ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

খলিলের নির্বাচিত কার্টুন

বুক রিভিউ / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৪
খলিলের নির্বাচিত কার্টুন

সাব্বির আহমেদ || একটি কার্টুন একটি ঘটনার প্রতিচ্ছবি, একটি সময়ের প্রতিচ্ছবি। ঘটনাবহুল বিশ্বের নানা ঘটনা একজন কার্টুনিস্ট যেভাবে দেখেন ঠিক সেভাবেই চিত্রায়িত করেন।

একটি গণতান্ত্রিক দেশে মত প্রকাশের এটি একটি শক্তিশালী মাধ্যম। আমাদের সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ করে রাজনৈতিক কার্টুন নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।

আমাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্ভবত কার্টুনেই ভালোভাবে তুলে ধরা যায়। কার্টুনিস্ট খলিল রহমানের কার্টুনে সেটিই লক্ষ্মণীয়। আমাদের এই  বিচিত্র জটিল রাজনৈতিক ঘটনাবলি কার্টুনিস্ট খলিল তাঁর কার্টুনে অত্যন্ত চমৎকার ও সহজভাবে তুলে ধরেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকটপূর্ণ মুহূর্তে তার রাজনৈতিক কার্টুনগুলোয় শুধু চিন্তাদীপ্ততাই নয়, রয়েছে সাহসিকতারও বহিঃপ্রকাশ।

সেনা সমর্থিত ১/১১’র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সংবাদপত্রে রাজনৈতিক কার্টুন এক রকম নিষিদ্ধই ছিল। মূল ধারার পত্রিকাগুলোতে কার্টুন ছাপা প্রায় বন্ধই ছিল। কিন্তু থেমে থাকেনি কার্টুনিস্ট খলিলের তুলি। ১/১১’র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক কার্টুন আঁকেন তিনি। সে সময় তাঁর একটি আলোচিত কার্টুন— একটি গাড়ির ড্রাইভিং সিটে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ফখরুদ্দিন আহমেদ। আর তাঁর পেছন থেকে স্টিয়ারিং ধরে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ করছেন অন্যকেউ। অর্থাৎ ফখরুদ্দিন সরকার প্রধান হলেও সরকার চালাচ্ছেন অন্য কেউ।

সে সময়ে তার আঁকা আরেকটি কার্টুন এরকম, সাধারণ জনগণের গলায় পেঁচানো একটি দড়িকে দ্রব্যমূল্যের শক্তিশালী দুটি হাত দুপাশ থেকে টেনে ধরেছে। প্রায় শ্বাসরুদ্ধ জনগণ দড়িটি একটু ঢিলা করার আকুতি জানাচ্ছে। কিন্তু পাশ থেকে সে সময়ের অর্থ উপদেষ্টা মির্জা আজিজ বলছেন, এটুকু সইতেই হবে, এটা তো আর শাঁয়েস্তা খাঁর আমল নয়! উল্লেখ্য কার্টুনটি প্রকাশের আগের দিন মির্জা আজিজ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কে ওই মন্তব্য করেন।

বিভিন্ন সময়ে আঁকা কার্টুনিস্ট খলিলের এরকম ৪৮টি কার্টুন নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘খলিলের নির্বাচিত কার্টুন’। বইটিতে খলিলের কার্টুন নিয়ে সংক্ষিপ্ত মন্তব্য লিখেছেন বিশিষ্ট কার্টুনিস্ট রফিকুন নবী (রনবী), শিশির ভট্টাচার্য, বিশ্ববিখ্যাত কার্টুনিস্ট রানান লুরি, লন্ডনের দি গার্ডিয়ান পত্রিকার এডিটরিয়াল কার্টুনিস্ট মার্টিন রওসন, আমেরিকার পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত এডিটরিয়াল কার্টুনিস্ট স্টেভ স্যাক ও সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের পলিটিক্যাল কার্টুনিস্ট হ্যারি হ্যারিসন। বইটিতে সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়ও প্রাধান্য পেয়েছে। বিশেষ করে দুর্নীতি, ঢাকার যানজট, লোডশেডিং ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদি। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিষয়েও বেশ কিছু কার্টুন বইটিতে স্থান পেয়েছে।

লোডশেডিং নিয়ে খলিলের একটি কার্টুন— গ্রাম থেকে এক অতিথি ঢাকায় বেড়াতে এসেছেন। ঘন ঘন লোডশেডিং দেখে গৃহস্বামীকে তিনি বলছেন, হের চেয়ে আমাগো গেরামই ভালা, এত ঘন ঘন কারেন্ট যায় না, সকালে গেলে পরের দিন সকালে আসে।

ঢাকার যানজট নিয়েও একাধিক কার্টুন এঁকেছেন খলিল। বসের কাছে তিন দিনের ছুটি চেয়ে দরখাস্ত করেছেন এক কর্মচারী। বস জানতে চাইলেন কোথাও বেড়াতে যাচ্ছেন কি-না। উত্তরে তিনি বলেন, ‘জ্বী স্যার, গুলশান থেকে গুলিস্তান। মামার বাড়ি। যেতে একদিন আসতে একদিন আর মাঝখানে থাকবো একদিন’। এরকম বিভিন্ন বিষয়ে দৃষ্টিনন্দন কার্টুনে সমৃদ্ধ বইটি। আর্ট পেপারে ঝকঝকে ছাপায় ৬৪ পৃষ্ঠার বইটি সংগ্রহে রাখার মতো। পাওয়া যাচ্ছে রকমারি ডট কমে। মূল্য ১৫০ টাকা।



বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।