ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

নারীরা ফেরে না, আর ফিরবেন না অরুণাভ

সাইফ বরকতুল্লাহ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৪
নারীরা ফেরে না, আর ফিরবেন না অরুণাভ অরুণাভ সরকার

এক.
নারীরা হয়তো ফেরে না সত্যি, কিন্তু তারও অধিক সত্যি তারা থেকে যায়। কবির হৃদয়ে থেকে যাওয়া সেই নারীরা হয়ে ওঠে শিল্পভাষ্য তথা কবিতা।

কবি হৃদয়ে থেকে যাওয়া নারীদের নিয়ে অসংখ্য স্মরণীয় লিরিক লিখেছেন অরুণাভ সরকার। আজ সেই কবি চির বিদায় নিলেন। চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

দুই.
প্রবীণ সাংবাদিক কবি ও জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রবীণ সদস্য অরুণাভ সরকার। ষাট দশকের বরেণ্য এই কবি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। বিদায়বেলায় তিনি স্ত্রী আজিজা সরকার, ছেলে শুগত সরকার ও মেয়ে মিথিলা সরকারসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

তিন.
কবি অরুণাভ সরকার ১৯৪১ সালের ২৯ মে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে দৈনিক সংবাদ দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু। তিনি গণবাংলা, নিউ নেশন, নিউজ টুডে, দি ইন্ডিপেন্ডেন্টসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য ছিলেন।

চার.
অরুণাভ সরকার ছিলেন মূলত রোমান্টিক কবি। তার রোমান্টিকতা উঠে এসেছে নাগরিক অভিজ্ঞতার আলোকে। অরুণাভ সরকারের প্রথমগ্রন্থ ‘কাব্য নগরে বাউল’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ সালে। অরুণাভ সরকারের কবি ভাষায় অলঙ্কারের আতিশয্য নেই: সরল কিন্তু গতিশীল, সহজবোধ্য কিন্তু আবেশসঞ্চারী। তিনি লিখেছেন-
একটি কথা /মুক্তো / তা/ দিয়েছিলাম / হারালে?
একটি মন / পুষ্প/ তাও/ পায়ের নিচে/ মাড়ালে।
                            [সূত্র: এলিজি ১/নারীরা ফেরেনা, পৃ. ৬৪]।

পাঁচ.
অরুণাভ সরকার তার কবিতায় তুলে এনেছেন ব্যক্তির রাগ-অনুরাগ-বিরহ। তিনি লিখেছেন-
 সাড়ে সাত কোটি প্রায় পাকযন্ত্রে
না হরতাল নয়
লে-অফ ঘটেছে
আর সেইসব যন্ত্রজীবী
মাকড়-শিশুর দল
সাবধান
আপনার বেদীর দিকে
ছুটে যাচ্ছে দ্রুত।
             [সূত্র: তারবার্তা, পৃ.-৩১]।


ছয়.
১৯৮০ সালে বের হয় তার দ্বিতীয় কাব্য, ‘কেউ কিছুই জানে না’। তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় দীর্ঘ বিরতির পর, ২০০৬ সালে। ‘নারীরা ফেরে না’। নারীরা ফেরে না, এ যেন নগরের ভেতর নারীদের বাজিয়ে দেখা, এ যেন প্রকৃতির মধ্যে প্রেমকে ডুবিয়ে চোখ লাল করা। ‘বাউলের নারীদর্শন’ শিরোনামে এক লেখায় হাবীবুলাহ সিরাজী লিখেছেন, অরুণাভ সরকার বাউল হতে চেয়ে কি পাগলের দেখা পেলেন? না, খণ্ড-খণ্ড কবিতাগুলো নানা ছন্দে, নানা ওজনে ভাসতে ভাসতে নাগরিক সুগন্ধি মাখলো চোয়ালে! ফোঁড়া উঠলো নাকের মাথায় এবং তা ছেদনের কী শুশ্রুষার জন্য প্রয়োজন পড়লো যোগ্য সেবিকার৷ তার দানা ও চিটের ছড়ানো-ছিটানো দেহ থেকে শাঁসটুকু বের করলে যদি স্বাদু হয়- তবে আর আপত্তি কিসের? ঈশ্বরের নিজস্ব বাগানে ঝরুক হলুদ বৃষ্টিবিন্দু৷ অরুণাভ সরকার ভেতর-বৃত্তে যে কেন্দ্রটি স্থাপন করেছেন তাতে চূর্ণ করলে বের হয় : নগরে বাউল, কেউ কিছুই জানে না, জরাকুসুমের দিকে, নারীরা ফেরে না ইত্যাদি ইত্যাদি৷ বড় করে ভাবার অবকাশ যেমন মাথায় আছে_ তেমনি ধুলো মাখানোর মতো স্বভাবও পায়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকে৷ দীর্ঘ ঝাঁকুনির পর সহসা তাই আম-জাম-কলা-কদবেল একাকার৷ তরপরও তো ঠোঁট ছোঁয়ালো ঘামের গন্ধ, আঁশ কুড়োতে-কুড়োতে শোল, ভেসে যাওয়া কান্দাহারের সঙ্গে পচে যাওয়া বসরার গোলাপ একবার চলে গেলে নারীরা ফেরে না৷ তুমি আর তুমি ভেসে যাচ্ছে, যেন কোনো হাঁসঃ৷
             [সূত্র: বাউলের নারী-দর্শন : হাবীবুলাহ সিরাজী]

সাত.
অরুণাভ সরকার সাংবাদিকতার পাশাপাশি কবিতা লেখায় মগ্ন ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে নগরের বাউল, কেউ কিছুই জানে না, নারীরা ফেরে না, শিশুতোষ, খোকনের অভিযান, গল্প থেকে গল্প ইত্যাদি। বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন এই কবি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।