___________________________________
এর্নেস্তো সাবাতো (২৪ জুন ১৯১১-৩০ এপ্রিল ২০১১) আর্জেন্টাইন লেখক এবং চিত্রকর। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন লিজিওন অফ অনার, মিগুয়েল দে সেরভেন্তেস পুরস্কার।
‘এল তুনেল’ (১৯৪৮), ‘সবরে হেরোস ইয়া টুম্বাস’ (১৯৬১), ‘অ্যাবানদন এল এক্সতারমিনাদোর’ (১৯৭৪) তাঁর জগদ্বিখ্যাত তিন উপন্যাস।
___________________________________
২৬তম কিস্তির লিংক
আমার প্রতিদিনের জেরায়— মারিয়ার নীরবতা, ওর চাহনি, ওর দ্বিধাগ্রস্ত কথাবার্তা, ওর প্রেম, ওর এসতানসায়ায় যাওয়া— এসব প্রশ্ন দিনে দিনে আরও তীব্র এবং আরও অমার্জনীয় হয়ে উঠতে শুরু করল। একদিন ওকে আমি জিজ্ঞেস করলাম ও কেন নিজেকে ‘সিনোরা দে আলেন্দে’—আলেন্দের স্ত্রী, এই পরিচয় না দিয়ে ‘সিনোরিতা ইরিবার্নে’ বলে পরিচয় দেয়। ও হেসে জানাল:
‘তুমি এমন ছেলেমানুষ! এতে কী এসে যায়?’
‘আমার কাছে অনেক কিছু এসে যায়,’ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম আমি।
হাসি উবে গেল ওর, তারপর বলল, ‘এটা আমাদের পারিবারিক রীতি। ’
‘উহ্, কিন্তু আমি প্রথমবার যখন তোমার বাসায় ফোন করি এবং সিনোরিতা ইরিবার্নে বলে তোমাকে চাই,’ আমি পাল্টা বললাম, ‘তোমাদের কাজের মহিলা জবাব দেওয়ার আগে কেমন ইতস্তত করছিল। ’
‘ তুমি এটা কল্পনা করেছ। ’
‘হতে পারে। কিন্তু তাহলে কাজের মহিলা আমাকে সংশোধন করে দিল না কেন?’
আবারও হাসল মারিয়া, আরও উজ্জ্বল মুখে।
‘এইমাত্র তো বললাম তোমাকে,’ বলল ও। ‘এটা আমাদের রীতি, কাজের মেয়েও সেটা স্পষ্টভাবে জানে। সবাই আমাকে মারিয়া ইরিবার্নে বলেই ডাকে। ’
‘হু, ‘‘মারিয়া ইরিবার্নে’’ মানলাম, কিন্তু ‘‘সিনোরিতা’’ শুনে কাজের মহিলার বিস্মিত না হওয়াটা আমার কাছে অস্বাভাবিক। ’
‘উহ্...আমি বুঝতে পারিনি যে এটা তোমার মাথাব্যথার কারণ হয়েছে। ঠিক আছে, এটা স্বাভাবিক না, আর সে কারণেই ও ইতস্তত করছিল। ’
অন্যমনস্ক দেখাল ওকে, যেন এই প্রথম এ বিষয়টা কেউ আমলে এনেছে ওর।
‘কিন্তু, সে কিন্তু আমাকে সংশোধন করে দেয়নি। ’
‘কে?’ জিজ্ঞেস করল ও, যেন দূরে কোথাও চলে গেছে।
‘কাজের মহিলা। আমি যখন ‘‘সিনোরিতা’’ বললাম সে আমাকে ঠিক করে দেয়নি। ’
‘কিন্তু হুয়ান পাবলো। এসবের কোনোটারই আসলে সামান্যতম গুরুত্বও নেই। তুমি আসলে কী প্রমাণ করতে চাইছ আমি বুঝতে পারছি না। ’
‘আমি এটাই প্রমাণ করতে চাইছি যে, ওটাই হয়তো প্রথম না যে কেউ তোমাকে ‘‘সিনোরিতা’’ বলে ডাকছে। ওটা প্রথম হলে কাজের মহিলা ঠিকই সংশোধন করে দিত। ’
জোরে শব্দ করে হেসে উঠল মারিয়া।
‘তুমি সত্যিই অতুলনীয়,’ প্রায় উচ্ছ্বসিত গলায় বলল ও, জড়িয়ে ধরে চুমু খেল আমাকে।
আমি একেবারে নির্বিকার রইলাম।
‘আরও আছে,’ আমি বলে যাই, ‘তুমি যখন প্রথম ফোনে আমার সঙ্গে কথা বললে, দরজা বন্ধ করার আগ পর্যন্ত— তোমার গলা ছিল একদম নিস্পৃহ, একবারে ব্যবসায়ীদের মতো। দরজা বন্ধ হওয়ার পর তোমার গলায় আবেগ ফুটল—এই পরিবর্তন কেন?’
‘কিন্তু, হুয়ান পাবলো,’ হঠাৎ মুখচোখ ভীষণরকম গম্ভীর হয়ে উঠল ওর, বলল, ‘কাজের মেয়ের সামনে কী করে আমার গলায় প্রেম ফুটবে?’
‘হ্যাঁ, এ কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু তুমি বলেছ, “তুমি দরজা বন্ধ করে দিলে অন্যরা জানে তোমাকে আর ডিস্টার্ব করা যাবে না। ” এটা আমার বেলায় খাটে না কারণ, ওইবারই প্রথম আমি তোমাকে ফোন করেছি। কিংবা হান্তেরের বেলায়ও খাটে না, যেহেতু তুমি চাইলেই এসতানসায়ায় গিয়ে যখন খুশি ওর সঙ্গে দেখা করতে পারো। কাজেই আমার নিশ্চিতভাবেই মনে হচ্ছে অন্য আরও লোক আছে যারা তোমাকে ফোন করে, বা করত। কি ঠিক বললাম?’
মারিয়ার চোখ দুঃখে ভরে উঠল।
‘এমন দুখি চেহারা না করে, আমার প্রশ্নের জবাব দাও,’ আমি বিরক্ত হয়ে বললাম।
‘কিন্তু, হুয়ান পাবলো, তুমি যেসব বলছ সবই খুবই ছেলেমানুষি কথা। অবশ্যই আমি অন্য অনেক লোকের সঙ্গে কথা বলি: আমার চাচাতো-ফুফাতো ভাইবোনেরা আছে, পারিবারিক বন্ধুরা আছে, আমার মা আছে?’
‘কিন্তু আমার মনে হয় না এদের সঙ্গে আলাপে তোমার “লুকানো”র কিছু আছে। ’
‘আমি “লুকাই” এটা তুমি বলছ কিসের জোরে?’ রেগে গিয়ে বলল ও।
‘উত্তেজিত হয়ো না। তুমিই আমাকে জনৈক রিচার্ডের কথা বলেছ, সে তোমার ওই চাচাতো-মামাতো-ফুফাতো ভাইদের কেউ না, অথবা কোনো পারিবারিক বন্ধুও না... কিংবা তোমার মাও না। ’
আচমকা মনমরা হয়ে গেল মারিয়া।
‘বেচারা রিচার্ড,’ নরম গলায় বলল ও।
“বেচারা” কেন?’
‘তুমি ভালো করেই জানো ও আত্মহত্যা করেছে, এবং এর জন্য একভাবে আমিও খানিকটা দায়ী। ও আমাকে জঘন্য সব চিঠি লিখত, কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। বেচারা, বেচারা রিচার্ড। ’
(চলবে)
২৮তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৪
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (২৭) || অনুবাদ : আলীম আজিজ
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।