সিরাজগঞ্জ: শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে অবদান রাখা অনেক গুণীজনের জন্মভূমি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ ইউনিয়ন। একুশে পদকসহ একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন এ ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন কৃতি সন্তান।
চলতি বছর ২৪ জানুয়ারি ঘোষিত ২০২৩ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে সলপের আরও দুই কৃতি সন্তানের নাম এসেছে। তারা হলেন, প্রবন্ধ/গবেষণায় জুলফিকার মতিন চৌধুরী ও আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনী/ মুক্তগদ্য শাখায় কথাশিল্পী ইসহাক খান। এ নিয়ে সলপ ইউনিয়নের পাঁচ কৃতি সন্তানের ঝুলিতে এলো বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার।
জানা যায়, সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখায় সলপ ইউনিয়নের কানসোনা গ্রামের মলয় ভৌমিক ২০১৭ সালে, একই ইউনিয়নের রামগাঁতী গ্রামের ইমতিয়ার শামীম চৌধুরী ২০২০ সালে এবং ইখতিয়ার চৌধুরী ২০২২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ২০২৩ সালে একই পুরস্কার পান রামগাঁতী গ্রামের জুলফিকার মতিন চৌধুরী ও কানসোনা গ্রামের ইসহাক খান।
এদের মধ্যে জুলফিকার মতিন চৌধুরী, ইখতিয়ার চৌধুরী ও ইমতিয়ার শামীম চৌধুরী আপন তিন ভাই। তারা সলপ ইউনিয়নের রামগাঁতী গ্রামের চৌধুরী পরিবারের সন্তান। মলয় ভৌমিক ও ইসহাক খান একই ইউনিয়নের কানসোনা গ্রামের সন্তান।
মলয় ভৌমিক:
১৯৫৬ সালের ১ মে কানসোনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা শিবেন্দ্রনাথ ভৌমিক ছিলেন কলেজ অধ্যক্ষ। মলয় ভৌমিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগ হতে বি.কম. ও এম.কম. সম্পন্ন করে ১৯৮২ সালে শিক্ষকতা শুরু করেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া ১৯৯০ ও ১৯৯৬-এর গণআন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। নাটকের মানুষ হিসেবে বেশি পরিচিত হলেও সাংবাদিকতাও করেছেন দীর্ঘদিন। তিনি এখন পর্যন্ত ৩৫টির বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন। তার রচিত টিভি নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আট প্রহরের গল্প, ক্ষরণ, ফেরা ইত্যাদি।
জুলফিকার মতিন:
১৯৪৬ সালে ২৪ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক। প্রবন্ধ/গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০২৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন।
ইখতিয়ার চৌধুরী:
১৯৫৪ সালের ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন ইখতিয়ার চৌধুরী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। ইখতিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি করতেন এবং কয়েকটি দেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি অর্জনে ইউনেসকো সদর দপ্তর প্যারিসে বাংলাদেশের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি থাকাকালীন কূটনৈতিক লড়াইয়ের ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে অবদান রাখেন। উপন্যাস, গল্প, ভ্রমণকাহিনিসহ তার প্রকাশিত মোট গ্রন্থের সংখ্যা ৩৯টি। তিনি ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর সৈনিক।
ইমতিয়ার শামীম:
১৯৬৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রথম উপন্যাস ‘ডানাকাটা হিমের ভেতর’। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত হন। ইমতিয়ার শামীমের গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও শিশুতোষ রচনা মিলে মোট ৪৪টি গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে।
ইসহাক খান:
১৯৫৩ সালের ৭ আগস্ট কানসোনা গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন কথাসাহিত্যিক, গল্পকার ও নাট্যকার ইসহাক খান। তিনি গাঁয়ের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সলপ উচ্চ বিদ্যালয়, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পড়াশোনা করেন। দশম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন তার লেখা নাটক ‘ঢেউয়ের দোলা’ মঞ্চস্থ হয়। ১৯৭১ সালে অস্ত্রহাতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে অস্ত্র রেখে হাতে কলম তুলে নেন, শুরু হয় তার লেখালেখি। যোগ দেন সাংবাদিকতায়। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে ইসহাক খানের লেখা প্রথম প্রকাশ হয় একটি কলেজ ম্যাগাজিনে। দশ বছর পর ১৯৮২ সালে প্রথম গ্রন্থ প্রকাশ হয় “নগ্ন নাট মন্দির”। বর্তমানে তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৫।
এছাড়া সলপ ইউনিয়নের সোনতলা গ্রামের আরেক কৃতি সন্তান প্রয়াত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানী ২০১৫ সালে একুশে পদক লাভ করেন। তার দুই ভাই ফতেহ লোহানী ও ফজলে লোহানীও ছিলেন দেশ বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এ ইউনিয়নের সোনতলা গ্রামের কৃতি সন্তান।
সলপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী শওকাত ওসমান বলেন, আমরা গর্বিত। আমাদের ইউনিয়নের পাঁচ সন্তান বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এটা আমাদের কাছে বিরাট পাওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৪
এসআই