জাতিগতভাবে আধিপত্য বিস্তারের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নিজের ভাষাকে অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। এজন্যই দেখা গেছে, যখনই যে জাতি অন্য জাতির ওপর আগ্রাসন চালিয়েছে, সঙ্গে সঙ্গেই সে তার নিজের ভাষাকেও চাপিয়ে দিয়েছে বা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে।
কিন্তু এই ইংরেজি ভাষাও যে একসময় বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে, সম্প্রতি এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ ভাষাবিদ নিকোলাস অসলার। নিকোলাস অসলার তার সাম্প্রতিক বই ‘দ্য লাস্ট লিংগুয়া ফ্রাংকা : ইংলিশ আনটিল দ্য রিটার্ন অব বাবেল’ বইতে বলেছেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ইংরেজির যত আধিপত্যই থাকুক না কেন, লাতিন বা সংস্কৃত ভাষার মতো এ ভাষাও একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
অসলার তার বইতে দেখিয়েছেন, বিশ্ব ইতিহাসের বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে ইংরেজি ভাষা ‘লিংগুয়া ফ্রাংকা’ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। লিংগুয়া ফ্রাংকা হচ্ছে এমন একটি ভাষা, যা দিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে, কিন্তু সেটি আদৌ তাদের মাতৃভাষা নয়। একটা সময় ছিল যখন ইংরেজির মতোই বহু মানুষের জন্য লিংগুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ব্যবহৃত হতো লাতিন, ফারসি বা সংস্কৃতের মতো ভাষা। কিন্তু সেসব ভাষা এখন বলা চলে একেবারেই আধিপত্যহীন, কোনো কোনোটা তো বিলুপ্তপ্রায়।
লিংগুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ফারসির বিলুপ্ত হতে সময় লেগেছে প্রায় ৭০০ বছর। আবার লাতিন টিকে ছিল এক হাজার বছরের মতো। এসব ভাষার তুলনায় ইংরেজি অনেক বেশি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যবহৃত হলেও এ ভাষাটিও একদিন হারিয়ে যাবে বলে ধারণা অসলারের। অসলারের মতে, তিনি ইংরেজির টিকে থাকার পক্ষে কোনও বিশেষ কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না।
‘দ্য লাস্ট লিংগুয়া ফ্রাংকা : ইংলিশ আনটিল দ্য রিটার্ন অব বাবেল’ বইটিতে অসলার ইংরেজি কেন বিলুপ্ত হবে তার বহু কারণ বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, ৪০০ বছর ধরে ইংরেজি ভাষা সারা বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করে থাকলেও ফ্রান্স, ব্রাজিল, রাশিয়া বা চীনের মত দেশগুলোতে এ ভাষার তেমন কোনো ভূমিকা নেই। এছাড়া তার মতে, গ্লোবালাইজেশনের ফলে ইংরেজি ভাষার সাথে অন্য ভাষার মিশ্রণে আলাদা এক ভাষার সৃষ্টি হবে, যা হয়ে উঠতে পারে নতুন লিংগুয়া ফ্রাংকা।
অসলার মনে করেন, অনেক প্রাচীন ভাষার মতো মূল ইংরেজি ভাষাও একসময় কেবল ইতিহাসের অংশ হয়েই থাকবে।
সূত্র : গার্ডিয়ান
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১২১৫, নভেম্বর ১০, ২০১০