বাংলাদেশের চিত্রকলায় তিন মাস্টার শিল্পী নিজ নিজ কৃতিত্বে ভাস্বর হয়ে আছেন। এরা হলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পটুয়া কামরুল হাসান ও শিল্পী এস এম সুলতান।
প্রদর্শনী দেখতে জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনী গ্যালারিতে প্রবেশ করা মাত্রই মনে হয়, আমরা যেন এসে পড়েছি এ দেশের মাটিগন্ধ ছড়ানো কল্পনা-বাস্তবতার মিলনে আঁকা তুলির আঁচড়ের জগতে। এখানে স্থান পেয়েছে তিন শিল্পীর ৮২টি বাছাইকৃত ছবি। ছবিগুলিতে শিল্পীরা বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করেছেন, যেমন রেখাচিত্র, ছাপচিত্র, জলচিত্র ও তেলচিত্র।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের মোট ৩৫টি ছবি এখানে স্থান পেয়েছে। ছবিগুলিতে চল্লিশের দশক থেকে শুরু করে সত্তুর দশক পর্যন্ত এ দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ফুটে উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে তার বিখ্যাত দুর্ভিক্ষ নিয়ে আঁকা ‘মন্বন্তর’ সিরিজের ছবিগুলিও। রয়েছে তার তুলির আঁচড়ে উঠে আসা এ দেশের মানুষের সংগ্রামী চেতনা, নারীর সৌন্দর্য, গ্রামীণ জীবনসহ বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়।
কামরুল হাসানের যে ছবিগুলি এ প্রদর্শনীতে রয়েছে, তার মধ্যে বেশ কিছু দুর্লভ ছবিও রয়েছে যা আগে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। কামরুল হাসানের ছবিগুলি পঞ্চাশের দশক থেকে আশির দশকের মধ্যে আঁকা। তার প্রদর্শিত ছবির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আঁকা ছবিগুলো। এসব ছবিতে উঠে এসেছে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের বর্বর নির্যাতনের চিত্র।
শিল্পী এস এম সুলতানের ছবি মানেই বিশাল ক্যানভাসে পেশিবহুল মানুষের শরীর। সমালোচকদের মতে, বাঙালি জাতিসত্তার গভীরতম অন্তরভূমিতে যে অমিত শক্তি সুপ্ত ছিল হাজার বছর ধরে, তারই নান্দনিক-শৈল্পিক প্রকাশ ঘটেছে সুলতানের চিত্রকলায়। তাই দেখা যায় সুলতানের কৃষক হাড়জিরজিরে-পর্যুদস্ত নয়, বরং পেশিবহুল, সাহসে বলীয়ান ও সংগ্রামী। এ প্রদর্শনীতে সুলতানের আঁকা পেশিবহুল কৃষকর পাশাপাশি পল্লিজীবন উঠে এসেছে।
সব মিলিয়ে এ প্রদর্শনী বাংলাদেশের সেরা তিন শিল্পীর বিপুল সৃজনশীল কর্মকান্ডকেই দর্শকদের মনের মধ্যে ছড়িয়ে দেবে। প্রদর্শনী চলছে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। শেষ হবে ৬ নভেম্বর ।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় : ২২০১, অক্টোবর ১৯, ২০১০