[আজ ২৫ অক্টোবর। তার ১২৯তম জন্মবার্ষিকী।
আসল ঘটনা হলো এই সাক্ষাৎকারটি পুরোপুরি কাল্পনিক। কিন্তু মজার ব্যাপার, পিকাসোর জবানিতে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সবই সত্য। বিষয়টি হয়তো এমন যে, এই সাক্ষাৎকারের লেখক পিকাসো সম্পর্কে কিছু জানাতে চান পাঠককে, কিন্তু গৎবাঁধা জীবনী-বর্ণনার পথে যেতে চাননি তিনি। বরং এমন এক আয়োজন করলেন, যাতে পাঠককে একটু মজাও দেওয়া যায়, আবার তথ্যও জানানো যায়। এটি লিখেছেন থিয়া দেলাভোলত (Thea Delavault)। এটি নেওয়া হয়েছে tertuliaandaluza.com থেকে। ]
জনাব, আপনি কবে কোথায় জন্ম নিয়েছেন?
হা হা হা, বুঝতে পারছি আপনার শিল্পের ইতিহাসজ্ঞান খুব একটা ভালো নয়। যা হোক, আমি জন্মেছি স্পেনের মালাগায়। ১৮৮১ সালে আজকের দিনে। কী, আমাকে বেশ বুড়ো মনে হচ্ছে? হোক, তবে আমি যে এখনো বেঁচে আছি তা তো বেশ বুঝতে পারছেন? তবে জানেন কী, আমার এমন অনুভূতি হয় যে, আমি যেন গতকালও মঁতমার্তেতে আমার স্টুডিওতে বসে ছবি আঁকছিলাম। পেছনে ফিরলে আমি আমার নারীদের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। ... বেদনায় ভারাক্রান্ত তাদের মুখ। মুখে হাসিমাখা নারীদের আমার বেশ অপছন্দ। আমি তাদের বিষাদময় মুখচ্ছবি দেখতে ভালোবাসি।
আপনি কি নিজেকে আন্দালুসীয় শিল্পী হিসেবে গণ্য করেন?
আমার বন্ধু ও সুকুমার কলাবিদ্যার দেবী গারর্ট্রুড স্টাইন একসময় বলেছিলেন, ‘উনিশ শতকের শিল্পকলা ফ্রান্সে এবং ফরাসিদের দ্বারাই সম্পাদিত হয়েছে। এর বাইরে শিল্পকলার অস্তিত্ব নেই। বিংশ শতাব্দীতে ফ্রান্সে শিল্পর্চ্চা হয়েছে তবে তা করেছেন স্পেনিশরা। ’ যদিও আমি আমার জীবনের অধিকাংশ সময় প্যারিসেই কাটিয়েছি, আমি সেখানে আন্দালুসীয় শিল্পী হিসেবেই গণ্য হতাম। যদিও আমার কিউবিজম ফরাসি শিল্প-আন্দোলনের অংশ তবু তা স্পেনিশ হিসেবেই গণ্য করা হয়। এই ধারার ছবিগুলো আমি স্পেন বেড়িয়ে আসার পর এঁকেছিলাম। আমি ভূ-দৃশ্য দেখে বেশ অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।
আপনার পেইন্টিংগুলো দেখে মনে হয় আপনি ষাঁড়ের লড়াই, সাগর আর বাদামি চুল ও নীলাঞ্জনা নারীদের দ্বারা বেশ অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন...।
আমি যখন মারি থেরেসের সঙ্গে ছিলাম তখন বেলাভূমির ছবি আঁকতাম। এসব বেলাভূমি দক্ষিণ ফ্রান্সে অবস্থিত। আমরা তখন এই অঞ্চলে ছিলাম। আমার মনে হতো আমি যেন স্পেনেই আছি। এই বেলাভূমিগুলো আমার ছেলেবেলার স্মৃতি মনে করিয়ে দিত। ছেলেবেলায় ষাঁড়ের লড়াইয়ের কথা মনে পড়ত। যেহেতু স্পেনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না, তাই দক্ষিণ ফ্রান্সে গিয়ে ফরাসি ষাঁড়ের লড়াই দেখতাম। মনে পড়ে, মালাগায় থাকতে খুব ছোটবেলায় পিতামহের হাত ধরে ষাঁড়ের লড়াই দেখতে যেতাম। ষাঁড়গুলোকে ভীষণ ভালো লাগতো।
সুখ্যাতি বিষয়ে আপনি কী ভাবেন? একসময় আপনি বলেছিলেন, ‘লোকেরা সবসময় দুর্ভাগ্য, যেমন, ক্ষুধা, কষ্টকে ভুল বোঝে। আসলে সুখ্যাতিই সবচে বড় দুর্ভাগ্য। এজন্যেই প্রভু শিল্পীদের র্ভৎসনা করেন’।
বেঁচেছিলাম যখন তখন তো অনেক কথাই বলেছি। যা হোক, আমি বিশ্বাস করি, সুখ্যাতিকে সবসময় এড়িয়ে চলাই উচিত। যদি আপনি একে গ্রহণ করেন তাহলে সে আপনাকে গ্রাস করবে। এটি একটি ফাঁদ। তাই আমি সারাজীবন একে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছিলাম।
ভাগ্য সম্পর্কে আপনার কী ভাবনা?
ভাগ্য! (গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে) আমি ভাগ্যকে মেনে নিয়েছিলাম। আবার ভাগ্যবিড়ম্বিতও ছিলাম না। জীবনের দু-একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া আমি সিদ্ধান্ত তৈরি করতে পারতাম না। এতে সময় নষ্ট হয়। আমি সময় নষ্ট করতে পছন্দ করতাম না। আমি কাজ করে যেতাম। সারাক্ষণ কাজ করে যেতাম।
আচ্ছা, নারীদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল?
নারীরা আমাকে বেশ অনুপ্রাণিত করত। প্রথম যে নারী আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, তিনি ছিলেন আমার মা। বস্তুত, আমি মায়ের নামের শেষাংশ থেকে পিকাসো শব্দটি নিয়েছি। এরপর অনুপ্রাণিত করেছিলেন আমার বোনেরা। যেমন, ১৮৯৬ সালে আঁকা আমার ‘দ্য ফাস্ট কমিউনিয়ন’ ছবিটির মেয়েটি আমার বোন লোলা।
আপনার স্ত্রী এবং প্রেমিকাদের কথা বলবেন কি?
আমার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ওলগা। রুশ ব্যালে শিল্পী ছিলেন তিনি। ১৯২৭ সালের গ্রীষ্মে মারি থেরেসে ওয়ালটারকে আমার প্রেমিকা হিসেবে গ্রহণ করি। তিনি ছিলেন আমার ছেলে পাওলোর সেবিকা। আমি আসলে তার জন্য কিছু করতে পারিনি। ‘উইম্যান উইথ ফ্লাওয়ার’ ছবিটি তাকে নিয়ে এঁকেছিলাম। আমাদের একটি মেয়ে ছিল। তার নাম ছিল মায়া।
আপনার অনেক পেইন্টিংয়ে দোরা মারের উপস্থিতি দেখা যায়।
দোরা...দোরা অনেক উন্মত্ত ছিল। তাই তাকে নিয়ে যেসব ছবি এঁকেছি সেগুলোতেও এক ধরনের উন্মত্ততা ছিল। ২০০৬ সালে সোথবিতে আমার ‘দোরা মার অ’শা’ পেইন্টিংটি ৯৫ মিলিয়ন ডলারের বেশিতে বিক্রি হয়েছিল। নিলামে বিক্রি হওয়া এই ছবিটি পৃথিবীর দ্বিতীয় ব্যয়বহুল ছবি। দোরা মারকে নিয়ে আরেকটি বিখ্যাত পেইন্টিং এখন এফবিআইয়ের ন্যাশনাল স্টোলেন আর্ট ফাইলে রয়েছে। ১৯৯৯ সালে একটি সৌদি প্রমোদতরী থেকে এটা চুরি হয়েছিল।
ফ্রাঁসোয়া জিলো সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
হ্যাঁ, একমাত্র তিনিই আমাকে চিরদিনের জন্যে পরিত্যাগ করেছিলেন। জানেন তো, তার সঙ্গে দেখা হবার আগেই আমি তার ছবি এঁকেছিলাম। অনেকবার আমি এটি এঁকেছিলাম। প্রথম দেখেই আমি তাকে চিনতে পেরেছিলাম। তিনি আমার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন আর আমাদের দুটি সন্তান ছিল। ক্লদ ও পালোমা। আমি পালোমার ছবিও এঁকেছিলাম।
আপনি কবে এবং কোথায় মারা যান?
আমি ফ্রান্সে মারা যাই ১৯৭৩ সালে ৯১ বছর বয়সে। স্পেনে তখন ফ্রাঙ্কোর দুঃশাসন চলছিল। সে ক্ষমতায় আসার পর স্পেন শিল্পীদের জন্যে বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। আর প্যারিস হয়ে যায় বিশ্ব চিত্রকলার কেন্দ্রভূমি। আমি মাঝে মাঝে কল্পনা করতাম যে, আমার পেইন্টিংগুলো ট্রাক ভরে স্পেনে নিয়ে যাই। কিন্তু তা পারিনি। হারামজাদা আমার মৃত্যুর পর দু বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিল।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৮৪০, অক্টোবর ২৫, ২০১০