___________________________________
এর্নেস্তো সাবাতো (২৪ জুন ১৯১১-৩০ এপ্রিল ২০১১) আর্জেন্টাইন লেখক এবং চিত্রকর। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন লিজিওন অফ অনার, মিগুয়েল দে সেরভেন্তেস পুরস্কার।
‘এল তুনেল’ (১৯৪৮), ‘সবরে হেরোস ইয়া টুম্বাস’ (১৯৬১), ‘অ্যাবানদন এল এক্সতারমিনাদোর’ (১৯৭৪) তাঁর জগদ্বিখ্যাত তিন উপন্যাস।
___________________________________
২৭তম কিস্তির লিংক
‘ওসব চিঠির আমি দু-একটা দেখতে চাই। ’
‘কেন? ও তো মরে গেছে। ’
‘আমি পরোয়া করি না, আমি দেখতে চাই। ’
‘আমি সব চিঠি পুরিয়ে ফেলেছি। ’
‘তাহলে শুরুতেই বললে না কেন যে সব চিঠি পুড়িয়ে ফেলেছ? তা না বলে, বললে, “কেন? ওতো মরে গেছে। ”—এ রকম তুমি সব সময়ই করো। আর, চিঠিগুলো পোড়ালে কেন—সত্যিই পুড়িয়েছ কিনা কে জানে? আমার কাছেই একদিন তুমি বলেছ তোমার সব প্রেমপত্র জমিয়ে রেখেছ। রিচার্ডের চিঠিগুলো নিশ্চয়ই খুব সন্দেহজনক ছিল। ঠিক বললাম?’
‘সন্দেহজনক বলে ওগুলো পোড়াইনি, আমি ওগুলো পুড়িয়েছি কারণ ওগুলো খুবই দুঃখের। আমার মন খারাপ হত। ’
‘মন খারাপ হত কেন?’
‘আমি জানি না... রিচার্ড খুবই বিষণ্ন একটা লোক ছিল। ও অনেকটা তোমার মতো। ’
‘ওকে তুমি ভালোবাসতে?’
‘প্লিজ...’
‘প্লিজ, কী...?’
‘এরকম করবে না আর, হুয়ান পাবলো। তোমার যত অদ্ভুত চিন্তা...’
‘আমার কাছে এটা মোটেও অযৌক্তিক ঠেকছে না। ও তোমার প্রেমে পড়েছিল, ও তোমাকে এমন ভয়ঙ্কর সব চিঠি লিখেছিল যে তোমার মনে হয়েছে ওসব পুড়িয়ে ফেলাই শ্রেয়, লোকটা আত্মহত্যা করেছে, আর তুমি বলছ আমার চিন্তা অযৌক্তিক। কেন এমন মনে হচ্ছে?’
‘কারণ এ সব কিছু সত্ত্বেও আমি ওকে কখনোই ভালোবাসিনি। ’
‘কেন বাসোনি?’
‘আমি সত্যিই জানি না। ও হয়তো আমার পছন্দ হওয়ার মতো ছিল না। ’
‘তুমি একটু আগেই বলেছ ও অনেকটা আমার মতো। ’
‘দোহাই আল্লার। আমি বলতে চেয়েছি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওর সঙ্গে তোমার মিল আছে, তার মানে এটা নয় যে হুবহু এক। ওর কোনো সৃষ্টি করার ক্ষমতা ছিল না; ওর মেধা ছিল ধ্বংসাত্মক; ও ছিল পুরো ধ্বংসবাদী একজন মানুষ। অনেকটা তোমার নেতিবাচক দিকের মতো। ’
‘ঠিক আছে। কিন্তু আমি এখনও বুঝলাম না চিঠিগুলো পোড়ানোর দরকার পড়ল কেন। ’
‘আমি আবারও বলছি, চিঠিগুলো আমি পুড়িয়েছি কারণ ওগুলো আমার মন খারাপ করে দিত। ’
‘ওগুলো তুমি না পুড়েও তো রেখে দিতে পারতে। এতে যা প্রমাণ হয় তুমি ওগুলো না পোড়ানো পর্যন্ত আসলে ওগুলো পড়া বন্ধ করতে পারছিলে না। আর যেহেতু তুমি ওগুলো পড়া থামাতে পারছ না, তারমানে এর জোরালো কোনো কারণ ছিল—লোকটার কিছু একটা তোমাকে আর্কষণ করত। ’
‘ও আমাকে আকৃষ্ট করত না সেটা তো বলিনি। ’
‘তুমি বলেছ ও তোমার পছন্দের টাইপ ছিল না। ’
‘হায়, আল্লা, আল্লা! মৃত্যুও আমার ‘টাইপ,’ না, তারপরও মৃত্যু আমাকে প্রায়ই আকর্ষণ করে। রিচার্ডও প্রায় একইভাবে ওই মৃত্যু কিংবা বিস্মরণের মতোই আমাকে আকর্ষণ করত। আমার বিশ্বাস কেউই স্বেচ্ছায় এ ধরনের অনুভূতিকে গ্রহণ করবে না। সম্ভবত এ কারণেই ওকে আমি ভালোবাসতে পারিনি। এ কারণেই ওর সব চিঠি আমি পুড়িয়ে ফেলেছি। ওর মৃত্যুর পর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ওর অস্তিত্বকে ধরে রাখে এ রকম সব কিছু ধ্বংস করে ফেলব। ’
মারিয়ার মেজাজের তেমন কোনো হেরফের হল না, রিচার্ড বিষয়ে আর একটা শব্দও আমি বের করতে পারলাম না। আর আমার এটা অবশ্যই যোগ করা উচিত, যাই হোক না কেন, রিচার্ড কিন্তু আমার যন্ত্রণার কোনো কারণ না, কারণ আমি ওর সম্বন্ধে মোটামুটি ভালোই জানি। আমাকে কুরে খাচ্ছে ওইসব লোকেরা যাদের আমি চিনি না, যে সব ছায়াদের কথা মারিয়া কখনোই মুখ ফুটে বলেনি কিন্তু আমি টের পাই তারা নিঃশব্দে আঁধারের মতো বিচরণ করছে ওর জীবনে। একটা শব্দ যা আমাদের সঙ্গমের সময় ওর মুখ ফসকে বেরিয়ে এসেছে, যা আমাকে ক্রুসের মতো বিদ্ধ করেছে—এখনও ক্রুসবিদ্ধ হয়েই আছি আমি।
কিন্তু মারিয়াকে জেরা করায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করলেও, একবারই কেবল ও বিশেষভাবে ওর যৌন জীবন নিয়ে কথা বলেছে।
(চলবে)
২৯তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৪
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (২৮) || অনুবাদ: আলীম আজিজ
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।