___________________________________
এর্নেস্তো সাবাতো (২৪ জুন ১৯১১-৩০ এপ্রিল ২০১১) আর্জেন্টাইন লেখক এবং চিত্রকর। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন লিজিওন অফ অনার, মিগুয়েল দে সেরভেন্তেস পুরস্কার।
‘এল তুনেল’ (১৯৪৮), ‘সবরে হেরোস ইয়া টুম্বাস’ (১৯৬১), ‘অ্যাবানদন এল এক্সতারমিনাদোর’ (১৯৭৪) তাঁর জগদ্বিখ্যাত তিন উপন্যাস।
________________________________
৪১তম কিস্তির লিংক
পশ্চিম আকাশের মেঘমালায় বিচ্ছুরিত হয়ে ফিরে আসছে তখন সূর্যাস্তের শেষ আলো। আমার মনে হলো এই জাদুকরি সময় আর কথনও ফিরে আসবে না। ‘আর কক্ষনও না, আর কক্ষনও না,’—ভাবতে থাকি, আর ভেতরে ভেতরে খাড়া পাহাড়ের প্রলুব্ধ করা এই ঝিমঝিমে অনুভূতি আর সঙ্গে মারিয়াকে নিয়ে কতো সহজেই সর্বনাশের অতল গহ্বরে নেমে যাওয়া যায় সেই চিন্তা করছি।
কিছু টুকরো বাক্য কানে আসে এ সময়ে: ‘আল্লা... একসঙ্গে আমাদের কতো কিছুর সঙ্গে যে অনন্তকালের এই জীবনযাপন... কতো ভয়ঙ্কর সব ব্যাপার... যদি এখানকার এই অনিন্দ্যসুন্দর জায়গাটা শুধু আমাদের হতো, কিন্তু, না, তাতো হওয়ার না, আমরা রক্ত-মাংশের মানুষ, অতি তুচ্ছ আর নোংরা...’।
সমুদ্র জুড়ে ধীরে ধীরে বিপুল আঁধারের এক জন্তুর রূপান্তর ঘটছে। শিগগিরই পুরো অন্ধকার সব গিলে নেবে আর কালো এক চম্বুকের আড়াল থেকে তখন শুধু শোনা যাবে ঢেউয়ের অবিরত শব্দ। এতো সহজ! আমরা অতি তুচ্ছ আর নোংরা বলে দিল মারিয়া, ঠিক আছে আমি আমার নিজের পাপের কথা খুব পরিষ্কারভাবেই জানি, তাহলে মারিয়াও কি আমার মতোই, এই ভাবনা পুরো গুড়িয়ে দিলো আমাকে-ও অনিস্বীকার্যভাবেই আমার মতো। কিন্তু কিভাবে? ভাবলাম। কতটা? কখন? তখুনি তীব্র বেয়াড়ারকম একটা ইচ্ছা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো মনের মধ্যে, ইচ্ছে হলো ওকে এক্ষুনি আঘাত করি, নখের আঁচড়ে একেবারে রক্তাক্ত করে দেই, খালি হাতে ওর টুটি চেপে ধরে দম বন্ধ করে মেরে ফেলে দেই সাগরে। মারিয়া কিছু কথার অংশটা আবারও কানে এলো: কোনো এক খালাত-ফুপাতো ভাইয়ের কথা বলছে ও, কোনো এক হুয়ান না অন্য কেউ; পাড়া গাঁয়ে কাটা শৈশবের স্মৃতিচারণ করছে। আমার মনে হলো ওই ভাইয়ের কথা বলতে গিয়ে ‘অস্থির আর নিষ্ঠুরতার কাহিনী সেসব’ এরকম একটা কথাটা কানে এলো আমার। আচমকা আমার উপলব্ধি হলো নিজের সর্ম্পকে অমূল্য এক স্বীকারোক্তি করছে মারিয়া আর আমি বোকার মতো তা কানে নিচ্ছি না।
‘কিসের অস্থির আর নিষ্ঠুরতার কথা বলছো?’ আমি আর্তচিৎকারের মতো বললাম।
আশ্চর্যজনকভাবে, মনে হলো ও আমার কথা শুনতে পেলো না: মারিয়াও যেন, এক ধরনের ঘোরের মধ্যে আছে মনে হলো; ঘোরের মধ্যে একাকী কথা বলে চলেছে।
তখুনি আমার মুখে ওর হাতের স্পর্শ টের পেলাম, অন্য সময়েও এরকম হাত বুলিয়ে দেয় ও। আমি কোনো কথা বললাম না। আমি যখন মায়ের সঙ্গে ছোট্ট এক বালক, সেরকমভাবে মারিয়ার কোলে মাথা রাখলাম, সময়ের আর কোনো হিসেব থাকলো না, শৈশব মৃত্যু সব লম্বা একটা সময়ের জন্য যেন একাকার হয়ে গেলো, একাকার হয়ে গেলাম আমরা দুজনেও।
হায় খোদা! সন্দেহের তীরে কেন এ সুন্দর সময় ধ্বংস হয়ে যাবে, যে বিষয়ের কখনও কোনো ব্যাখ্যা হয় না, সেই সব বিষয়ের কারণে! আর কতোকাল আমি এমন ভুল করে যাবো, কতো আর মারিয়ার অস্তিত্ব শুধু এই সুখের সময়টুকুর জন্য কামনা করে যাবো! এরকম তো কখনই সম্ভব হবে না। ওর হৃৎকম্পের প্রতিটি আওয়াজ আমার কানে আসছে, আর ওর হাত খেলা করছে আমার চুলে, আর অন্ধকারে বিষন্ন সব চিন্তা উঁকি দিয়ে যাচ্ছে মনে, যেন উদগিরণের জন্য স্যাঁতসেঁতে এক সেলারে বসে প্রহর গুনছি, যেকোনো সময় ক্রুদ্ধ গর্জনে ভলকে ভলকে চর্তুর্পাশে নিক্ষিপ্ত হতে শুরু করবে পঙ্কিল লাভাস্রোত।
(চলবে)
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৪
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (৪২) || অনুবাদ: আলীম আজিজ
অনুবাদ উপন্যাস/শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।