এর্নেস্তো সাবাতো (২৪ জুন ১৯১১-৩০ এপ্রিল ২০১১) আর্জেন্টাইন লেখক এবং চিত্রকর। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন লিজিওন অফ অনার, মিগুয়েল দে সেরভেন্তেস পুরস্কার।
‘এল তুনেল’ (১৯৪৮), ‘সবরে হেরোস ইয়া টুম্বাস’ (১৯৬১), ‘অ্যাবানদন এল এক্সতারমিনাদোর’ (১৯৭৪) তাঁর জগদ্বিখ্যাত তিন উপন্যাস।
১৭তম কিস্তির লিংক
পরদিন সকাল দশটার দিকে মারিয়াকে ফোন করলাম আমি। সেই একই মহিলা ফোনের জবাব দিল। এবং আমি যখন তাকে মারিয়া ইরিবার্নের কথা জিজ্ঞেস করলাম, সে জানাল সকালে শহর ছেড়ে বাইরে গেছে মারিয়া। পুরো বিমূঢ় হয়ে গেলাম আমি।
শহরের বাইরে?’ পুনরোক্তি করলাম আমি।
‘জ্বি, স্যার। আপনি সিনর কাস্তেল?’
‘হ্যাঁ, আমি কাস্তেল। ’
‘ও আপনার জন্য একটা চিঠি রেখে গেছে। আপনাকে জানাতে বলেছে ও দুঃখিত, ওর কাছে আপনার ঠিকানা ছিল না। ’
আমি এদিন এত প্রবলভাবে ওর সাক্ষাৎ কামনা করছিলাম, আর এই সাক্ষাতে দারুণরকম ফলাফল হবে ভেবে আশায় যেভাবে বুক বেঁধেছিলাম, এই খবর আমাকে পুরোপুরি একেবারে চুপসে দিল। হুড়মুড় করে একের পর এক যত প্রশ্ন আসতে শুরু করল মাথায়। শহরের বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কেন ও? স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে এই সিদ্ধান্ত সে নিয়েছে আমাদের টেলিফোন আলাপের পর, কারণ এটাই যদি না হবে, তাহলে ও শহরের বাইরে দূরে কোথাও যাচ্ছে টেলিফোন আলাপে এ ব্যাপারে কিছু না কিছু ও বলত, এবং সেক্ষেত্রে পরদিন সকালে আমার ফোনে কথা বলার প্রস্তাবে সে কিছুতেই রাজি হত না। কিন্তু টেলিফোন আলাপের পরেই যদি এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তার মানে কি ওই আলাপেরই কারণেই এই সিদ্ধান্ত ওর? তাই যদি হয়, তাহলে কেন? ও কি আমার কাছ থেকে পালাতে চাইছে? ও কি মনে করেছে আবারও কাকতলীয়ভাবে আমাদের দেখা হয়ে যেতে পারে, আগেরবারের মতো?
ওর অপ্রত্যাশিত এই সফর প্রথমবারের মতো আমার মনে সন্দেহের উদ্রেক করল। বরাবরের মতো, আমি আগে পাত্তা দেইনি এমন সব সন্দেহজনক খুটিনাটি মনে করার চেষ্টা করলাম। ওইদিন টেলিফোনে গলা পরিবর্তন করে কথা বলছিল কেন মারিয়া? ওই সব ‘লোকজন’ কারা যারা ‘আশপাশে’ থাকায় ওর স্বাভাবিক গলায় কথা বলায় বাধা ছিল? এছাড়াও, ওর কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন এটাই প্রমাণ করে, ওর ছলনা করার ক্ষমতা আছে। আর সিনোরিতা ইরিবার্নেকে চাওয়ায় কাজের মহিলাটাই বা ইতস্তত করছিল কেন? কিন্তু এ সব কিছু ছাড়িয়ে, ওর একটা বাক্য আমার মাথার ভেতরটা এসিডের মতো করে খেয়ে নিচ্ছে:
‘আমার দরজা বন্ধ থাকলে ওরা জানে আমাকে বিরক্ত করা যাবে না। ’ এতে আমার এ রকম একটা উপলব্ধি হল যে, মারিয়াকে ঘিরে আছে কালো ছায়া।
তাড়া করে ওর বাড়ির দিকে রওনা হওয়ার পর এই প্রশ্নগুলো জোরেসোরে আসতে শুরু করল আমার মাথায়। ও আমার ঠিকানা খুঁজে বের করতে পারেনি এটা খুবই আশ্চর্যজনক। অথচ, আমি এখন ওর ঠিকানা জানি, ওর টেলিফোন নম্বরও জানি। ও থাকে কালে পোসাদাসে, একবারে সিবারের কোনার দিকটায়।
এর মধ্যে পাঁচ তলায় উঠে আমি বেল টিপলাম, তীব্র আবেগে কাঁপছি আমি।
যে ভৃত্য লোকটা দরজা খুলে দিল তাকে দেখে আমার পোলিশ বলেই মনে হল, কিংবা আর্হেন্তীয় না অন্যকোনো জাতির লোক হবে, ওকে আমার নাম জানানোর পর, বই বোঝাই এক স্টাডিতে পথ দেখিয়ে নিয়ে এল সে। সিলিং পর্যন্ত দেয়াল জুড়ে সার সার বইয়ের তাক শুধু, কিন্তু তারপরও দুটো ছোট টেবিলেও বই স্তূপ করে রাখা, এমন কি একটা চেয়ারেও। অস্বাভাবিক মাপের নানা রকম বইয়ের বিরাট বিরাট ভলিউম দেখে আমি বেশ ধাক্কাই খেলাম।
লাইব্রেরিটাকে ভালোভাবে একটু নজর করে দেখার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছি আমি, তখুনি আচমকা আমার এরকম এক ধরনের অনুভূতি হল যে অলক্ষে আমাকে কেউ দেখছে। ঘুরে দাঁড়ালাম আমি এবং কামরার একেবারে উল্টোপ্রান্তে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে আবিষ্কার করলাম। লম্বা, হালকা-পাতলা গড়নের একটা লোক, বেশ আকর্ষণীয় মাথা লোকটার। আমার দিকে তাকিয়ে হাসল সে, কিন্তু সেটা এক রকমের সাধারণভাবে শুধু তাকানো। তার চোখ পুরোপুরি খোলা থাকা সত্ত্বেও, আমি বুঝলাম লোকটা চোখে দেখে না। বিশালাকৃতির বইয়ের ব্যাখাটা পাওয়া গেল এ থেকে।
‘তুমি কাস্তেল, ঠিক?’ আন্তরিকভাবে বলল সে, বলে হাত বাড়িয়ে দিল আমার দিকে।
‘হ্যাঁ, সিনর ইরিবার্নে,’ জবাব দিলাম আমি, বাড়ানো হাত ধরলাম। হতভম্ব অবস্থা আমার; মাথার ভেতর আলোড়ন চলছে, মারিয়ার সঙ্গে এই লোকের কী সর্ম্পক হতে পারে।
আমাকে নিয়ে চেয়ারের দিকে এগুতে এগুতে, খানিকটা বাঁকা হাসি হাসল যেন সে। ‘আমার নাম ইরিবার্নে না, আর আমাকে আপনার সিনর বলার দরকার নেই। আমি আলেন্দে, মারিয়ার স্বামী। ’
(চলবে)
১৯তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৪
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (১৮) || অনুবাদ : আলীম আজিজ
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।