আমাদের ’৫২ সালে বাংলাভাষা লড়াইয়ের মতো আরেকটি মায়ের ভাষা দাবি আদায়ের জন্য সংগ্রাম হয়েছিল আমাদের পাশেই আসাম রাজ্যের শিলচরে। বাংলাদেশের মানুষের ভাষার জন্য জীবনদানের সংগ্রাম দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন আসামের মানুষ।
আসামের বাংলাভাষার মানুষরা ১৯৬১ সালের ১৯ মে জীবন দিয়েছিলেন। অর্থাৎ আমাদের সংগ্রামের ৯ বছর বাদে। এদিন শিলচরে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ১১ জন।
পাকিস্তান সরকার আমাদের মায়ের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা দাবি রুখতে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে গুলি রফিক, সালাম বরকতসহ অনেককে হত্যা করেছিল। তেমনি আসাম সরকারও ‘৬১ সালে শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলি চালিয়েছিল।
জনমতের চাপে পড়ে আসামের বি.পি. চালিহা সরকার এ ঘটনার তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয়। কিন্তু তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আজও আলোর মুখ দেখেনি।
‘দ্য শিলচর ল্যাঙ্গুয়েজ মুভমেন্ট অ্যান্ড নাইন্টিন ১৯৬১ এ পারসোনাল রেসপন্স’ বইয়ের লেখিকা সোহেলী মির্জা আসামের কাছার জেলার শিলচর ও অন্যান্যস্থান ভ্রমণ করে ওই ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী ও জীবনে রক্ষা পাওয়া সংগ্রামীদের সঙ্গে কথা বলে প্রামাণ্য বইটি লিখেছেন। সোহেলী মির্জার বইটি আসামে ভাষার সংগ্রামের ওপর লেখা একমাত্র বই।
বইয়ের লেখিকার মির্জা ফাহমিদা আজিম সোহেলী দুর্ভাগ্যজনক হলো— আজ আর আমাদের মাঝে বেঁচে নেই। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৮ বছরে চলতি সালের ৮ জুলাই মারা যান। তাঁর জন্ম ১৯৬৫ সালের ৫ জানুয়ারি বিক্রমপুরের রাড়িখালি গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিতুমীর কলেজ ও ইডেন কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট লাভের পর সাংবাদিকতা পেশায় যোগ দেন।
তাঁর কাজের জন্য তিনি ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন। তাঁর মৃত্যুর কয়েকঘণ্টা বাদে দিল্লি থেকে বইটি প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৪