ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (১৬) || অনুবাদ : আলীম আজিজ

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৪
টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (১৬) || অনুবাদ : আলীম আজিজ অলঙ্করণ: মাহবুবুল হক

এর্নেস্তো সাবাতো (২৪ জুন ১৯১১-৩০ এপ্রিল ২০১১) আর্জেন্টাইন লেখক এবং চিত্রকর। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন লিজিওন অফ অনার, মিগুয়েল দে সেরভেন্তেস পুরস্কার।

এছাড়াও তিনি ছিলেন লাতিন আমেরিকান সাহিত্য জগতের বেশ প্রভাবশালী লেখক। তাঁর মৃত্যুর পর স্পেনের এল পায়েস—তাঁকে উল্লেখ করেন ‘আর্জেন্টিনাইন সাহিত্যের শেষ ধ্রুপদী লেখক’ বলে।
‘এল তুনেল’ (১৯৪৮), ‘সবরে হেরোস ইয়া টুম্বাস’ (১৯৬১), ‘অ্যাবানদন এল এক্সতারমিনাদোর’ (১৯৭৪) তাঁর জগদ্বিখ্যাত তিন উপন্যাস।

১৫তম কিস্তির লিংক

শিগগিরই আবার দেখা করার ব্যাপারে দুজনেই রাজি হলাম আমরা। কিন্তু আমার খুব লজ্জা লাগল একথা বলতে যে আমি ওকে কালকেই দেখতে চাই আবার, চাই তারপর থেকে সব সময় ও আমার পাশেই থাকুক, যেন আর কোনো দিন আমাকে ছেড়ে না যায়। আমার বিস্ময়কর স্মৃতিশক্তি সত্ত্বেও, আমার ব্যাখ্যাতীত কিছু ভ্রান্তিও আছে। এই মুহূর্তে ওকে আমার ঠিক কোন কথাটা বলা উচিত আমি বুঝতে পারছি না, কিন্তু আমার মনে পড়ল ও বলছিল যে ওর যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।

ওই রাত্রেই আমি ওকে ফোন করলাম। একজন কোনো মহিলা ফোন ধরল। আমি সিনোরিতা মারিয়া ইরিবার্নের সঙ্গে কথা বলতে চাই জানানোর পর মহিলা এক মুহূর্ত যেন ইতস্তত করল, তবে তারপরই জানাল সে আছে কিনা খোঁজ নিয়ে দেখছে সে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মারিয়ার গলা ভেসে এলো, কিন্তু ওর আনুষ্ঠানিক প্রায় ব্যবসায়িক ঢঙে কথা বলার ধরনে বেশ একটা ধাক্কা খেলাম আমি।

‘তোমার সঙ্গে আমার দেখা হওয়া দরকার, মারিয়া,’ বললাম। ‘সারাক্ষণ শুধু তোমার কথাই ভাবছি, তোমাকে ছেড়ে আসার পর থেকে প্রত্যেকটা মুহূর্ত। ’
বলে থামলাম, কাঁপছি আমি। ও কোনো জবাব দিল না।
‘তুমি কিছু বলছ না কেন?’ জিজ্ঞেস করলাম আমি, স্নায়ুবিক উত্তেজনা আমার তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
‘এক মিনিট,’ বলল ও।
ওর রিসিভার নামিয়ে রাখার শব্দ শুনলাম। তবে কমুহূর্ত পরই আবার ওর গলা শুনতে পেলাম; এবার ওর সত্যিকারের কণ্ঠস্বর। ওর গলা শুনে মনে হল সেও যেন কাঁপছে।
‘আমি কথা বলতে পারব না,’ ব্যাখ্যার মতো জানাল ও।
‘কেন?’
‘চারপাশে অনেক লোকজন আছে। ’
‘তাহলে এখন বলছ কিভাবে?’
‘ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়েছি। আর আমার ঘরের দরজা বন্ধ থাকলে আমাকে বিরক্ত করা যাবে না ওরা জানে। ’
‘তোমার সঙ্গে আমার দেখা হওয়া দরকার, মারিয়া। ’ ককর্শ শোনাল আমার কণ্ঠস্বর। ‘দুপুরে তোমার কাছ থেকে আসার পর থেকে আমি কিচ্ছু করতে পারিনি, সারাক্ষণ শুধু তোমাকেই ভাবছি। ’
কোনো জবাব এলো না।
‘আমার কথার জবাব দিচ্ছ না কেন?’
‘কাস্তেল,’ ইতস্তত গলায় বলা শুরু করল ও।
কিন্তু আমি ক্রোধের গলায় চিৎকার করে উঠলাম। ‘আমাকে কক্ষনো কাস্তেল বলবে না!’
এরপর, ভীত গলায় বলল, ‘হুয়ান পাবলো...’
এই দুটোমাত্র শব্দে অশেষ এক সুখানুভূতি হল আমার।
কিন্তু মারিয়া আবার থেমে গেছে।
‘কী হলো?’ জিজ্ঞেস করলাম আমি। ‘তুমি কিছু বলছ না কেন?’
‘ আমি তো,’ প্রায় ফিসফিস করার মতো করে বলল ও।
‘আমি কী?’ আমি বেশ জোর দিয়েই বললাম।
‘ আমিও তো কিছু ভাবতে পারছি না। ’
‘কিছু ভাবতে পারছ না মানে কী,’ জিজ্ঞেস করলাম আমি। তীব্র অতৃপ্তিতে হচ্ছে।
‘এই সব কিছু। ’
‘সব কিছু মানে? আমাকে খুলে বলো। সব কিছু কী?’
‘কী বলব, কী সব অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে...আপনার ছবি...গতকাল আমাদের ওই দেখা হওয়া...আর আজকে...আমি জানি না...’
যে কোনো অসম্পূর্ণতাই আমার জন্য সব সময় পীড়াদায়ক।
‘দেখো! আমি তো তোমাকে বলেছি তোমার কথা ছাড়া আমি আর কিচ্ছু চিন্তা করতে পারছি না,’ বললাম আমি। ‘কিন্তু তুমি আমার কথা চিন্তা করেছ কিনা তো বললে না। ’
দীর্ঘ সময় নীরবতা। তারপর ও বলল:
‘আপনাকে তো বলেছি সব কিছু নিয়েই ভেবেছি আমি। ’
‘সেটা কী? তুমি আমাকে সবটা খুলে বলো। ’
‘উফ্। সব কিছু এত অদ্ভুত, এত বিস্ময়কর...এতে আমার শান্তি নষ্ট হয়ে গেছে। আমি অবশ্যই আপনার কথা ভেবেছি। ’
হৃদপিন্ড লাফিয়ে উঠল আমার। কিন্তু আমাকে বিস্তারিত জানতে হবে আগে। পুঙ্খানুপুঙ্খ ফোটানোই তো আমার কারবার, সাধারণ কিছুতে আমি নাই।

‘কিন্তু কিভাবে, কিভাবে জানব সব?’ ভেতরে প্রবল আলোড়ন চলছে আমার। ‘তোমার সর্ম্পকে আমি কত কী ভেবেছি। তুমি যখন গাছের দিকে তাকিয়েছিলে তখন তোমার ওই প্রোফাইল, তোমার চুল, তোমার চোখের কঠিন চাহনি, আবার হঠাৎ নরম হয়ে আসা তোমার অভিব্যাক্তি, তুমি হেঁটে যাও—’ 
‘আমাকে এখন রাখতে হবে,’ বাধা দিয়ে বলল ও। ‘কে যেন আসছে। ’
মরিয়া হয়ে কোনো রকমে বলতে পারলাম, ‘আমি কাল আবার তোমাকে ফোন করব, সকালে। ’
‘আচ্ছা’ সংক্ষিপ্ত উত্তর ওর।

(চলবে)


১৭তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।