অনন্ত দাঁড়াই
সেদিন প্রার্থনালয়ে অবোধ্য বয়ান শুনে হঠাৎ নিজেকে
অর্ধেক বাস্তব আর আধা বায়বীয় ব’লে টের পেয়ে খসে
পড়ি কি রিক্ততা এবং সম্পূর্ণতার ফাঁকে, অদৃশ্য গহ্বরে?
অথচ সমাধিস্থলে স্পন্দমান গাছের বৈচিত্র্যে
বাতাসে সাঁতার শেষে জুড়ে-বসা পাখিযুগলের
পারস্পরিক চুম্বন দেখামাত্র নিঃশ্বাসের নিচে জেগে ওঠে
নতুন গোঁফের রেখা। কৈশোরের প্রান্তে তবে আমি পুনরায়?
কে আছো খেলিতে আসো! আমাকে জড়াতে এসো।
কেউ কি মহিষে চেপে দূরের যমুনা ভাঙে বণিকের ব্রতে?
নদীকূলে গড়াগড়ি ও অন্য ক্রীড়ায় এলে মহার্ঘ যৌবন
ডানে বন্ধু কিংবা বামে বান্ধবীকে জড়িয়ে ব্যাকুল,
প্রাণই অনশ্বর বোধে, অনন্ত দাঁড়াই ক্লিন্ন বাণিজ্যের ক্ষতে।
গোরস্তান ঘেঁষে
মাও জে দঙের মাতৃভূমিকে অনিরাপত্তার হুমকি হেনে তুমুল অস্বস্তি দিতে প্রতীচ্যপৃথিবীর পরাশক্তি, বাংলার সমুদ্রকন্যা এক নারিকেল-দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনে প্রত্যাশী। জেনে ম্রিয়মাণ আমি আনমনে পথ হেঁটে হঠাৎ কবরস্থানের কিনারে এসে পড়ি। কিন্তু গোরস্তানের গাছগুলির নিবিড় বৈচিত্র্যে অচিরেই অনুভবে মুগ্ধতা বেজে ওঠে। এতে সোনায় সোহাগা বইয়ে দেয় ভাদ্র-শেষের আকস্মিক হাওয়ার আরাম। তথাপি নিজের দেহাবসান ও সমষ্টির ততোধিক বিয়োগের শঙ্কার অবশেষ রয়ে যায়। টের পাই আমারই এ-যাবৎকালের পথিক ব্যর্থতা। তাই আম, তেজপাতা, কাঠাল কি সফেদা গাছের নয়নাভিরাম সহাবস্থান ঠেলে এগুতে চাইলে বেড়ে যায় বাতাসের মার্চপাস্ট। চকিতে মাটির নিচে ঝংকৃত হয় কি উনিশশো একাত্তর কিংবা গেরিলার পদশব্দ? নইলে কেন গোরময় উদ্ভিদসকলে অপরাহ্নের মসৃণ রোদে বায়ুর তোড়ে একে অপরের কাঁধে চুল ঝেড়ে আমাকে প্রায় সমস্বরে কহে : তুমি মরবে কিংবা আমরা কেউও মারা যাবো একথা বিশ্বাসই হয় না।
এমন চাঁদের হাট ছেড়ে কোথা যাই?
জগতে আসেনি কেউ নিজের সংকল্পে;
কান কেন পাতা অবতারের কেচ্ছায়?
প্রশ্নের আগে ও পরে প্রণম্য স্তব্ধতা;
চেতনার অবসানে অজ্ঞাত আঁধার।
মুহূর্তে ঝিলিক দেয়া স্মৃতির বৈচিত্র্যে
জীবন অনন্ত ঠেকলে কাঁদে প্রৌঢ় কেউ।
কোথাও তরুণ শসা দেখে শিহরণে
নিজের শরমে যুবা হাত আঁকে স্নেহে।
ঘুমন্ত শিশুর নুনু সটান দাঁড়ালে
মা তার বাবাকে ডেকে দেখায় সানন্দে।
মাঝখানে দেখেন সব হয়তো ঠাকুর।
এমন চাঁদের হাট ছেড়ে কোথা যাই?
হামাগুড়ি দিলে কোনো পিতা নির্দ্বিধায়
সন্তান টলমলে পায়ে বড় হতে চায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৪