ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আমার ফ্রেন্ডের বউ | ইমরুল হাসান

গল্প / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৫
আমার ফ্রেন্ডের বউ | ইমরুল হাসান

আমার ফ্রেন্ডের বউ ড্রাইভ করতে পারে। শে আমারে ড্রাইভ কইরা নিয়া গেল নিউমার্কেটে।

যাওয়ার সময় আমি তারে কইলাম, আমার গাড়ি কিন্তু ব্যাকে যায় না, ইঞ্জিন পুরান হইতেছে তো, মেইনটেইনসও নাই। এই কারণে শে বাইরে পার্ক করল। আমরা ড্রাইভাররে নেই নাই গাড়িতে তখন, নিউমার্কেট যাওয়ার সময়। পরে যখন পার্ক করা হইল রাস্তায়, সে আইসা হাজির। ফ্রেন্ডের বউ এর আগে গাড়ির দরোজাও লক করতে পারতেছিল না ঠিকমত। তখন আমি কইলাম, চাবি ড্রাইভাররে দিয়া দাও। রাস্তায় গাড়ি রাখা এমনেও রিস্কি। সে থাকব নে গাড়ির সাথে। এর আগেই অবশ্য শে গাড়ির দরোজা লক করতে পারতেছিল। আর ড্রাইভার, যারও নিজের কোনও নাম নাই, চাবিটা হাতে পাইয়াই সামনের দিকে হাঁইটা চইলা গেল, এমন একটা ভাব যেন পরে ফেরত আসব আর গাড়ির কাছেই থাকব, এই মোমেন্ট খালি আরেকটা কাজ পইড়া গেছে বা আমার অর্ডার খুব একটা পাত্তা না দিলেও চলে এইরকম একটা ব্যাপারও থাকতে পারে। আমি ওরে ঝাড়ি দিব কি দিব না এইটা ডিসাইড করার আগেই সে চইলা গেল আর ফ্রেন্ডের বউ আগাইয়া আইসা আমার হাতে ধরল। আমি ড্রাইভারের কথা ভুইলা গেলাম।

নিউমার্কেটে আমাদের ভালো লাগতেছিল না। আমরা একজন আরেকজনরে জড়াইয়া ধরতে পারতেছিলাম না। তখন আমরা গল্প করতেছিলাম, আমার ফ্রেন্ডের লগে রিলেশনশিপটা ওর কেমনে হইল। ওরা একই সার্কেলে যাওয়া-আসা করত। আমার ফ্রেন্ড একটু সিনিয়র ছিল। সে যখন ওর চোখে তাকাইয়া কইছিল, আই লাভ ইউ; তখন শেও তারে কইছিল, আই লাভ ইউ। বেশ ইনসটেন্টলিই কইছিল শে। মোমেন্টের একটা জাদু আছে না! আর তখনই যার বাসায় ওরা ছিল, তিনি আরও একটু বেশি সিনিয়র, আইসা কইছিলেন, আমি জানতাম তোমারা যে একজন আরেকজনরে আই লাভ ইউ। তখন ওরাও শিওর হইছিল; না, ঠিক আছে তাইলে। শে ভাবে নাই যে, এই কনফার্মেশন আসলে ছিল ওই সিনিয়র-এর তার বউরে ভালো না বাসতে পারার বেদনা, যেইটা ওদের ওপর ইম্পোজ হইছিল। ওরা এখনও হ্যাপি। হ্যাপিনেস ইজ হ্যাভিং লাঞ্চ উইথ হুবি! হ্যাপিনেস ইজ হ্যাভিং ডিনার উইথ ওয়াইফি! এইরকম ইমেজের ভালোবাসা এখনও আছে ওদের। ভালোবাসা ত কয়েকটা ইমেজই, তাই না? এইটা অবশ্য আর আমরা বলি না। আমার মনেহয়, না বললে জিনিসগুলা নিয়া আমরা আরও ভাবতে পারি, তারপর ভাবতে ভাবতে ভুইলা যাইতে পারি। বইলা ফেললে তো থাইকা গেল, ভুইলা যাওয়া আসলে আরেকটা মনে করা-ই। এইরকম হাবিজাবি কথা বইলা আর ভাইবা আমরা হাঁটতে থাকি।
 
হাঁটতে হাঁটতেই মনেহয় একটা বাসায় চইলা আসলাম। ওইখানে সোশ্যাল এনভায়রমেন্ট। লগে বারান্দাও আছে, আরেকটা ঘরের সমান। অনেক মানুষ বইলা আলাদা আলাদা কইরা এর ওর দিকে তাকানো যায়; মনে মনে ভাবাও যায় অনেককিছু। ভাবনা করাও ত একটা অ্যাক্ট-ই। এইরকম ভাইবা শান্ত থাকা যায়। কিছু না কইরা, তাকাইয়া তাকাইয়া অনেককিছু কইরা ফেলা যায়। আর এইটা অন্যরা, যারে নিয়া ভাবা হইতেছে যখন বুঝতেও পারে, মজা না তখন। তখন করাটা পসিবল হয়, ভাবনাটা। আমাদের আগে আমাদের ভাবনাটা আগাইয়া যায়, তারপর আমরা ওইখানে গিয়া রিচ করি। হাঁপাইতে হাঁপাইতে বলি, আসছি জান!
 
আমাদের এই আসা, ওরা মনেহয় বুঝতে পারে; যে আমি আর আমার ফ্রেন্ডের বউ কেন একলগে ঘুরি। এমনে বলি যে, ওর (ফ্রেন্ডের) তো অফিস আছে, এইজন্য বাইর হইতে পারে না! একটু পরে আসবে। পরে আসলে ফ্রেন্ড আর আসে না, ফ্রেন্ডের বউ-ই চইলা যায়। এইটা সবাই জানে বইলা আমরা ভাবি, আমরা জানি বইলাই। একটু পরে কথা কইতে কইতে, আমরা খেয়ালই করি নাই, এইরকম কইরা আমরা ঘরের পাশের বারান্দাতে চইলা যাই। আমি ওরে বলি যে, দেখো আমি আমার ফ্রেন্ডের লগে বেঈমানি করতে পারব না, উই শ্যুড স্টপ দিস! ফ্রেন্ডের বউ চুপ কইরা থাকে। না-টা আসলে শে কইতে চাইছিল। এখন আমি আগে বইলা দেয়াটা ভুল হইল আসলে। হিউম্যান রিলেশনশিপ নিয়া ওর আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভালো, এইকারণে খুব একটা গালিগালাজ করে না। ওই শুয়োরের বাচ্চা পর্যন্তই। তারপর বলে, আমি চইলা যাওয়ার পরে তুমি ওই ভাইয়ের বউরে লাগাইবা, না! এইটা করার লাইগা তুমি আগে থিকা রাস্তা ক্লিয়ার করতেছো! ও বলার পরে মনে হইল, আমি এইটা আসলেই ভাবি নাই। মানে, হইতেই পারে। উনি জানি কেমনে তাকায় আমার দিকে। আমি রিড করতে পারি না, মানে মনেহয় যে, হইতেই পারে, খারাপ কি! কিন্তু এর লাইগা ছাইড়া দিতেছি? তাই? মানে আমাদের রিলেশনশিপ তো ওইরকমকিছু হয় নাই। এখনও তো অনেককিছু বাকি। নাকি ও আমারে আগেই ডাম্প করতে পারে দেইখা আমি কনশাস হইতেছি। বলতেছি, চইলা যাও। ও তো এমনেই চইলা যাবে। সেইটা শেও জানে; নাকি আমারে টাইমটা দিতে চাইছিল, শে-ই। আমি জাস্ট তার ট্রাপেই পা দিলাম। আর আটকাইয়া থাকলাম একটা বারান্দায়, বিকালবেলায়!

বিকালবেলাতে তখনও রোদ আছে। আর কেউ নাই। ঘরে দুইজন মহিলা। একজনরে পরে দেখছি আসলে। আরেকজন যিনি ড্রেসিংটেবিলের সামনে, উনারে দেখছি আগে। বা উনিই আমারে দেখলেন যে আমি একলা খাড়াইয়া আছি। উনি আইসা আমারে জড়াইয়া ধরলেন। তখন আমি ভাবতেছিলাম আরে, বিছানায় যিনি শুইয়া আছেন, লেপমুড়ি দিয়া উনি আমারে দেখতেছেন না তো আবার! মানে, উনিও তো আমারে ভালোবাসতে পারেন; এখন উনি যদি আমারে দেইখা ফেলেন, তাইলে কি উনি আমার সাথে আর আই লাভ ইউ করবেন! বা এমনও হইতে পারে যে, উনি একটু বেশি কইরাই চাইতে থাকবেন। আমরা দুইজনে তখন বারান্দায় চইলা আসছি; ড্রেসিং-টেবিলের সামনে যিনি ছিলেন, আমরা দুইজনে জড়াজড়ি কইরা। আর বিছানায় উইঠা বইসা উঁকি দিয়া আরেকজন যে দেখতেছে, আমি আসলে তারেই জড়াইয়া ধরতেছি। শে ওইটা বুঝতে পারতেছে, আমি জানি। মানে আমি জানি বইলাই উনি জানতে পারতেছেন। আর যে আমারে জড়াইয়া ধরছে শে আসলে আমারে জড়াইয়া ধরতে চায় নাই। শে চাইতেছিল আয়নায় ভিতরে দেখতে যে তারে কেমন লাগে যখন কেউ তারে জড়াইয়া ধরে আর এই কারণে শে জড়াইয়া ধরল আমারে। আমি ধরলাম তারে। কিন্তু বারান্দায় চইলা গেলাম। কেমন একটা সন্ধ্যা! গ্লুমি ধরনের আলো। দিন চইলা গেল। যাবে বইলাই জানতাম। হঠাৎ-ই যখন চইলা গেল, তখন মনে হইল; সন্ধ্যা নামল।

সন্ধ্যার একটা ক্যাফেতে বইসা ছিলাম আমরা। আমি আর আমার ফ্রেন্ডের বউ। আমাদের আই লাভ ইউ নাই আর। ফ্রেন্ডের লাইগা ওয়েট করতেছি। তখন দেখি চশমা-পরা একজন লোক। আমার পুরান ফ্রেন্ড; এখন আর ফ্রেন্ড নাই সে। সে হাসে আমারে দেইখা। কয়, আরে তুমি এইখানে! তুমি এইখানেও আসো নাকি! হাসে। সে যা ভাবে, সেইটা যেহেতু সে বলে না আমিও বলতে পারি না। ওরে মনে মনে শুয়োরের বাচ্চা বইলা গাইল দেই আমি। সে মনে হয় বুঝতে পারে। এর লাইগা আরও হাসে। মজা নিতে চায়। আমি আমার ফ্রেন্ডের বউরে বলতে চাই; চলো, আমরা অন্য জায়গায় যাই। শে আমার কথা শোনে না আর। আমাদের শোনাশুনিগুলা শেষ হইয়া গেছে। শে খালি বইসাই আছে। তার হ্যাজব্যান্ডের লাইগা ওয়েট করে। আমার যে ফ্রেন্ড সে কি আসবে না, আজকেও!



বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।