ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ছাত্রনেতা ও আনু পাগলা | মিজানুর রহমান

গল্প / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৪
ছাত্রনেতা ও আনু পাগলা | মিজানুর রহমান

আজ একটা অদ্ভুত কাণ্ড ঘটেছে। স্যারের নির্দেশে সন্ধ্যার সময় এক ছাত্রনেতাকে গ্রেপ্তার করে এনেছিলাম।

হাতকড়া পরিয়ে স্যারের রুমে রেখেছিলাম। রাত ১১টার দিকে স্যার এলেন। স্যার রুমে ঢুকেই একটা বাঁশে লাঠি দিয়ে ছাত্র নেতাকে এলোপাতাড়ি পেটাতে লাগলেন। এ সময় বিদ্যুৎ চলে গেল। জেনারেটর চালু হতে প্রায় মিনিট দশেক দেরি হল। লাইট জ্বলে উঠতেই ভয়ার্ত কণ্ঠে স্যারের চিৎকার— ভূত, ভূত; কামরান, সোহেল তোমরা কোথায়? এদিকে আসো।
আমি জেনারেটর রুমে গিয়েছিলাম। চিৎকার শুনে স্যারের রুমে দৌড়ে আসি। দেখি স্যার মেঝেতে পড়ে আছেন। পাশে পোড়া মবিল মাখানো একজন উলঙ্গ ব্যক্তি দাঁড়িয়ে। লোকটিকে দেখে আমি চমকে ওঠি। ভূত-টুতে আমার তেমন একটা বিশ্বাস নেই। তারপরেও কেমন যেন ভয় কাজ করছিল। আমার পা দুটি  স্থির হয়ে গেল। কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। আমার হাতে বাঁশি ছিল। কী মনে হতেই সজোরে বাঁশিতে ফুঁ দিই। বাঁশির শব্দে কয়েজন ছুটে আসেন। ওরা রুমের মধ্যে ঢুকতেই লোকটি চিৎকার করে ওঠে, এই কেউ এগুবি না। আর এক পা এগুলেই তোদের স্যারকে মেরে ফেলব। আমরা দাঁড়িয়ে পড়ি। ওকে কীভাবে ধরা যায় সে পরিকল্পনা করতে থাকি।

এরই মধ্যে লোকটি ছাত্রনেতার কাছে গিয়ে তার মাথার উপর হাত রেখে গলা ফাঁটিয়ে বলে ওঠে— এই তোরা এই ভালো মানুষটাকে ধরে এনেছিস কেন? আমার এই ভাই কি চোর না ডাকাত? এরপর লোকটি ছাত্রনেতার সামনে এসে হাঁটু গেঁড়ে বসে দুহাত দিয়ে তার মুখখানা ধরে চুমু খায়। এ সুযোগে আমি ইশারা করতেই কনস্টেবল আরমান লোকটিকে জাপটে ধরে। কিন্তু গায়ে তৈলাক্ত মবিল থাকায় পিছলে যায়। লোকটি দৌঁড়ে বাইরে চলে যায়। কনস্টেবল রাকিব ও সোহেল পিছু নেয় । কয়েক পা এগুতেই ওরা পিছলে পড়ে বাবাগো-মাগো করতে থাকে। রানার মাহমুদ পিছলে না পড়লেও তার সঙ্গে দৌঁড়ে পারল না। পারবেই বা কি করে? রাজনৈতিক অস্থিরতা দমনে ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে সবাইকে। বিগত দুই বছর ধরে নিয়মিত পিটি প্যারেডও হয় না। মুটিয়ে যাওয়ায় অধিকাংশরাই আগের গতি হারিয়ে ফেলেছে। ফলে লোকটি সবাইকে বোকা বানিয়ে পালিয়ে গেল।

আমরা সবাই স্যারের রুমে ফিরে আসি। এসআই ফরিদ বসের পাল্স চেক করে চোখেমুখে পানির ছিটা দিয়ে স্যারের জ্ঞান ফেরালেন। স্যার উঠে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসলেন। আমি ছাত্রনেতাকে দেখিয়ে স্যারকে বললাম, স্যার একে আমি নিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি রহস্য উদঘাটন করতে পারবো। স্যার মাথা নেড়ে সায় দিলেন। আমি ছাত্র নেতাকে পাশের একটা রুমে এনে লোকটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই মুচকি হেসে বললেন, ও হচ্ছে আনু পাগলা।

-আনু পাগলা এখানে কেন এলো?

-ও আমাকে খুব ভালোবাসে। আব্বুর কাছে আমার গ্রেপ্তারের খবর শুনে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।

-ও পাগল হলে আমাদের অফিস চিনল কি করে?

আসলে ওকে সবাই পাগল বলে। কিন্তু আমার কাছে তেমনটি মনে হয় না। ওর বাবার মুখে শুনেছি পাঁচ বছর আগে ছিনতাইকারী ভেবে পুলিশ নাকি ওকে থানায় এনে বেদম প্রহার করে। তারপর থেকেই ও পাগলামী করে বেড়ায়। পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে এসেছে— এ কথা শুনে আমাকে দেখতে ও সরাসরি এখানে চলে এসেছে।

ছাত্রনেতার কথা আমার কিছুটা বিশ্বাস হলো। তাই ওই এলাকার পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে আনু পাগলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি। স্যারের রুমে ঢুকে সব খুলে বলি। সব শোনার পরও স্যারের মধ্যে কেমন যেন ভীতি কাজ করছিল। স্যার ছাত্র নেতাকে লক-আপে ঢুকাতে বললেন।
যে ছেলেটি একজন পাগলের কাছে এতো প্রিয়, না জানি সে অন্যদের কাছে আরো কত প্রিয়! 



বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।