ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

পাণ্ডুলিপি থেকে

‘মন প্রকৌশল’ বইটি পড়ে আমিও অনুপ্রাণিত হয়েছি : মুহম্মদ জাফর ইকবাল

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৫
‘মন প্রকৌশল’ বইটি পড়ে আমিও অনুপ্রাণিত হয়েছি : মুহম্মদ জাফর ইকবাল

[এবারের বইমেলায় আদর্শ থেকে প্রকাশিত হচ্ছে রাগিব হাসানের ‘মন প্রকৌশল স্বপ্ন, অনুপ্রেরণা, আর জীবন গড়ার ফরমুলা’ নামক একটি বই। বইটির ভূমিকা লিখেছেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর পাঠকের জন্য ভূমিকাটি হুবহু তুলে দেয়া হল। ]

রাগিব হাসান আমাকে একটা পাণ্ডুলিপি পাঠিয়েছে, আমাকে অনুরোধ করেছে বইটা নিয়ে কিছু লিখে দিতে। লিখতে গিয়ে আমার মনে হল: আমি কি বইটি নিয়ে লিখব, নাকি রাগিব হাসানকে নিয়ে লিখব? মনে হয় প্রথমে রাগিব হাসানকে নিয়েই একটু লিখি।

আমাদের দেশে লেখাপড়া নিয়ে অনেক সমস্যা— সবাই বছরের শুরুতে বই পেয়ে যায় কিন্তু বইগুলো খুব ভালো না; আরো অনেক ভালো হতে পারত। কিন্তু যারা চোখে দেখতে পায় না তাদের জন্যে কিছুই নেই, তারা কোনো বই পায় না। তারা তো আর সাধারণ বই পড়তে পারে না, তাদের দরকার ব্রেইলে ছাপানো বই। সেই বইগুলো তাদের হাতে দেয়ার জন্যে অনেকে ব্যক্তিগত বা আলাদাভাবে চেষ্টা করেও সুবিধে করতে পারে না। কারণ বোর্ডের বইগুলোর কোনো ইলেকট্রনিক কপি নেই। ব্যাপারটা রাগিব হাসানের চোখে পড়ল এবং সে দশজনের মতো ব্যাপারটা নিয়ে হা-হুতাশ না করে সরাসরি কাজে লেগে গেল। সারা পৃথিবীর সব উৎসাহী বাঙালি তরুণদের দিয়ে বইগুলো নতুন করে টাইপ করানো শুরু করল এবং দেখতে দেখতে বইগুলোর ইলেকট্রনিক কপি তৈরি হয়ে গেল, অডিও কপি তৈরি হতে লাগল, ব্রেইল বই বের হতে লাগল। কী চমৎকার একটা ব্যাপার— এই জন্যে আমি আমার দেশের তরুণদের এত পছন্দ করি। তারা ধানাইপানাই হা-হুতাশ অজুহাত অভিযোগ না করে কাজ শুরু করে দেয়।

রাগিব হাসানের আরো অনেক কাজ আছে, সেগুলো নিয়ে কিছু না বলে এবার এই বইটা নিয়ে কথা বলি। আমি আমার জীবনে দেখেছি একজন মানুষকে দিয়ে সত্যিকারের কোনো কাজ করিয়ে নিতে হলে তাকে কিন্তু টাকা পয়সা বা সম্মানী দিতে হয় না। তাকে উৎসাহ দিতে হয় (এ জন্যে যখন কোনো বড় কাজ করতে হয় আমি ভলান্টিয়াররে খুঁজি) কিন্তু উৎসাহ দেয়ার জন্যে মানুষটাকে খুঁজে পেতে হয়। যার সাথে আমার দেখাই হয়নি তাকে আমি উৎসাহ দেব কেমন করে? তখন দরকার রাগিব হাসানের ‘মন প্রকৌশল’ ধরনের বই। পৃথিবীর সব দেশেই এ ধরনের বই আছে— আমাদের দেশে সেভাবে আমার চোখে পড়েনি। এর অভাব খানিকটা দূর হল।

বইটা পড়ে এক ধরনের অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। মন প্রকৌশল শব্দটা কটমটে মনে হতে পারে কিন্তু বইটা মোটেই কটমটে নয়, খুব গুছিয়ে লেখা হয়েছে। স্বপ্নের কথা বলা হয়েছে, নিজেকে বদলে দেবার কথা বলা হয়েছে, ঘুরে দাঁড়ানো মানুষদের কথা বলা হয়েছে। অসংখ্য উদাহরণ দেয়া হয়েছে, অসংখ্য গল্প বলা হয়েছে। আমি নিজে এই বয়সে অনেকগুলো গল্প বা ঘটনার কথা পড়ে নিজের ভেতর এক ধরনের উত্তেজনা অনুভব করছি, সাহস পেয়েছি কাজেই ধরে নিচ্ছি অন্যেরাও পাবে।

বইটির নামে যেহেতু প্রকৌশল বা ইঞ্জিনিয়ারিং শব্দটা আছে তাই রাগিব হাসান সত্যিকারভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং করার জন্যে ছোট ছোট ধাপগুলো পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে। আমাদের তরুণদের কিছু বাঁধাধরা সমস্যা আছে— সেই সমস্যাগুলোর কথা বলা আছে। হতাশ হয়ে যাওয়া সেই তরুণদের কেউ না কেউ নিশ্চয়ই এই বইটা পড়ে এক ধরনের শক্তি পাবে, এক ধরনের সাহস পাবে, নিজের ভেতর অনুপ্রেরণা খুঁজে পাবে।

রাগিব হাসানের সাথে আমি শুধু একটা কথা যোগ করে দিই—এই বইয়ের গল্পগুলো—যার উদাহরণগুলো হচ্ছে বড় বড় মানুষের উদাহরণ, বিখ্যাত মানুষের গল্প—পৃথিবীর সবাই কিন্তু বড় নয়, সবাই বিখ্যাত নয়, তাদেরও অনেক গল্প আছে; যে গল্পগুলো মিডিয়াতে আসেনি, পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়নি। সেই গল্পগুলোর কথা জানলে আমরা নিশ্চয়ই আরো হতবাক হয়ে যেতাম!

মুহম্মদ জাফর ইকবাল
২২ জানুয়ারি, ২০১৫
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।