প্রেম ও বৃষ্টিতান্ত্রিক যুদ্ধকথা
না-ফাটা গোলার মতো পড়ে আছে স্মৃতিদাগ। যুদ্ধ শেষ হয়েছে
অনেক আগেই—
প্রেমের উপাখ্যানগুলো
স্বর্ণাক্ষরের ছায়ায় দাঁড়িয়ে জিরিয়ে নিচ্ছে, আর মুগ্ধমেঘ
উড়ে যাচ্ছে মাথার উপর দিয়ে।
কেউ ফিরে দেখছে— সেই দৃশ্য। কেউ দেখছে না।
সমুদ্র সেঁচে যারা কুড়াতে চেয়েছিল ঝিনুক,
মাটি খুঁড়ে যারা তুলতে চেয়েছিল অসামরিক বেদনার হাড়,
তারাও বদল করছে যুদ্ধের কনভয়।
আর ভাবছে—
আহা, প্রেম!
তুমিও বুঝি যুগে যুগে শরণার্থী হও!
বৃষ্টিতান্ত্রিক দিনগুলো বিদায় নিচ্ছে পৃথিবী থেকে—
এই ভেবে, প্রেমের পঙ্ক্তিমালা লিখতে ভুলে যাচ্ছে পত্রপল্লব।
বর্ধিত বিজলীশহরের আলো
নিভে যাচ্ছে দেখে
নিভৃতে কাঁদছে গৃহবন্দী প্রেমিক-প্রেমিকা ।
জলসিঁদুর
ভালোবাসায় সমৃদ্ধ হয় অধীনস্থ ভিখিরীর আসন।
যে নদী সারারাত স্রোত বয়ে ক্লান্ত হয়ে আছে—
তার চর ঘেঁষে উঁকি দেয়া সূর্য জানান দিয়ে যায়,
আগমন মানেই প্রেম। চেয়ে থাকা মানেই অপেক্ষা।
এই নদীর বুকেই একদিন হারিয়ে গিয়েছিল মাধবীর
সিঁদুরের কৌটা। যে আকাশ কখনও বৈধব্য বরণ করতে
চায়নি— তার ছাদ ভেঙেই একদিন এই বাংলায়
উঁকি দিয়েছিল একাত্তর।
সালটা এখন অনেকের মনে নেই যদিও! ঐ বছরই
জন্ম নিয়েছিল মাধবী সেনের একমাত্র সন্তান।
প্রসূতি মাধবী, হায়েনাদের হাতে সম্ভ্রম হারানোর পর
ঝাঁপ দিয়েছিল এই নদীতেই।
শত ভাঙাগড়ার পর নদীটি এখনও বেঁচে আছে। বেঁচে নেই
মাধবী। বেঁচে আছে তার সন্তান। বেঁচে আছে বাংলাদেশ।
জলসিঁদুরে আলপনা আঁকা যে শ্যামলরূপ প্রতিদিন আমাদের
জাগায়— মূলত তা নিজ সন্তানের প্রতি মাধবীর ভালোবাসা।
ভালোবাসায় সমৃদ্ধ হয় অধীনস্থ ভিখিরীর আসন।
সন্তানেরা ভিখিরী হয়েই সেই মৃত্তিকায় আসন পেতে বসে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৪