ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (২৪) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (২৪) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন

১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিমাল ফার্ম’।

___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

২৩তম কিস্তির লিংক
___________________________________

‘দারুণ’— কাগজ থেকে চোখ না তুলেই অন্যমনষ্ক উচ্চারণ সাইমের।

‘অবশ্যই, কোনও সুযোগ দেওয়ারই সুযোগ নেই আমাদের’—দায়িত্বের অংশ হিসেবে সম্মতি উইনস্টনের।

‘আসলে আমিও তাই বলতে চাই, ঠিক যখন একটি যুদ্ধ চলছে’—বলল পারসন্স।

যেন সে কথার নিশ্চয়তা দিতে ঠিক তখনই ওদের মাথার ওপর টেলিস্ক্রিনে বেজে উঠল তুর্যনাদ। তবে কোনও সামরিক যুদ্ধ জয়ের কথা জানাতে নয়, স্রেফ প্রাচুর্য মন্ত্রণালয়ের একটি ঘোষণা তুলে ধরতে।

‘কমরেডস!’—একটা উত্তেজিত যৌবনদ্দীপ্ত কণ্ঠ বেজে উঠল। ‘অ্যাটেনশন, কমরেডস! তোমাদের জন্য আমাদের কাছে দারুণ খবর আছে। আমরা উৎপাদনের যুদ্ধে জয়ী হয়েছি। উৎপাদিত সকল ভোগ্যপণ্যের অবিক্রিত অংশের হিসাব বলছে মানুষের জীবনমান যা বেড়েছে, তা গেল বছরের তুলনায় ২০ শতাংশের কম হবে না। গোটা ওশেনিয়া জুড়ে আজ সকালে ফ্যাক্টরি শ্রমিক আর অফিস কর্মীরা মিছিল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে, তাদের হাতে ব্যানার, মুখে স্লোগান। তাতে বিগ ব্রাদারের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতারই প্রকাশ। তারা বলেছে, বিগ ব্রাদারের বুদ্ধিমত্তার নেতৃত্বই তাদের নতুন সুখী জীবন এনে দিয়েছে। এখানে কতগুলো পরিসংখ্যান তুলে ধরছি। খাদ্য সামগ্রী...

‘আমাদের নতুন সুখী জীবন’ কথাটি কয়েকবার করে বাজলো টেলিস্ক্রিনে। প্রাচুর্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় এই কথার ব্যবহার খুব শোনা যায়। সেই যে তুর্যধ্বনি পারসন্সনের মনোযোগ কাড়ল, এরপর গভীর নীরবতায়, গাম্ভীর্য নিয়ে পুরো ঘোষণাটি শুনল সে। পরিসংখ্যানগুলো তার ধরতে পারার কথা নয়; তবে এটা বুঝেছিল ওগুলো সন্তোষজনক কিছু হবে। এবার বড় সাইজের নোংরা একটি পাইপ বের করলো, যার আধাটা পোড়া তামাকে ভরা। যখন তামাকের রেশন সপ্তায় ১০০ গ্রাম, তখন গোটা পাইপ পুরে তামাক টানা কারও পক্ষে কদাচই সম্ভব। অতি সাবধানে আড়াআড়ি করে ধরে রেখে একটি ভিক্টরি সিগারেট ফুঁকছিল উইনস্টন। আগামীকালের আগে নতুন রেশন মিলছে না, আর তার কাছে মাত্র চারটি সিগারেট মজুদ আছে। বাইরের শোরগোল বাঁচিয়ে টেলিস্ক্রিনের কথাগুলোই শোনার চেষ্টা করছিল উইনস্টন।

বলা হচ্ছে—চকোলেটের রেশন বাড়িয়ে সপ্তাহে ২০ গ্রাম করায় কোথায় যেন বিগ ব্রাদারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মিছিল হয়েছে। মাত্র গতকালই সে চকোলেটের রেশন সপ্তাহে ২০ গ্রামে নামিয়ে আনার পূর্ব ঘোষণাটি ঘষে ঠিক করে রেখেছিল। এও কি সম্ভব মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মানুষ এই নতুন কথা মেনে নেবে! কিন্তু হ্যাঁ, তারা তো মেনেই নিয়েছে। পারসন্স খুব সহজেই মেনে নিয়েছে, নির্বোধ পশুর মতই মেনে নিয়েছে। অন্য টেবিলের চক্ষুহীন জন্তুটিও আরও অতিমাত্রার গোঁড়ামি আর গদগদ ভাব নিয়ে মেনে নিয়েছে। আর কেবল মেনেই নেয়নি, গেল সপ্তাহেও চকোলেটের রেশন ত্রিশ গ্রাম ছিল এমন কথা যারা ঘুণাক্ষরে মনে আনবে তাদের খুঁজে বের করে নিন্দাবাদ জানিয়ে, বাষ্পায়িত করে দেওয়ার উগ্র মনোভাবও পোষণ করছে। সাইম, সেও—তবে আরেকটু জটিল উপায়ে, দ্বৈতচিন্তার প্রয়োগ ঘটিয়ে.. সেও এই কথা মেনে নিয়েছে। তাহলে সে-ই কি একা এক ব্যক্তি যে সেই সত্যিকারের স্মৃতির ধারক?

আকর্ষনীয় সব পরিসংখ্যানে ভরে উঠছে টেলিস্ক্রিন। গেল বছরের সঙ্গে একটা তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলা হচ্ছে খাদ্য, বস্ত্র বেশি উৎপাদন হয়েছে। তৈরি হয়েছে বেশি বাসস্থান, আসবাবপত্র, বেশি রান্নার পাত্র, জ্বালানি, আরও বেশি জাহাজ, বেশি সংখ্যক হেলিকপ্টার, বেশি পুস্তক, আর বেশি বেশি শিশু—রোগবালাই, অপরাধ আর মস্তিষ্কবিকৃতি ছাড়া সবকিছুই বেড়েছে। বছর-বছর আর মিনিটে মিনিটে সবকিছুই তরতর করে বাড়ছে। একটু আগে সাইম যেমনটা করছিল ঠিক তেমনি হাতের চামচটি দিয়ে টেবিলের ওপর লম্বা লাইন হয়ে ছড়িয়ে পড়া ম্যারম্যারে রঙের থকথকে বস্তুগুলোর ওপর আঁকিবুকি করল উইনস্টন। বড় তিক্ত মনে এই বাহ্যিক জীবনবিন্যাস নিয়ে ভাবতে বসল সে।

সবসময়ই কি জীবনটা এমনই ছিল? ক্যান্টিনময় চোখ ঘুরিয়ে নিল, দেখল একটি অনুচ্চ ছাদের কক্ষে মানুষ গিজগিজ করছে। অসংখ্য শরীরের গন্ধে ঘৃণ্য পরিবেশ, ভাঙ্গাচোরা ধাতব চেয়ার-টেবিল এত ঠাঁসাঠাঁসি করে বসানো যে বসলেই কনুই লেগে যায়, বাঁকানো চামচ, বেঁকে যাওয়া ট্রে, মোটা সাদা মগ; যার উপরটা তেলতেলে, প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে ময়লার আস্তর, আর ফালতু জিন ও কফির মিলিত টক-টক গন্ধ, ধাতবরঙা স্ট্যু আর ময়লা কাপড়। এসবের মাঝে আপনার পাকস্থলী আর গায়ের ত্বক সদাই যেন প্রতিবাদী হয়ে বলতে থাকে— তোমার যা অধিকার তা থেকে তুমি প্রতারিত হচ্ছো।

২৫তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।