ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

দ্রোহ উল্লাসে অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৪
দ্রোহ উল্লাসে অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বিপ্লবী শহীদ প্রীতিলতার আত্মাহুতির ৮২তম বর্ষ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘দ্রোহ উল্লাসে অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে সূর্য সেন সঙ্ঘ।



১৯১১ সালের ৫ মে মঙ্গলবার প্রীতিলতার জন্ম। মা প্রতিভা দেবী। বাবার নাম জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার। ছাত্রী হিসেবে তার ছিল ঝলমলে সব রেকর্ড। ১৯২৭ সালে চট্টগ্রামের খাস্তগীর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করেন এবং ভর্তি হন ঢাকার ইডেন কলেজে। ১৯২৯ সালে মেয়েদের মধ্যে প্রথম ও সবার মধ্যে পঞ্চম স্থান অধিকার করে আইএ পাস করেন। কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে বিএ পাস করে তিনি নন্দন কানন বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেছিলেন।

এ পর্যায়ে ব্রিটিশের হাত থেকে দেশমাতৃকাকে মুক্ত করতে যোগ দেন শহীদ বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের অনুশীলন সমিতিতে যোগ দেন।
 
১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর (মতান্তরে ২৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম ইউরোপিয়ান ক্লাবে প্রীতিলতার নেতৃত্বে সাতজন তরুণ ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ইংরেজদের ওপর। সবাই নিরাপদে ফিরে এলেন, ফিরলেন না দলনেতা প্রীতিলতা। পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মদান করলেন তিনি। পরদিন ক্লাবের পাশে পড়ে থাকা প্রীতিলতার মরদেহকে পুলিশ পুরুষ ভেবেছিল। কিন্তু মাথার পাগড়ি খুলে লম্বা চুল দেখে শুধু ব্রিটিশ পুলিশ নয়, গোটা ব্রিটিশ সরকারই নড়েচড়ে উঠেছিল। আলোড়িত হয়েছিল গোটা ভারতবাসী।

বিপ্লবী শহীদ প্রীতিলতার আত্মাহুতির এ ঘটনা স্মরণে সোমবার বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মুক্ত মঞ্চে প্রীতিলতাকে নিবেদিত আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। সঙ্গে ছিল মহীয়সী এই নারীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য পরিবেশনা ও নাটকের প্রদর্শনী।

এ অনুষ্ঠানমালার শুরুতে ছিল ‘বিপ্লবী প্রীতিলতার আদর্শ: বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা। এ বিষয়ে আলোচনা করেন সংস্কৃতি সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, অধ্যাপক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম ও শরীফ শমশির।

আয়োজনটিকে ব্যতিক্রমী ও প্রাণছোঁয়া বলে মন্তব্য করেন রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সন্তান প্রীতিলতা ছিলেন অসাধারণ প্রতিভাময়ী। মেধাবী এই ছাত্রীটি একদিন বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছিলেন। সংগ্রামের অংশ বাদ দিয়ে শুধু তার শিক্ষাজীবন নিয়েও অনেক কথা বলা যায়। আর তাই এদেশে নারীর অগ্রগতি যখন অনিশ্চয়তায় আবর্তিত হয় তখনই প্রীতিলতাকে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক মনে হয়। তাকে ভাবনায় ও আলোচনায় রাখতে হয়। সকল শোষণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে নারীদের প্রীতিলতার আদর্শক অনুসরণ করতে হবে।
 
আফসোস করে তিনি বলেন, আমাদেরই মেয়ে প্রীতিলতার প্রতিকৃতি ভারতে থাকলেও এদেশে কোথাও তার কোনো প্রতিকৃতি নেই। সেই প্রতীক্ষায় আছি, এদেশে অন্তত এই বিপ্লবী নারীর একটি প্রতিকৃতি স্থাপিত হবে।

এরপর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের খোলা চত্ত্বরে রাখা প্রীতিলতার প্রতিকৃতির সামনে প্রদীপ জ্বালেন অতিথিরা।

সবশেষে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন সূর্য সেন সঙ্ঘের প্রধান সমন্বয়ক শাহ ওয়ালিদ আকরাম। আবৃত্তিশিল্পী রফিকুল ইসলাম পাঠ করেন অমিতাভ দাশগুপ্তের কবিতা ‘মনে রেখো’। হাসান আরিফের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় শুভ দাশগুপ্তর কবিতা ‘রাত বেড়েছে’। সমবেত কণ্ঠে ‘ঝড়ের বার্তা শোনো’ শীর্ষক প্রযোজনাটি উপস্থাপন করেন স্বরশ্রুতির বাকশিল্পীরা। সংবৃতার শিল্পীরা পরিবেশন করে ‘রক্তবিন্দু ছুঁয়ে সম্মুখের ইতিহাস’ শিরোনামের আবৃত্তি প্রযোজনা। ছিল জাগো ললিতকলা একাডেমির শিল্পীদের নৃত্য।

বাংলাদেশ সময় : ১৮৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।