষালের সঙ্গে দেখা করতে এলো ওর বাসায়। তখনো অভয় দেব জানত না কোন উদয়ের কাছে এসেছে সে। দুজনের দেখা হতেই পরিশেষে সিনেমার মতো অবস্থা হলো। তারপর উদয় ওর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল। অভয় দেব ওকে ক্ষমা করে দিল। অতীত ভুলে উদয় ঘোষালকে কাছে টেনে নিয়ে ওর প্রথম গানের এলবাম বের করল অভয় দেব। অতীত সেই স্মৃতিটা মনে হতেই উদয়ের মনে সাহস এলো। মরতে হলে লড়াই করে মরবে। ঘুরে দাঁড়াতে পারলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আছে। এই তো বাঁশের লাঠি; যা দিয়ে একবার মারপিট করে হিরো হয়েছিল সে।

উদয়ের প্রস্তুতি শেষ। খোঁয়াড় থেকে বেরিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে বনের দিকে যাবে এমনিই পরিকল্পনা করছে। দৌড়ে যাবে না, একদম স্বাভাবিকভাবে হেঁটে যাবে। খোঁয়াড় থেকে বন তেমন দূরত্বের নয়। হিম্মত রেখে হেঁটে যাবে, ভাগ্যে যা থাকে তাই-ই হবে। বেরুনোর আগে আরেকটু ভালোভাবে খোঁজখবর নিতে হবে। নরখাদকেরা কোথাও লুকিয়ে আছে কি না, সেটা নিশ্চিত হয়েই তবে বেরুবে।

শেষ বিকেল। খোঁয়াড়ের আশপাশ নীরব নিস্তব্ধ। দ্বীপবাসীদের কেউ-ই আশপাশে নেই। সেই এক ভৌতিক পরিবেশ। কোথায় গেল সব! তবে কি নরমাংসের স্বাদ গ্রহণ করে সবাই বেহুঁশ হয়ে পড়েছে; না কি ওরা দ্বীপের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে নতুন শিকারের ধান্দায়? সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে এখুনিই পালানোর উপযুক্ত সময়।

খোঁয়াড় থেকে বেরুল উদয় ঘোষাল। চারদিকে নজর রেখে ধীরে ধীরে বনের উদ্দেশে পা বাড়াল। সামনে কয়েকটা ডেরা-কুটির, ওখানে কেউ আছে কি না বুঝতে পারছে না সে। কয়েক কদম এগোতেই থমকে দাঁড়াল। পেছন থেকে ঘোৎ ঘোৎ আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। যা বোঝার বুঝে ফেলেছে এবার। পেছনে না তাকিয়ে সামনে ভোঁ-দৌড়। অমনি পেছন থেকে সাঁ সাঁ করে তীরের ফলা ছুটে আসতে লাগল ওর দিকে। শরীরের পাশ কেটে কয়েকটা তীরের ফলা রকেট গতিতে সামনে চলে গেল। এমতাবস্থায় দাঁড়ানোর সুযোগ নেই, সুযোগ নেই পেছনে ফিরে তাকানেরও।

প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে উদয়। এই দৌড়ে ওকে জিততেই হবে। কোনক্রমে পা ফসকে পড়লে অথবা গতি কমে গেলে এখুনি প্রাণ হারাতে হবে। সে ভালো করেই জানে, এই দৌড় হচ্ছে ওর জীবনের শেষ দৌড়, যদি পরাজিত হয়; বেঁচে থাকতে পারলে তো কথাই নেই; আনন্দ আর আনন্দ।

দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে উঠছে উদয়। আর পারছে না। বুকটা হাঁপরের মতো ওঠানামা করছে। আরেকটু এগোতে হবে, সামনেই বন। বনে ঢুকতে পারলে পালিয়ে থাকা কিছুটা সহজ হবে। বিশাল বন, হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেলে বেঁচে থাকতে পারবে। ধরা পরলে ভিন্ন কথা, সেই চিন্তা পরে হবে।

তীরের বাণ কমে আসছে। কারণ ধনুকে ফলা গেঁথে পুনরায় তীর ছুঁড়তে কিছুটা সময় লাগে। তাছাড়া একেকজনের কাছে খুব বেশি তীরের ফলা থাকে না। একেকটা তীরের ফলা বানাতে অনেক পরিশ্রম করতে হয় নরখাদকদের। পাথর ঘঁষে পাতলা করে তীরের ফলা বানাতে হয়। তীরের ফলা সংকটের কারণে ছুড়ে দেওয়া ফলাটা কুড়িয়ে নিতে হয় আবার। তার ওপর পুনরায় ধনুকে গেঁথে পজিশন নিতে নিতে খানিকটা সময় অপচয় হয়ে যায়। ততক্ষণে শত্রু বা শিকার পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। মূলত নরখাদকদের এই বিলম্বের কারণে দৌড়ে এগিয়ে থাকার সুযোগ হলো উদয়ের। আর এই সুযোগে সে প্রাণপণে দৌড়ে বনের ভেতরে ঢুকে পড়ল।

বনে ঢুকে খানিকটা সামনে অগ্রসর হয়ে জঙ্গলের লুকিয়ে পড়ল উদয়। এখানকার জঙ্গল অনেক ঘন, খুঁজে বের করতেও সময় লাগবে। ঘন জঙ্গলের কারণে এই বনে দৌড়ানোও সম্ভব নয়, ধীরে ধীরে হাঁটতে হয়। দৌড়াতে গেলে বিপদ অনিবার্য, জঙ্গল নড়ে উঠলে অবস্থান চিহ্নিত হয়ে যাবে। তাই এই মুহূর্তে চুপচাপ বসে থাকাই উত্তম। উদয়ের নজর এখন বনের বাইরের দিকে। শত্রুর অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা করছে সে। শত্রু কতদূর এগিয়েছে, সেটা দেখতে জঙ্গলের ফাঁকফোকর দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। মিনিট খানেক তাকাতেই দেখল ৪-৫ জনের একটা দল বনের দিকে এগিয়ে আসছে। উদয় ঘোষাল এবার নিশ্চিত সে ধরা পড়তে যাচ্ছে। কারণ জঙ্গলে দৌড়ানো যাবে না, পথঘাটও জানা নেই। দৌড়ানোর চেষ্টা করলেই ধরা পড়ে যাবে। আর এই মুহূর্তে ধরা পড়লে আগামীকালের জন্য অপেক্ষা করবে না ওরা। তীর ছুড়ে বনেই গেঁথে ফেলবে; এখানেই রাতের ভোজ সারবে নরখাদকেরা। চলবে...

মানুষখেকোর দ্বীপ। পর্ব-১
মানুষখেকোর দ্বীপ। পর্ব-২
মানুষখেকোর দ্বীপ। পর্ব-৩
মানুষখেকোর দ্বীপ। পর্ব-৪
মানুষখেকোর দ্বীপ। পর্ব-৫

মানুষখেকোর দ্বীপ | পর্ব-৬
মানুষখেকোর দ্বীপ | পর্ব-৭
মানুষখেকোর দ্বীপ | পর্ব-৮
মানুষখেকোর দ্বীপ | পর্ব-৯

আলম শাইন: কথাসাহিত্যিক, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক কলামিস্ট

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৪
এমজেএফ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।