ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (১০) || অনুবাদ : আলীম আজিজ

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১৪
টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (১০) || অনুবাদ : আলীম আজিজ অলঙ্করণ: মাহবুবুল হক

এর্নেস্তো সাবাতো (২৪ জুন ১৯১১-৩০ এপ্রিল ২০১১) আর্জেন্টাইন লেখক এবং চিত্রকর। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন লিজিওন অফ অনার, মিগুয়েল দে সেরভেন্তেস পুরস্কার।

এছাড়াও তিনি ছিলেন লাতিন আমেরিকান সাহিত্য জগতের বেশ প্রভাবশালী লেখক। তাঁর মৃত্যুর পর স্পেনের এল পায়েস—তাঁকে উল্লেখ করেন ‘আর্জেন্টিনাইন সাহিত্যের শেষ ধ্রুপদী লেখক’ বলে।
‘এল তুনেল’ (১৯৪৮), ‘সবরে হেরোস ইয়া টুম্বাস’ (১৯৬১), ‘অ্যাবানদন এল এক্সতারমিনাদোর’ (১৯৭৪) তাঁর জগদ্বিখ্যাত তিন উপন্যাস।

৯ম কিস্তির লিংক

আমার মনে হল, হাঁটুর নিচ থেকে আমার পা ভেঙে আসছে। জানালার কথা ও মনে করতে পারছে না, এটা কি সম্ভব? তারমানে ওই জানালার ব্যাপারটার সামান্যতম গুরুত্বও নেই ওর কাছে; ওটা সাধারণ একটা কৌতুহল ছাড়া আর কিছুই ছিল না। নিজেকে খুব হাস্যকর লাগল। সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথাটা ঘুরতে শুরু করল; মাসের পর মাস কত কিছু ভেবেছি আর কতরকম পরিকল্পনা করেছি (এখনকার এই সাক্ষাৎপর্বটুকুও ওই ভাবনার ফল) সব এখন কেমন অবিশ্বাস্যরকম উদ্ভট মনে হতে লাগল, ভাঙা কশেরুকার হাড় থেকে আস্ত একটা ডাইনোসারের জন্ম হওয়ার মতোই এটাও যেন আমার অন্য আর সব উদ্ভট কল্পনাগুলোরই একটা।

মেয়েটার প্রায় কেঁদে ফেলার মতো দশা। আর আমার মনে হল গোটা দুনিয়ায়টাই দুলছে আমার, খড়কুটোর মতো সামান্য কিছু যে আকড়ে ধরব কিংবা একটা কোনো আশা, কিচ্ছু নেই। এবং আমি আবিষ্কার করলাম, আমি এমন কিছু বলেছি যা এখন আমার লিখতেও লজ্জা হচ্ছে:
‘বুঝতে পারছি আমার ভুল হয়েছে। আচ্ছা, ভালো থাকো। ’
বলেই আমি দ্রুত ওই দফতর থেকে বেরিয়ে এলাম; একট হেঁটে, প্রায় দৌড়াতে শুরু করলাম, জানি না কোন দিকে যাব। একটা দালান পেরিয়ে এসেছি তখুনি পেছন থেকে কারো ডাক শুনতে পেলাম:
‘দাঁড়ান, দাঁড়ান!’
ওই মেয়েটাই। আমার পিছু পিছু আসছে, আমাকে থামতে বলতে সাহস পাচ্ছে না। কিন্তু কাছে আসার পর ঠিক কী বলবে তাও বুঝতে পারছে না যেন, তারপর খুব নিচু গলায় বলল:
‘মাপ চাইছি, আমারই ভুল হয়েছে...বোকামি হয়ে গেছে। আমি একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম...’
মুহূর্তখানেক আগেও, আমার এই পৃথিবীটা অর্থহীন সব বস্তু আর মানুষের বিশৃঙ্খলায় যেন পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। এখন সব যেন আবার যার যার নিয়মে ঠিক ঠিক জায়গা মতো ফিরে এসেছে। আমি বাকরুদ্ধের মতো ওর কথা শুনে গেলাম।
‘আমি বুঝতে পারিনি আপনি পেইন্টিংয়ের ওই দৃশ্যটার কথা জিজ্ঞেস করেছেন’— কাঁপা গলায় বলল সে।
নিজের অজান্তেই, ওর বাহু খামচে ধরলাম আমি।
‘তোমার মনে পড়েছে এখন?’
কথা না বলে দু’মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকল ও, মাটির দিকে চেয়ে আছে। তারপর আস্তে আস্তে বলল:
‘এটাকে আমি মাথা থেকে কখনোই তাড়াতে পারিনি। ’
এরপর ও অদ্ভুত একটা কাণ্ড করল। ওকে মনে হল ও যা বলেছে তার জন্য এখন ওর অনুশোচনা হচ্ছে, কারণ এরপর ও ঝটিতে ঘুরে দাঁড়িয়েই হাঁটা শুরু করল, প্রায় যেন দৌড়াচ্ছে ও। খানিক বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে, আমিও ওর পেছন পেছন দৌড়াতে শুরু করলাম, কিন্তু একটুপরই বুঝলাম যে রাস্তায় অতি হাস্যকর একটা দৃশ্যের অবতারণা করেছি আমি। তাই দ্রুত চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে, তারপর বেশ দ্রুত কিন্তু স্বাভাবিক পদক্ষেপে হাঁটতে শুরু করলাম। তবে ওকে আমার এই অনুসরণের সিদ্ধান্তের মধ্যে দুটো ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে উঠল। এক, সুপরিচিত একজন ব্যক্তির অতি হাস্যকরভাবে রাস্তায় একটি মেয়ের পিছু ধাওয়া করার দৃশ্য। দুই, এর অপ্রয়োজনীয়তা। আমার মনে হল, দ্বিতীয়টিই আসলে মূল: এ রকম না করে বরং আমি চাইলে যে কোনো সময়ই ওর সঙ্গে দেখা করতে পারতাম, ও যখন অফিসে ঢোকে তখন কিংবা ওর বেরোনোর সময়। আমি কেন পাগলের মতো রাস্তায় ওর পিছু ধাওয়া করে যাচ্ছি? কী এমন হয়েছে, কী এমন ঘটেছে, জানালার ওই দৃশ্যটার কথা ওর মনে পড়ে গেছে: ‘এটা কখনই আমার মাথা থেকে বেরিয়ে যায়নি। ’ ওর এই স্বীকারোক্তি আমাকে দারুণরকম সুখি করল। ভাবলাম, আমি এখন যা খুশি করতে পারি, শুধু আক্ষেপ হল একটু, এই এলিভেটরের কাছে অপেক্ষার সময়টায় আমি নিজেকে সামলে রাখতে পারিনি, তারপর এখন এই দ্বিতীয়বার, যে কোনো সময় যখন ইচ্ছে, ওকে ওর এই দফতরে পাওয়া যাবে এটা পরিষ্কার জেনেও আমি উন্মাদের মতো ওর পেছন পেছন দৌড়াচ্ছি।

(চলবে)



বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।