ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

চারটি কবিতা | মাসুদুজ্জামান

কবিতা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৪
চারটি কবিতা | মাসুদুজ্জামান পেইন্টিং: এমএফ হুসেইন

বালিকার প্রণয়যাপন

মেয়েটির সবুজ গ্রীবায় লেগে আছে মৃত্যুঘুম
চিবুক থেকে খসে পড়ছে সোনালি রোদ্দুর
গোধূলির কাছ থেকে কিছুটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে
উড়ছে কালো চুল, প্রণয়বাতাসে কাঁপছে
বৃষ্টিভেজা বুনো ঠোঁট, পিপাসার্ত তীব্র ময়ূরী।

বিকেলের সূর্যটা কামিজের সঙ্গে গেঁথে নিয়ে
বালিকা চলেছে বিশ্ববিদ্যালয় আবাসনে...

রিকশার হুড ফেলে প্রণয়পতাকা উড়িয়ে
রিমঝিম রিমঝিম উড়ে আসছে সে, এইতো,
শান্ত সেতু, এরপর বেক্সিমকোর বাঁক,
রাস্তাগুলো নদী আর গাড়িগুলো নৌকো,

আরেকটু এগুলেই হাতির পুল, সবজি আর
মৃতমাছের রূপালি শস্যের ঝিলিমিলি...
নীলক্ষেতের কাছেই ঘনিয়ে এলো সূর্যাস্ত;

পুরুষ, তুমি, খুলে রাখো সান্ধ্য পাঠশালা
বাতাসের ভাঁজে ভাঁজে তার রূপছায়া পড়লেই
ঝলমল করে উঠবে পাঠাগারের সমস্ত বই
ভেতরের পৃষ্ঠা থেকে অক্ষরগুলো উড়ে গিয়ে
লক্ষ লক্ষ নক্ষত্র হয়ে ফুটে উঠবে আকাশে।



বালিকা, এসো, রাত্রি ঘনিয়ে আসার আগেই
ঝাঁপ দাও, আমার বুকের ঘননীল দিগন্তে।


প্রেম

পাতাবাহারের মতো বর্ণময় ছিল তার হাসি, অশ্রু ও শরীর।
রোদ এসে চুমু খেলে একটু একটু করে খুলে যেত লাবণ্যের
পালক ও ডানা। লিবিডোতাড়িত সেই পাখিটিকে আমি কখনও
সমুদ্রের স্নিগ্ধ স্বরলিপি শেখাতে পারিনি। হাওয়ার হাড় খুলে খুলে
সে জীবিত মানুষের পাশে মৃত মানুষকে শুইয়ে রেখেছে। শরীর
থেকে সমস্ত পোশাক খুলে ফেলে শীৎকারের ঢেউশিখরে উঠে
নেচে নেচে বেলাভূমিতে আছড়ে পড়েছে। এরকম মেঘমুক্ত দিনে
তার স্তন দুটি যখন আমার মুঠোর মধ্যে ধূসর আর বিনম্র
হতো, তখন আমি তার শরীরতাঁবুর মধ্যে আপেলবিভ্রমে উজ্জ্বল
ইভকে আমার শরীরের সঙ্গে মিশে যেতে দেখেছি। ইহজাগতিকতার
এই জলন্ত ভঙ্গিটি হচ্ছে আমার প্রেমিকার, যে আমার শরীর থেকে
দূরে গিয়ে নিজেই আবার নিঃশব্দে আমার পৃথিবীতে ফিরে আসে।


অয়দিপাউস

[সফোক্লিসের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক]

দূর নীল আকাশের নক্ষত্রদের দেখতে দেখতে
তৃষ্ণার্ত বিষণ্ন একটা কুকুরের যোনিরাশি বলে ভ্রম হতো।
নারীকেও কোনো এক যুবাপুরুষের কেবলি মনে হতো
যোনিময় অন্ধকারে সমস্ত পৃথিবীটা ঢেকে গেছে।

সেদিন এক ভিখিরি কবি আর রাজকন্যার কপট প্রেমের কাহিনি
শুনতে শুনতে সেই গল্পটা আবার মনে পড়ে গেল।
নারী আর সঙ্গমের শব্দ ছাড়া ওই ভিখিরির অভিধান থেকে
কোনো শব্দ কখনও উত্থিত হয় না
সমস্ত পৃথিবীটাই মনে হয় যোনির বিভ্রম।

কিন্তু এইভাবে ভাবতে ভাবতে কখন যে সেই কবি
মাতৃযোনিপথকে রক্তাক্ত করে তুললো, বুঝতেই পারলো না।


ভালোবাসার নীল দরোজায়

[হয়তো আপনি নিজের জ্যামিতি জানেন না, তাই এমনটি ঘটে যায়। — জীবনানন্দ ও লোরকার অকাল মৃত্যুকে স্মরণ করে]

ভালোবাসা এসেছিল, গোধূলির বিশীর্ণ নদীর
দীর্ঘশ্বাস শুষে নিয়ে ওই মাঠে, প্রান্তরে প্রান্তরে
জ্বলে উঠেছিল মূঢ় আবছায়া নারী, ধানকন্যা;
তাহার উজ্জ্বল হলুদাভ স্তন, আরক্তিম ঠোঁটে
চুমু খেয়ে একটি কবন্ধ ধূসর পেঁচা ফিরে
পেয়েছিল অনির্বচনীয় ঘুম আর মানবজনম।

এখনও সে আসে, স্মিত, চারু ঝঙ্কৃত দুপায়ে
বিবর্ণ খড়ের গাদা, মৃদু ঘাস, জোনাকি মাড়িয়ে
জোনাকির মতো ফুটে ওঠে বুকের বাঁ পাশে
যেখানে হৃদয় এখনও তারি জন্য জেগে আছে;

মৃত্যুর গভীর নীল দরোজার খুব, খুব কাছে।



বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।